স্যালাইন দিয়ে লালুকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টাতেও লাভ হয়নি। নিজস্ব চিত্র
ঘাড়ে লোম বলতে কিছুই অবশিষ্ট নেই। পুড়ে গিয়েছে। জ্বালিয়ে দেওয়া সেই তরলের ছাপ ঘাড় বেয়ে পিঠের যে যে অংশে পড়েছে, সেখানকার লোমও উঠে গিয়েছে। দু’চোখ বুজে দাঁতে দাঁত চেপে সেই অবস্থাতেই মাটিতে পড়ে চিৎকার করছে সে। যন্ত্রণার মধ্যেই মাঝেমাঝে কেঁপে উঠছে গোটা শরীর। নিয়ন্ত্রণ নেই মল-মূত্র ত্যাগেও!
গত শুক্রবার থেকে সরশুনার বাঘা যতীন ক্লাব সংলগ্ন এলাকার অনেকেরই ঘুম ছুটেছিল এ হেন লালুকে নিয়ে। তাঁদের অভিযোগ, অ্যাসিড ঢেলে লালুকে পুড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। কোনওমতে সে পালিয়ে এলেও তার ঘাড়ে এবং পিঠের কিছু অংশ পুড়ে গিয়েছিল। তার পর থেকেই যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল সাত মাস বয়সের লালু। পল্টু দলুই নামে এক স্থানীয় যুবকের দাবি, তিনিই গত শুক্রবার লালু নামে ওই পথ কুকুরকে রাস্তায় পড়ে কাতরাতে দেখেছেন। তাঁরা বন্ধুরা মিলে এর পরে লালুকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। যোগাযোগ করা হয় কয়েকটি পশুপ্রেমী সংগঠনের সঙ্গে। সেই সংগঠনের সূত্রেই পশু চিকিৎসকেরা দেখতে যান লালুকে। তবে তাঁরা জানিয়ে দেন, আশা নেই। অ্যাসিডে লালুর শরীরে বাইরের অংশ তো পুড়েছেই, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেহের ভিতরের অংশও।
গত সোমবার পর্যন্ত ওই এলাকার একটি বাড়িতে রেখে চিকিৎসা করা হয় লালুর। ওষুধ দেওয়ার পাশাপাশি স্যালাইনও চলে তার। এই সময়ের একটি ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। তাতে দেখা যায়, লালু মাটিতে পড়ে কাতরাচ্ছে আর তাকে স্যালাইন, ওষুধ দিয়ে সুস্থ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন স্থানীয়েরা। তবে এই চেষ্টা কার্যকর হয়নি। গত সোমবার সন্ধ্যায় মৃত্যু হয় লালুর।
এর পরেই স্থানীয় যুবকদের কয়েক জনের রোষ গিয়ে পড়ে পাড়ার একটি বাড়ির বাসিন্দাদের উপরে। পল্টুদের অভিযোগ, ওই বাড়ির বাসিন্দারাই লালুকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছেন। তাঁরাই অ্যাসিড ছুড়েছেন। পল্টুর কথায়, ‘‘এই অভিযোগ করছি কারণ, আগেও লালুকে মেরে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। ওর গায়ে গরম জল ঢেলে দিয়েছিলেন ওই বাড়ির লোকজন। আমরা অনেক কষ্টে ওকে বাঁচিয়েছিলাম। কিন্তু এ বার আর পারলাম না।’’ পল্টুরা ইতিমধ্যেই সরশুনা থানারও দ্বারস্থ হয়েছেন। তাঁরা বিষয়টি জানিয়েছেন স্থানীয় কাউন্সিলর (১২৭ নম্বর ওয়ার্ড) নীহার ভক্তকেও।
যে বাড়ির বিরুদ্ধে অভিযোগ সেখানকার বাসিন্দা, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি অবশ্য বললেন, ‘‘ওই কুকুরটা খুব ঝামেলা করত। রাতে বাড়ি ফেরার সময়ে কামড়ে দিত। তবে আমরা ওকে মারিনি। কী করে মারা গিয়েছে, বলতে পারব না।’’ স্থানীয় আর এক বাসিন্দা আকাশ চৌধুরী অবশ্য বলছেন, ‘‘আমরা ওই বাড়ির বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি। অভিযোগ সত্যি কি না, তা পুলিশ খতিয়ে দেখুক।’’ সরশুনা থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক বলেন, ‘‘বিষয়টি দেখছি।’’ স্থানীয় কাউন্সিলরের বক্তব্য, ‘‘এমন হয়ে থাকলে পুলিশকে বলব আইনি ব্যবস্থা নিতে। কুকুর নিয়ে সমস্যা হলে পুরসভাকে জানাতে পারতেন। আমাকেও বলা যেত। কিন্তু এ ভাবে মেরে ফেলা যায় না।’’
কয়েক মাস আগেই নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (এনআরএস) ১৬টি কুকুরছানার মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। কুকুরছানাগুলিকে পিটিয়ে মারার অভিযোগে গ্রেফতার হন ওই হাসপাতালেরই দুই নার্সিং পড়ুয়া। তবে জামিন যোগ্য ধারায় মামলা হওয়ায় শিয়ালদহ আদালতের বিচারক তাঁদের জামিন দেন। ওই ঘটনার পরেও কুকুর ‘খুনে’র অভিযোগ আসা যে বন্ধ হয়নি, তা এই ঘটনাতেই স্পষ্ট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy