মর্মান্তিক: তখনও জলে ভাসছে মিতা চট্টোপাধ্যায়ের (ইনসেটে) দেহ। বৃহস্পতিবার, লিলুয়ায়। নিজস্ব চিত্র
গ্যারাজের লোহার গেটে আগে থেকেই লেগে ছিল খোলা বিদ্যুতের তার। জমা জল ঠেলে হাঁটার সময়ে সেই লোহার গেট ধরতেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হল এক প্রৌঢ়ার।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে লিলুয়ার কুমোরপাড়ায়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম মিতা চট্টোপাধ্যায় (৫৫)। অবিবাহিতা ওই প্রৌঢ়ার বাড়ি কুমোরপাড়াতেই। এ দিন সকালে তিনি কাছেই অন্য একটি বাড়িতে যাচ্ছিলেন। তখনই ঘটে ওই দুর্ঘটনা।
এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঘটনার পরে পুলিশ এবং সিইএসসি-কে খবর দেওয়া হলেও কারা আগে আসবে, এই টানাপড়েনের জেরে প্রায় আড়াই ঘণ্টা মৃতদেহটি জলেই পড়ে থাকে। এলাকার বাসিন্দারা বাঁশ দিয়ে দেহটি সরানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার ভয়ে কেউ গ্যারাজের কাছাকাছি যেতে পারেননি।
বুধবার রাত থেকে টানা বৃষ্টিতে হাওড়া পুরসভার বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি জল জমে গিয়েছিল লিলুয়ার কুমোরপাড়াতেও। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই এলাকায় রাস্তা-সহ আশপাশের বাড়ির দরজা এবং নিকাশি নালা প্রায় এক ফুট জলের তলায় ছিল।
তপন দাস নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, বছর তিনেক আগে এলাকায় কেব্ল ফল্ট হওয়ায় সিইএসসি সমস্ত তার অস্থায়ী ভাবে রাস্তার উপর দিয়ে জুড়ে দিয়েছিল। টেপ দিয়ে আটকানো হয়েছিল তারের জোড়াগুলি। সেই টেপ এই তিন বছরে খুলে গিয়েছে। তপনবাবু বলেন, ‘‘ওই তারের খোলা অংশ লোহার গেটের সঙ্গে লেগে ছিল। ফলে গেটটিও বিদ্যুৎবাহী হয়ে ছিল। গেটে হাত দিতেই মিতাদি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন।’’
সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত একই ভাবে ওই মহিলার দেহ জলে পড়ে থাকায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। যে বাড়িটির গ্যারাজের গেটে এই ঘটনা ঘটেছে, সেই বাড়ির জানলায় ইট ছোড়েন কিছু উত্তেজিত বাসিন্দা। ভেঙে যায় কয়েকটি কাচ। সিইএসসি-র কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছলে বাসিন্দারা তাঁদের তাড়া করেন। পরে পুলিশের সঙ্গে সিইএসসি-র কর্মীরা ফের এলাকায় ঢুকলে বাসিন্দারা তাঁদের ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখান। পরে সিইএসসি বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শুরু করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। দেহটি উদ্ধার করে ময়না-তদন্তের জন্য পাঠায় পুলিশ।
এ দিনের ঘটনা প্রসঙ্গে সিইএসসি-র ভাইস প্রেসিডেন্ট (ডিস্ট্রিবিউশন) অভিজিৎ ঘোষ বলেন, ‘‘তিন বছর ধরে ওই জায়গায় বিদ্যুতের তার টেপ দিয়ে জোড়া ছিল বলে যে অভিযোগ উঠছে, তা তদন্ত না করে এখনই বলা যাবে না। এ দিন ওই জায়গায় প্রচুর জল জমে ছিল, তাই তদন্ত শুরু করা যায়নি। তবে আমরা খবর পাওয়ার পরেই ওই জায়গায় গিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে প্রাথমিক মেরামতির কাজ করেছি।’’
হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘খবর পেয়েই পৌঁছেছিলাম। কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করা পর্যন্ত দেহ উদ্ধার করা যায়নি। সিইএসসি-র কর্মীরা এসে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পরে দেহ উদ্ধার করে ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy