Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

রক্তাল্পতা কমাতে দাওয়াই পায়ুদ্বারে বোতল ভর্তি ছাগলের রক্ত!

সম্প্রতি বিষয়টি জেনে আঁতকে উঠেছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের আয়ুষ বিভাগের কর্তারা। দফতরের অনুমোদন ছাড়া এই ভাবে চিকিৎসা কী করে চলতে পারে এবং এটা কত দূর স্বীকৃত বা বৈজ্ঞানিক, তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

জেবি রায় আয়ুর্বেদ মেডিক্যাল কলেজ।

জেবি রায় আয়ুর্বেদ মেডিক্যাল কলেজ।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৮ ০২:৫০
Share: Save:

কসাইখানা থেকে কাটা ছাগলের রক্ত বোতলে ভরে এনে পায়ুদ্বারে ড্রিপের মাধ্যমে তা দেওয়া হচ্ছে রক্তাল্পতা ও থ্যালাসেমিয়া রোগীদের! এই কাণ্ড চলছে কলকাতার সরকারি আয়ুর্বেদ হাসপাতাল জেবি রায় আয়ুর্বেদ মেডিক্যাল কলেজে। সেখানকার চিকিৎসকদের দাবি, এটা নাকি পাঁচ হাজার বছরের পুরনো শাস্ত্রস্বীকৃত চিকিৎসা পদ্ধতি! এর নাম ‘রক্তবস্তি’।

সম্প্রতি বিষয়টি জেনে আঁতকে উঠেছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের আয়ুষ বিভাগের কর্তারা। দফতরের অনুমোদন ছাড়া এই ভাবে চিকিৎসা কী করে চলতে পারে এবং এটা কত দূর স্বীকৃত বা বৈজ্ঞানিক, তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্য ভবনের কেউ খোঁজ রাখেন না কেন, কোনও নজরদারি নেই কেন, সেই প্রশ্নেও জেরবার হচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্তারা।

রাজ্যের ডেপুটি ডিরেক্টর (আয়ুষ) সুরেন্দ্র গুপ্তের কথায়, ‘‘কেউ এত দিন জানাননি যে, এমন হচ্ছে। সবিস্তার খোঁজখবর চলছে।’’ এতে রোগীর শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া বা সংক্রমণ হতে পারে কি? ‘‘আমাকে জানিয়ে এ-সব হয় না। যে-সব চিকিৎসক এটা করেন, তাঁরা নিজের দায়িত্বে করছেন। তাঁদের জিজ্ঞাসা করুন,’’ জবাব জেবি রায় হাসপাতালের অধ্যক্ষ উৎপলেন্দু জানার।

ওই হাসপাতালের পঞ্চকর্ম বিভাগের চিকিৎসকদের একাংশ জানান, তাঁরা ছ’সাত বছর ধরে শ্যামবাজারের রাজা দীনেন্দ্র স্ট্রিটে জেবি রায় হাসপাতাল এবং তার ক্যাম্পাস পাতিপুকুর আয়ুর্বেদ হাসপাতালে পায়ুদ্বার দিয়ে ড্রিপের মাধ্যমে ছাগলের রক্ত দিয়ে অন্তত জনা পনেরো রোগীর চিকিৎসা করেছেন। এদের অধিকাংশই শিশু। কিন্তু রক্ত নিয়ে রোগীদের শারীরিক অবস্থা কী হচ্ছে, তা কোথাও নথিভুক্ত করা হয়নি। তাই স্বাস্থ্য ভবনের একাংশের বক্তব্য, রোগীদের কার্যত গিনিপিগে পরিণত করা হচ্ছে।

এর জন্য মেডিক্যাল কাউন্সিল বা ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) বা আয়ুর্বেদ কাউন্সিলের অনুমতি নেওয়া হয়নি কেন? হাসপাতালের পঞ্চকর্ম বিভাগের চিকিৎসক পুলক করের দাবি, ‘‘আয়ুর্বেদ হাসপাতালে রক্তবস্তি করতে আলাদা অনুমোদন লাগে না। চরক ও সুশ্রুত সংহিতায় এটি স্বীকৃত। চরকের ছ’নম্বর অধ্যায়ের ৮২-৮৪ নম্বর শ্লোক এবং তিন নম্বর অধ্যায়ের ১৯ নম্বর শ্লোকে এই চিকিৎসা পদ্ধতির কথা বলা রয়েছে। সেটাই আমরা করি।’’ তিনি জানান, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উল্টো দিকের একটি কসাইখানায় ছাগল কাটার পরে টাটকা রক্ত ২৫০ মিলিলিটারের পাত্রে সংগ্রহ করা হয়। কিছু ওষধির সঙ্গে মিশিয়ে তৎক্ষণাৎ তা প্রয়োগ করা হয় রোগীর পায়ুদ্বারে। প্রতিদিন ৩-৪ ঘণ্টা করে টানা অন্তত ১০ দিন রক্ত যায় ড্রিপের মাধ্যমে। ৫-৬ মাস এই চিকিৎসা করালে রোগীর শরীরে রক্ত বাড়ে বলে পুলকবাবুর দাবি। গুজরাতে অখণ্ডানন্দ আয়ুর্বেদ কলেজে পাইলট প্রকল্প হিসেবে রক্তবস্তি চালু আছে।

কিন্তু এতে কি বিপজ্জনক সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে না?

পুলকবাবু বলেন, ‘‘শাস্ত্রে আছে, এতে সংক্রমণ হয় না।’’

রোগী এবং পরিজনদের বক্তব্য মিশ্র। হুগলি-মশাটের থ্যালাসেমিয়া-আক্রান্ত এক ১০ বছরের বালককে এ ভাবে রক্ত দেওয়া হয়েছে। তাঁর বাবার কথায়, ‘‘পুরোটাই ধাপ্পাবাজি।’’ সেন্টু শীল নামে নদিয়ার এক বাসিন্দার দাবি, তাঁর শারীরিক উন্নতি হয়েছে।

‘‘আইসিএমআর আমাদের সব কর্মসূচিতে কড়াকড়ি করে। এ ক্ষেত্রে সেটা কোথায়,’’ প্রশ্ন থ্যালাসেমিয়া বিশেষজ্ঞ প্রশান্ত চৌধুরীর। হেমাটোলজিস্ট প্রান্তর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘থ্যালাসেমিয়া রোগীদের নিয়েই কাজ করি। কোনও পাঠ্যবইয়ে এমন পদ্ধতির কথা পড়িনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE