Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ছোট ছোট বদলেও ভয় পায় ওরা

তিরিশ মিনিট পরে সমস্যাটা বোঝা গেল। প্রতিদিন ৬১ নম্বর রুটের বাসে বাড়ি ফেরে ওই পড়ুয়া। বাসের গায়ে বোর্ডে ইংরেজিতে ৬১ লেখা থাকে। কী করে যেন সে দিন বোর্ডটি উল্টে গিয়ে নম্বরটি ইংরেজির ১৯ হয়ে গিয়েছিল!

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন জিজা। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন জিজা। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:৪৪
Share: Save:

স্কুল ছুটি হয়ে গিয়েছে বহুক্ষণ। পড়ুয়ারা স্কুলের গেটে দাঁড়ানো বাড়ি ফেরার বাসে উঠেও পড়েছে। তবে কিছুতেই বাস ছাড়া যাচ্ছে না! কারণ, এক পড়ুয়া কিছুতেই বাসে উঠবে না বলে জেদ ধরেছে। বাসের চালক ও কন্ডাক্টরের শত ডাকাডাকিতেও তাকে বাসে চড়ানো যাচ্ছে না!

তিরিশ মিনিট পরে সমস্যাটা বোঝা গেল। প্রতিদিন ৬১ নম্বর রুটের বাসে বাড়ি ফেরে ওই পড়ুয়া। বাসের গায়ে বোর্ডে ইংরেজিতে ৬১ লেখা থাকে। কী করে যেন সে দিন বোর্ডটি উল্টে গিয়ে নম্বরটি ইংরেজির ১৯ হয়ে গিয়েছিল!

ওই সামান্য পরিবর্তনই অস্থির করে তুলেছিল পড়ুয়াটিকে।এই ঘটনার উদাহরণ দিয়ে ‘স্পেশ্যাল এডুকেটর’ শীলা মেনন মুখোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘‘এই ধরনের ছোট ছোট পরিবর্তনও যে বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের জন্য কত বড় ধরনের সমস্যা তৈরি করে, আমরা বুঝতেও পারি না। মন থেকে সমস্যাগুলি বুঝলেই মিটে যায়।’’

শনিবার শহরে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন সন্তানের অভিভাবকদের নিয়ে আয়োজিত এক আলোচনাচক্রে এমনই নানা অভিজ্ঞতার কথা শোনাচ্ছিলেন উপস্থিত অতিথিরা। ‘অটিজম সোসাইটি ওয়েস্ট বেঙ্গল’, ‘রোটারি ক্লাব’ এবং ‘ইনার হুইল ক্লাব অব কলকাতা’র যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ওই আলোচনাচক্রে প্রধান অতিথি ছিলেন সমাজকর্মী জিজা ঘোষ। সম্মাননীয় অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন রাজ্যের নারী ও শিশুকল্যাণ অধিকার রক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী। ছিলেন সিআইএসএফ এবং কলকাতা পুলিশের আধিকারিকেরা।

অনুষ্ঠানে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের তরফে বিপাশা রায় প্রশ্ন তোলেন, ‘‘বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের জন্য হঠাৎ বিশেষ সুবিধার প্রয়োজন হল কেন?’’ স্পেশ্যাল এডুকেটর অরুন্ধতী সরকার বলেন, ‘‘অধিকার দরকার। কারণ, স্কুলে পড়ানোর সময়ে বহু শিক্ষকই অনেক পড়ুয়াকে এড়িয়ে যান। কারণ, তাঁরা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন।’’ দীর্ঘদিন ব্যাঙ্কিং পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত সোমনাথ সেনগুপ্ত আবার বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের জন্য ব্যাঙ্কিং পরিষেবা আরও সহজ করার দাবি জানান। ‘অটিজম সোসাইটি ওয়েস্ট বেঙ্গল’-এর তরফে ইন্দ্রাণী বসু বলেন, ‘‘বিমানবন্দর থেকে রেল স্টেশন, বিশেষ শিশুদের অধিকারের কথা এখনও আলাদা করে বলে দিতে হয়।’’

জিজা অবশ্য বলেন, ‘‘বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন আর সাধারণের মধ্যে আমরা-ওরা বন্ধ করুন। সুযোগ না দিলে আমাদের ক্ষমতাই বা বুঝব কী করে?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fear Autism Child
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE