Advertisement
০৭ মে ২০২৪

পুজোর ময়দানে কোমর বেঁধেছেন মহিলা শিল্পীরাও

এ-ও এক ধরনের পরিবর্তন! দেবীর পুজোয় দীর্ঘদিন ধরেই শিল্পীর তালিকায় পুরুষদের আধিপত্য। কিন্তু গত বছর থেকে বদলে যাচ্ছে সমীকরণটা। উৎসব কাপের লড়াইয়ে ক্রমেই জাঁকিয়ে বসছে নারী শক্তি। শিল্প দক্ষতায় পুরুষদের সঙ্গে টক্কর দিচ্ছেন সমানে সমানে!

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৬ ০২:০২
Share: Save:

এ-ও এক ধরনের পরিবর্তন!

দেবীর পুজোয় দীর্ঘদিন ধরেই শিল্পীর তালিকায় পুরুষদের আধিপত্য। কিন্তু গত বছর থেকে বদলে যাচ্ছে সমীকরণটা। উৎসব কাপের লড়াইয়ে ক্রমেই জাঁকিয়ে বসছে নারী শক্তি। শিল্প দক্ষতায় পুরুষদের সঙ্গে টক্কর দিচ্ছেন সমানে সমানে!

গত বছর ভিআইপি রোডের পাশে অর্জুনপুরের একটি পুজোয় ছোট্ট মেয়ের আদলে প্রতিমা দেখে তাজ্জব বনে গিয়েছিলেন অনেকেই। ছড়িয়ে পড়েছিল শিল্পী পিয়ালি সাধুখাঁর নাম। এ বারে তাঁর হাতে রয়েছে শহরের তিনটি পুজোর ভার।

কালীঘাট মিলন সঙ্ঘে ‘দেবী ঘরে-বাইরে’ থিম গড়তে গিয়ে গৃহস্থ বাড়ির মহিলাদেরই দুর্গা হিসেবে তুলে ধরেছেন পিয়ালি। প্রতিমার আদলে আটপৌরে গৃহিণীর রূপ। মণ্ডপ সাজছে কাঠের প্রিন্ট ব্লক দিয়ে। বেলঘরিয়া অমৃতনগরে পিয়ালি ফুটিয়ে তুলছেন ‘শক্তিরূপেণ শান্তিরূপেণ সংস্থিতা’-র থিম। সেখানে দেবী মহিষাসুরকে বধ করে নিজের রাজত্ব দখল করছেন। রানির মতো সিংহাসনে আসীন তিনি। মণ্ডপও তৈরি হয়েছে প্রাসাদের আদলে। দক্ষিণ কলকাতার আরও একটি পুজোয় থিম গড়েছেন তিনি। পুজো ময়দানের খবর, পিয়ালির তৈরি প্রতিমায় মানবীর আদল এ বারও অটুট।

এ বারই প্রথম একক ভাবে থিম পুজোর দায়িত্ব নিয়েছেন শিল্পী সুচেতনা সামন্ত। বিশ্বভারতীর কলাভবন ও শিল্পসদনের এই প্রাক্তনীর পরিবারেই অবশ্য রয়েছেন আর এক থিম শিল্পী। সুচেতনার বাবা বিমল সামন্তও এ বার থিম গড়েছেন দক্ষিণ কলকাতার শিবমন্দির পুজো কমিটির। বেহালা আদর্শপল্লিতে থিম পুজোর মণ্ডপ সাজাতে সুচেতনা বেছে নিয়েছেন দুর্গা মন্দিরের বিভিন্ন পতাকাকে। তিনি বলছেন, দুর্গা মন্দিরে নানা ধরনের পতাকা থাকে। কোনওটি শ্বেত পতাকা, কোনওটি পীত পতাকা, কোনওটি আবার রক্তিম পতাকা। এক-একটির
একেক ধরনের আকার। পতাকায় ছিদ্র করে ফুটিয়ে তুলছেন ত্রিশূল, স্বস্তিকের মতো চিহ্ন।

গত বছর হাতেখড়িতেই ফাল্গুনী সঙ্ঘে বেণুবন গড়ে নজর কেড়েছিলেন শিল্পী সুদীপ্তা দাস। এ বার তাঁর হাতে গোলপার্ক সর্বজনীনের দায়িত্ব। ‘শক্তিরূপেণ সংস্থিতা’-র থিমে সাধারণ
নারীকেই ফুটিয়ে তুলছেন তিনি। গোলপার্কের কাছে গলির ভিতরে এই পুজোর মণ্ডপসজ্জাতেও অভিনবত্ব এনেছেন তিনি। শক্তির চিহ্ন হিসেবে মণ্ডপে থাকছে অন্তত তিরিশটি ত্রিশূল। দেখে মনে হতেই পারে ঝকঝকে ধাতব পাতের তৈরি, কিন্তু আদতে তৈরি হচ্ছে প্লাইউড দিয়ে। চাঁদোয়া তৈরি করেছেন কাপড় নয়, শাখা-পলাকে সুতো দিয়ে জুড়ে জুড়ে। মণ্ডপসজ্জার উপাদানে পরিবেশ-বন্ধুত্বের ছোঁয়াও রাখছেন সুদীপ্তা। ব্যবহার করেছেন মাটির থালা, কলসি, টব, লাল শালু, সিঁদুর, লাল সুতো, কড়ি, চায়ের খুড়ি, কল্কে, কুলোর মতো চেনা জিনিসকে। আদতে বাণিজ্যে স্নাতক, থিম পুজোয় এলেন কী ভাবে? সুদীপ্তা জানালেন, বাণিজ্য নিয়ে পড়াশোনা হলেও পাশাপাশি ছবি আঁকা, শিল্পকলার পাঠও নিয়েছেন। ছোটবেলার সেই ঝোঁকই থিম পুজোয় নিয়ে এসেছে।

কুমোরটুলি বা পটুয়াপাড়ায় প্রতিমা তৈরির পিছনে গৃহিণীদের অবদানও কম নয়। কিন্তু সেখানেও আলো শুধু পুরুষের মুখে। কিন্তু থিম পুজো, উৎসব কাপ বদলে দিচ্ছে সেই সব চিরাচরিত ভাবনাও। স্বামী সন্দীপের সঙ্গে জুটি বেঁধে পুজোয় কাজ করছেন শিল্পী রাখি মুখোপাধ্যায়। এ বারে তাঁর হাতে তিন-তিনটি পুজো।

দমদম মলপল্লিতে কাগজ দিয়ে মণ্ডপ সাজাচ্ছেন রাখি। পদ্মের আদলে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ, দেবীর অধিষ্ঠানও পদ্মের উপরে। কাগজের কাজ নজর কাড়তেই পারে, পরিবেশবান্ধব উপাদান দিয়ে কাজ করাটাও পরিবেশকর্মীদের কাছে ‘নজরকাড়া’ করে তুলতে পারে রাখি-সন্দীপকে। গত শতকের শেষে ভাঁড় দিয়ে মণ্ডপ গড়ে তাক লাগিয়েছিল দক্ষিণ কলকাতার একটি পুজো। এ বার বেলেঘাটা নবমিলনে চায়ের ভাঁড়কে নতুন ভাবে নিয়ে আসছেন রাখি। হঠাৎ
চায়ের ভাঁড় কেন? ‘‘থিমের নাম মাটির মানুষ। তাই মাটির জিনিসকেই বেছে নিয়েছি।’’ বেলেঘাটার নবজাগ্রত পুজো কমিটিকে রাখি দিয়েছেন বোতামের থিম। তিনি জানান, উৎসবের আনন্দে শুধু মানুষ সামিল হয় না, প্রকৃতি-পরিবেশও বদলে যায়। সেই ভাবনাকে তুলে ধরতেই বোতামের মতো চেনা উপাদান বেছে নিয়েছেন তিনি।

গত বছর পুজোয় নজর কেড়েছিলেন অদিতি চক্রবর্তী,
সুমি মজুমদারের মতো উঠতি শিল্পীরাও। এ বারও অদিতি পুজো ময়দানে রয়েছেন। দক্ষিণ কলকাতার একটি পুজোয় কাজ করছেন তিনি। সুমিও লোকশিল্পকে নতুন আঙ্গিকে এনে সাজিয়ে তুলছেন দক্ষিণ কলকাতার একটি পুজোমণ্ডপ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kolkata pujo
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE