Advertisement
E-Paper

জীবনকে বড় প্রেক্ষাপটে ধরার চেষ্টা

সু ‌ন্দরী নীপা চোদ্দো বছর বয়সে প্রেমিকের হাত ধরে এসে পড়ল এক মধ্যযুগীয় পরিবেশে। যেখানে ঘরের বধূদের ব্যবহার করা হয় যৌনদাসীর মতো। সেই জীবন থেকে পালিয়ে দ্বিতীয় পুরুষের সঙ্গে আমেরিকায় পাড়ি। কঠোর সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে তৃতীয় জনের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলল জীবন।

শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:০০

সু ‌ন্দরী নীপা চোদ্দো বছর বয়সে প্রেমিকের হাত ধরে এসে পড়ল এক মধ্যযুগীয় পরিবেশে। যেখানে ঘরের বধূদের ব্যবহার করা হয় যৌনদাসীর মতো। সেই জীবন থেকে পালিয়ে দ্বিতীয় পুরুষের সঙ্গে আমেরিকায় পাড়ি। কঠোর সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে তৃতীয় জনের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলল জীবন। প্রত্যেক পুরুষের সন্তান ধারণ করতে করতে নিজের মেয়েরই প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠল সে। এক অমোঘ প্রশ্ন সমেত চিরঅতৃপ্তির বাস্তব আখ্যান তিলোত্তমা মজুমদারের প্রেতযোনি (আনন্দ। ২০০.০০) উপন্যাসে।

নিবিড় ভালবাসায় ঘেরা এক পরিবার। বাদল, লায়লা ও তাদের মেয়ে রূপসা। হঠাৎই ঘনিয়ে আসে দুর্যোগের কালো মেঘ। রূপসার অসুস্থতাকে কেন্দ্র করে বাদল ও লায়লা এক অসহায়তার নাগপাশে জড়িয়ে পড়তে থাকে। বাদল অসীম সাহসে অসুস্থ মেয়ে রূপসাকে নিয়ে কাঁটাতারের বেড়া অগ্রাহ্য করে চলে আসে ভারতে, তথা পশ্চিমবঙ্গে। এই মর্মস্পর্শী আখ্যানই সায়ন্তনী পূততুন্ড-র উপন্যাস শঙ্খচিল-এ (আনন্দ। ২০০.০০)।

লেখক সম্পর্কে প্রকাশক লিখেছেন, ‘একটু বেশি বয়সে লিখতে আসায় স্বাভাবিক ভাবেই তাঁর লেখার প্রাজ্ঞতা নিয়ে আমাদের কোনও সংশয় নেই।’ বন্দীপুরের জীবনদর্পণ (নিশানা। ২৫০.০০) গিরিজাপ্রসন্ন চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম উপন্যাস। ফেলে আসা দিনগুলির স্মৃতি, পাড়া-গাঁয়ের জটিল রাজনীতি, মানুষের জীবন সংগ্রাম সাবলীল ভাষায় তিনি লিখেছেন। মানুষের মূল্যবোধ যে মানুষের উত্তরণ ঘটায়, তা-ই দেখানো হয়েছে এই বইয়ে।

স্বাতী গুহর লেখায় গ্রামীণ, শহুরে, প্রান্তিক মানুষজন বিশিষ্ট হয়ে উঠেছেন তাঁদের বিভিন্ন পেশা ও নেশার স্পষ্টতায়। এমনকী প্রকৃতিও তাঁর লেখায় চরিত্র হয়ে ওঠে। গল্প বয়ানে চলচ্চিত্রের মতো ডিটেল আর বহুমাত্রিকতা। সে রকমই তাঁর জমিন-আসমানের গল্প (সোপান। ২০০.০০) সংকলনের বাইশটি গল্পে গত কয়েক বছরের নানা ঘটনা এসে পড়েছে আলোকসম্পাতের মতো। ‘পা’-এর মেঘাই, ‘লাস্ট ট্রেন’-এর দুই বৃদ্ধ, ‘চিরুনি’র সোমপ্রকাশ বড় চেনা। পাশাপাশি লেখকের অতীন তোড়ার গল্প (লালমাটি। ১০০.০০) দশটি গল্পের সংকলন মাত্র নয়। জীবনকে আর একটু বড় প্রেক্ষাপটে ধরার চেষ্টা। প্রত্যেকটি বিভাজনে এক একটি দৃষ্টিভঙ্গি। আর সবটা মিলেই জীবনের এক পাঠ।

কল্যাণ মৈত্রর জীবনটাই গল্পের মতো। কখনও প্রুফরিডার, কখনও বাংলা রচনাবইয়ের ছদ্ম লেখক। সাংবাদিক জীবনে তিনি বহু ঘটনার সাক্ষী। লেখকের গদ্যে আবেগ সম্পৃক্ত কবিতার ভাষা— অথচ তা তীক্ষ্ণ, সংবেদনশীল এবং মর্মস্পর্শী। তাঁর পনেরোটি ছোটগল্পের সংকলন গল্প কিছু গল্প (স্পার্ক। ১৯৯.০০)। বইটির প্রকাশনা-মান চমৎকার।

চল্লিশ-পঞ্চাশের দশকে বম্বের হিন্দি ছবির বিশিষ্ট অভিনেতা নাজির হোসেনকে কে না চেনে, কিন্তু ক’জনই-বা জানে তাঁর পূর্ব জীবনের কথা? যুদ্ধবন্দি ছিলেন তিনি, তার পর নেতাজি যখন এমন সৈন্যদের নিয়ে আজাদ হিন্দ ফৌজ গড়লেন, সে বাহিনির উর্দি পরলেন নাজির। তাঁর জীবনের এই দিনগুলি নিয়ে তাঁরই ঘনিষ্ঠ বন্ধু নবেন্দু ঘোষ, ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রেক্ষিতে যাঁর ‘ডাক দিয়ে যাই’ উপন্যাসটি বাংলা সাহিত্যে চিরস্থায়ী, জীবনের শেষ প্রান্তে এসে লিখলেন কদম কদম... (ভাষালিপি। ১৫০.০০), তাতে ঠাঁই পেল ভারতীয়দের স্বাধীনতার লড়াইয়ের কাহিনি।

স্বাধীন ভারতে বিধ্বস্ত ও পরাভূত যে অতীব দরিদ্র মানুষেরা বেঁচে আছে শুধুমাত্র বাঁচার আনন্দেই, যারা কেউ রেশমচাষি, কেউ ভাগচাষি, কেউ পালাগায়ক, কেউ-বা গরুচোর, তাদেরই একের পর এক আখ্যানে, আঞ্চলিক ভাষা-উপভাষার চলিষ্ণুতায় খুঁজে গিয়েছেন রঙিলী বিশ্বাস, তাঁর গল্পসংকলন গণশুনানির পরে-তে ( দে’জ। ২০০.০০)।

অমর মিত্রের পুনরুত্থান (দে’জ। ১৫০.০০) যেমন এক নিরপরাধের আত্মরক্ষার কাহিনি, তেমনই একই সঙ্গে ক্ষমতা-র নিষ্ঠুরতার কাহিনি। ক্ষমতার কোনও এক প্রান্ত যদি বিপন্ন হয়, তবে অন্য এক প্রান্ত শঙ্কিত হয়ে ওঠে, পরস্পরকে রক্ষা করেই এই ক্ষমতা বেঁচে থাকে। রাষ্ট্র, প্রশাসন, আমলাতন্ত্রের এক অন্তর্ভেদী উন্মোচন এ আখ্যান।

জঙ্গলমহলের জনজাতীয় মানুষের আশ্চর্য আখ্যান রুশিকা (আনন্দ। ৪০০.০০)। পূর্বপুরুষের স্মৃতি আর উত্তরপুরুষের স্বপ্ন, মধ্যে ঘনীভূত নিসর্গ। এক দিকে যেমন সেখানকার মানুষগুলির শিল্পসত্তা, তেমনই অন্য দিকে তাদের লড়াইয়ের সত্তাও। এক জটিল সময়, রাতের বনপার্টির উল্টো দিকে দিনে সংসদীয় গণতন্ত্রের রাজনৈতিক দল, মাঝে বিভ্রান্ত জনজাতি। ঔপন্যাসিক বিমল লামা বুনে দিয়েছেন তাঁর ভাষাশিল্পে।

‘অনাগরিক’ প্রান্তজনের মূল্যে উন্নয়ন আর মধ্যবিত্ত বাঙালির মুখ ও মুখোশের বেআব্রু উন্মোচন বিশ্বজিৎ রায়ের গল্পসংগ্রহ বোমা-য় (সম্পর্ক। ১৫০.০০)। দূর থেকে সমাজকে দেখার বিপরীতে তাই ‘রাধা’র গল্প, যে বলে ‘আপলোগ কলকাত্তা সে আয়ে। কিত্‌না পড়ে লিখে আদমি সব। হাম তো এক দেহাতী লেড়কী...।’ গল্পের শেষে লেখেন বিশ্বজিৎ: ‘রাজনীতিতে নৈতিকতার প্রশ্নে দু মুখো নীতিই তো দস্তুর। কিন্তু এ মেয়ে তা মানবে না। বুঝলাম রাধা আমাদের চেনা পথের বাইরেই থেকে যাবে। ছকবাধা বিপ্লব-বিদ্রোহ থেকে দূরে সে অন্য এক ভারতবর্ষের পথিক।’

Books Reality
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy