সুপ্রভা রায়: দি আনভ্যানকুইশড
টুম্পা মুখোপাধ্যায়
৫০০.০০
আভেনেল প্রেস
উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী তাঁর শাশুড়িমা কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়কে অনুরোধ করেছিলেন, তিনি যেন সাদা থান না পরেন। নারী শিক্ষার সমর্থন, কুলীন প্রথার বিরোধিতার মতো, হিন্দু বিধবাদের কঠোর, রিক্ত জীবনচর্যার বিধানও গ্রহণ করেননি ব্রাহ্মরা। অথচ, সেই উপেন্দ্রকিশোরের ছেলে সুকুমারের ছত্রিশ বছর বয়সে অকালমৃত্যুর পরে মাত্র একত্রিশ বছর বয়সে থান ধরেছিলেন সুপ্রভা রায়। আরও সাঁইত্রিশ বছর বেঁচেছিলেন, ওই এক বেশে। হাতে একটি আংটি ছাড়া কোনও গয়না পরেননি, নিরামিষ খেয়েছেন। ব্রাহ্ম পরিবারের কন্যা ও বধূ, বেথুন কলেজের গ্র্যাজুয়েট সুপ্রভার যথেষ্ট পরিচয় ছিল তৎকালীন বাংলার সমাজ-সংস্কৃতির অগ্রণী ব্যক্তিদের সঙ্গে। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ তাঁর স্নেহের টুলুকে গান শিখিয়েছেন। সে সময়ে বিধবা-বিবাহের নজির কম ছিল না, সপুত্রকন্যা মহিলাদেরও দ্বিতীয় বিবাহ হয়েছে। তা সত্ত্বেও কেন হিন্দু বিধবার মতো বাঁচলেন সুপ্রভা?
সুপ্রভা রায়ের এই জীবনী থেকে যা মেলে, তা বহু সচ্ছল পরিবারের মেয়ের জীবনরেখা— শৈশবে পড়াশোনা, গান, বিয়ের পরে বৃহৎ পরিবারে বড় বৌঠান, তার পর ছোট ভাইয়ের সংসারে বিধবা মেজো পিসি। সন্তান মানুষ করতে সেলাই দিদিমণি, নিজের তৈরি হস্তশিল্প বিক্রি— কিন্তু কর্মজীবনে, কিংবা শিল্পজগতে, নিজের পরিচিতি তৈরির চেষ্টা করেননি। সুপ্রভা সামান্য ছিলেন না— দৈর্ঘ্য পাঁচ ফুট আট ইঞ্চি, প্রবল ব্যক্তিত্বময়ী (দেওর সুবিমল তাঁকে বলতেন, বজ্রবৌঠান), রন্ধন, সঙ্গীত, সূচিশিল্প, ভাস্কর্যে অতি পারদর্শী। তবু যেন গৃহিণীপনার আড়ালে রয়ে গেলেন তিনি। বোন কনক দাস সুপ্রসিদ্ধ রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী, সুপ্রভার গানের রেকর্ড পাওয়া যায় কেবল কোরাসে। ব্রাহ্মিকা সমাজ, বঙ্গ মহিলা সমাজ কিংবা নারী হিতসাধিনী সভার মতো সংগঠনে তাঁকে পাওয়া যায় না। বেথুন কলেজের শতবার্ষিকী স্মারক পত্রিকায়, সংসদ চরিতাভিধানে তাঁর নাম বাদ পড়ে গিয়েছে। কতটা সাম্যময় ছিল তাঁর দাম্পত্য, কী ব্যবহার পেয়েছিলেন যৌথ পরিবারে, কেমন ছিল তাঁর একক মাতৃত্ব, সুপ্রভার প্রসঙ্গে সে সবেরই আভাস মেলে শুধু।