ফাইল চিত্র
বাড়িতে মা, ভাই আর আশি বছরের দিদা। এত দিন দিদা আর মায়ের সুরক্ষার কথা ভেবেই বেরোতে পারিনি। লকডাউনের পরে আজ, সোমবারই প্রথম অফিস যাব। অফিস আপাতত সপ্তাহে তিন দিন। যেতে এক দিন হবে জানতামই। কিন্তু হু হু করে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার মধ্যেই যে অফিস যাব সেটা ভাবিনি! আমি তো নিরাপত্তা বিধি মেনে বেরোব। কিন্তু বাকিরা? আমার সহকর্মী, পথচারীরা সবটা মানবেন তো? কারও বেপরোয়া ভাবের জন্য, যিনি বিধি মানছেন তাঁর পরিবার বিপদে পড়বে না তো!
বাবার মৃত্যুর পরে আমার উপরেই সংসারের ভার। ভাই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। চাকরি সূত্রে সল্টলেকের সরকারি আবাসনে থাকি। গত কয়েক দিন ধরেই আশপাশের পাড়া থেকে পরপর করোনা আক্রান্তের খবর আসছে। তবুও অনেকের হুঁশ নেই। জড়ো হয়ে দেদার আড্ডা, তাস খেলা— সব চলছে। মাথায় ঘুরছে, আমার পাশে বসে যে সহকর্মী কাজ করবেন, তিনি কোথা থেকে আসবেন? বাসে? নাকি নিজে কোনও ব্যবস্থা করেছেন! অফিসের ফাইলগুলো নিয়েও চিন্তা হচ্ছে। সরকারি অফিসে এখনও বেশির ভাগ কাজ ফাইল নিয়ে হাতেকলমে করতে হয়। সে ফাইল কত যে হাত ঘোরে তার ঠিক নেই। অনেকে হয়তো বাড়াবাড়ি বলবেন, কিন্তু চুল নিয়েও এখন ভয়ে আছি। অথচ রোজ সন্ধ্যার পরে বাড়ি ফিরে চুল ধোয়া কি সম্ভব!
মনকে বোঝাচ্ছি, চাকরির জন্য তো বেরোতেই হবে! আমরা যতটা পরিষেবা পাই, অনেকে তা-ও পান না। সকলে মিলে নিরাপদে থাকার চেষ্টা করতেই হবে। আচ্ছা, এই লকডাউন পালন করতে কি আরও একটু কঠোর পরিকল্পনা নেওয়া যেত না! যে মুহূর্তে লকডাউন ওঠার মুখে, সব কিছু খুলে দেওয়া হচ্ছে, তখনই আক্রান্তের নিরিখে লাফিয়ে তালিকার উপরের দিকে উঠছে আমার দেশ। পরিযায়ী শ্রমিকদের আরও একটু পরিকল্পনা করে ফেরালে বা আরও ভেবেচিন্তে লকডাউন তুললে কি খুব অসুবিধা হত?
আরও পড়ুন: করোনায় মৃতের দেহ ছুড়ে দিচ্ছেন দাহকর্মীরা, ভিডিয়ো ঘিরে তোলপাড়
কত মানুষ লকডাউনে খেতে পাচ্ছেন না জানি। আমপান আরও দুর্বিষহ অবস্থা করেছে। সকলে মিলে একে অন্যের পাশে থাকার চেষ্টা করে কি পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যেত না? আমরা তো যে যেমন পেরেছি একে অপরের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকল্পনা আরও একটু স্পষ্ট হলে তো ভোগান্তিগুলো এড়ানো যেত।
এ সব ভাবনার মধ্যেই মা সমানে বলে চলেছেন, “তিন দিনের বদলে এক বা দু’দিন অফিস যাওয়া যায় না?” আমার অফিস করুণাময়ী। বাড়ি থেকে খুব দূরে নয়। মাকে বোঝালাম, যাঁরা দূর থেকে আসেন তাঁদের সব থেকে বিপদ। ট্রেন বন্ধ, তাই বাসই তাঁদের ভরসা। তাঁরা বাসে কতটা পথ ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে আসতে পারবেন সেটাই চিন্তার। রাস্তায় অনেকে এখনও মাস্ক পরছেন না। আমার তো মনে হয় যাঁরা পরছেন, তাঁদের অনেকেই বকুনি খাওয়া বা পুলিশে ধরা পড়ার ভয়ে পরছেন। যেই মুহূর্তে ভয় নেই, মাস্কও উধাও। এই কারণেই গণপরিবহণ নিয়ে সচেতন মানুষ চিন্তিত। অনেকেই অফিস যাবেন বলে তড়িঘড়ি সাইকেল কিনছেন। আমিও এক রিকশাওয়ালার সঙ্গে রবিবারই কথা বলেছি। আপাতত অফিসে পৌঁছে দেবেন তিনিই। আমার না হয় বাড়ি থেকে অফিস বেশি দূরে নয়। কিন্তু আজ সকাল থেকে যাঁরা পথে নামবেন তাঁদের নিরাপত্তা কোথায়? এখনও সকলে সচেতন না হলে বিপদ কমবে না।
এ বার অন্তত বেপরোয়া ভাব ছেড়ে সকলে সহযাত্রী, সহকর্মীর নিরাপত্তার কথা ভাবুন। তারও আগে ভাবুন নিজের আর পরিবারের সুরক্ষার কথা।
আরও পড়ুন: দিল্লির হাসপাতাল স্থানীয়দের জন্য সংরক্ষিত করল কেজরীবাল সরকার
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy