Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

‘আমি তোর জীবন থেকে চলে গেলাম’, ফেসবুকে লিখে আত্মঘাতী কিশোর

রবিবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে দমদম থানা এলাকার নয়াপট্টির দুর্গাবতী কলোনিতে। মৃত কিশোরের নাম বিশ্বজিৎ দাস (১৭)।

মৃত কিশোরের নাম বিশ্বজিৎ দাস।

মৃত কিশোরের নাম বিশ্বজিৎ দাস।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৮ ০২:৫২
Share: Save:

ফেসবুকে গলায় ফাঁসের ছবি। সঙ্গে বিষণ্ণ কিছু ‘স্টেটাস আপডেট’। এর কয়েক ঘণ্টা পরেই উদ্ধার হল সেই কিশোরের ঝুলন্ত দেহ।

রবিবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে দমদম থানা এলাকার নয়াপট্টির দুর্গাবতী কলোনিতে। মৃত কিশোরের নাম বিশ্বজিৎ দাস (১৭)। পুলিশ জানায়, বাড়িতে সিলিংয়ের বাঁশে ওড়নার ফাঁস থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় তাকে দেখা যায়। ঘরের দরজা ভেঙে আর জি কর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা বিশ্বজিৎকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এর পরেই বিশ্বজিতের মা সুমিত্রাকে ফেসবুকের ওই লেখার কথা জানান কিশোরের এক বন্ধুর মা। তাঁরাই জানান, ওই কিশোরের লেখায় প্রণয়ঘটিত কারণে অবসাদের ইঙ্গিত মিলেছে। এই ঘটনায় থানায় কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, এটি আত্মহত্যা।

পরিবার সূত্রে খবর, শনিবার রাত ২টো ৩৯ মিনিট নাগাদ বিশ্বজিৎ একটি গ্রাফিক কার্ড ‘পোস্ট’ করে। সেখানে লেখা ছিল, ‘বড় লোকের ভালবাসা প্রকাশ পায় দামি দামি উপহারে! আর গরিবের ভালবাসা প্রকাশ পায় দু’ফোঁটা চোখের জলে’! ওই ‘পোস্টে’ই নিজের মনের ভাব বোঝাতে কিশোর লিখেছে, ‘সবাই ভাল থেকো, সবাই সুখে থেকো, কখনও মন খারাপ কোরো না, আর কখনও কারও মন নিয়ে খেলা কোরো না’! এর ৩১ মিনিট পরেই সিলিং ফ্যানে দড়ির ফাঁস লাগানো ছবিও ‘পোস্ট’ করা হয়েছে বিশ্বজিতের প্রোফাইলে। চার মিনিটের মাথায় আবার একটি ‘পোস্ট’। লেখা, ‘সব মানুষই ভালবাসে। কিন্তু প্রথম ভালবাসার মানুষকে খুব কম মানুষ পায়। কারণ, যে আপনাকে প্রথম ভালবাসতে শেখায়, আপনাকে প্রথম কষ্টও সে-ই দেবে।’ পরে এই লেখাই ‘কভার ফোটো’ করে বিশ্বজিৎ। প্রথম লেখায় এক জন মন্তব্যও করেছেন, ‘ঠিকই বলেছো ভাই’। ‘কভার ফোটো’ করা লেখাটি এক জন ‘শেয়ার’ করেছেন। তবে পরিবারের দাবি, বিশ্বজিতের মৃত্যুর আগে সে সব বিষয়ে কিছুই টের পাননি অভিভাবকেরা।

এ দিন মৃতের মা সুমিত্রা জানান, স্থানীয় এক কিশোরীর সঙ্গে ছেলের এক বছর ধরে ঘনিষ্ঠতা ছিল। সম্প্রতি অন্য একটি ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয় মেয়েটির। তা নিয়ে ক’দিন ধরেই সেই কিশোরীর সঙ্গে অশান্তি চলছিল বিশ্বজিতের। পরিজনেদের অনুমান, সে জন্যই শুক্রবার বিশ্বজিৎ লেখে, ‘আমি কাল শুনলাম আমার চোখের জলটা নাকি নাটক??? তোর সেটা মনে হতেই পারে। তাই আমি তোর জীবন থেকে চলে গেলাম...।’

বিশ্বজিতের বাবা খোকন দাস পেশায় রিকশাচালক। বিশ্বজিৎ নিজে মাধ্যমিক পাশ করতে পারেনি। একটি প্রেশার কুকারের কারখানায় কাজে যোগ দিয়েছিল। বিশ্বজিতের মায়ের অনুমান, সে সব কারণেই বিশ্বজিতের সম্পর্কটি নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু তা মেনে নিতে পারেনি ওই কিশোর।

মর্মান্তিক: সোশ্যাল মিডিয়ায় এমনই সব ‘পোস্ট’করেছিল বিশ্বজিৎ। নিজস্ব চিত্র

মৃত কিশোরের পরিজনেরা জানিয়েছেন, রবিবার ঘটনার সময়ে বাড়িতে কেউ ছিলেন না। মায়ের সঙ্গে বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ ফোনে কথা হয়। এর পরে দুপুরে বারবার ফোন করে সাড়া না পেয়ে বিশ্বজিতের কাকিমাকে ফোন করেন সুমিত্রা। এর পরেই কিশোরের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। সোমবার সুমিত্রা বলেন, ‘‘এই সামান্য কারণে কেউ এমন করতে পারে? বাবা-মায়ের কথা ভাববে না!’’

কিন্তু গত কয়েক দিন ধরে যখন ফেসবুকে একের পর এক লেখায় কিশোরের মানসিক অবসাদের চিহ্ন মিলেছে, তখন পরিচিতেরা কেন তার পরিবারকে সতর্ক করলেন না, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। সে প্রশ্নের উত্তর মেলেনি পরিজনেদের কারও কাছেই। ঘটনাটি শুনে মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেব বলেন, ‘‘আত্মহত্যার ইঙ্গিত দেওয়া বিচিত্র নয়। সোশ্যাল মিডিয়া এখন মনের ভাব প্রকাশের অন্যতম জায়গা হয়ে উঠেছে। সেগুলি ধরতে বা বুঝতে পারলে আত্মহত্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব। কিন্তু তা অনেকেই ধরতে পারেন না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Biswajit Das facebook Post Suicide
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE