Advertisement
০৮ মে ২০২৪
book review

অন্ধকারের মাঝে আলো হয়ে জেগে থাকা মেয়ে

সেই সময়ের নিয়মমতো পাঁচ বছরে তাকে গৌরীদান করেননি কালীগতি। তাই, ‘ডাকাতে মেয়ে’ জয়াবতী তার বালবিধবা গঙ্গাজল পুণ্যবতীর সঙ্গে নানা অসাধ্যসাধন করে বেড়ায়।

Sourced by the ABP

শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৩ ১০:১০
Share: Save:

ডুরে শাড়ি কোমরে জড়ানো, এক ঢাল চুল পিঠের উপর ছড়িয়ে আছে। খলনুড়ির উপর ঝুঁকে রয়েছে সমস্ত শরীর, জগৎ-সংসারের কোনও দিকেই হুঁশ নেই— এই হল জয়াবতী। পণ্ডিত কালীগতি তর্করত্নের কন্যা। বড় জেদি মেয়ে। সেই সময়ের নিয়মমতো পাঁচ বছরে তাকে গৌরীদান করেননি কালীগতি। তাই, ‘ডাকাতে মেয়ে’ জয়াবতী তার বালবিধবা গঙ্গাজল পুণ্যবতীর সঙ্গে নানা অসাধ্যসাধন করে বেড়ায়। এক ভয়ঙ্কর জ্বরের হাত থেকে বাঁচায় বাবা, মা আর বাড়ির রাঁধুনিটিকে, কেবল উপস্থিত বুদ্ধির জোরে।

জয়াবতীর জয়যাত্রা

তৃষ্ণা বসাক

১৮০.০০

সৃষ্টিসুখ

পরিণতি— যে সময় বলা হত মেয়েরা বেশি পড়লে বিধবা হয়, সেই সময় কালীগতি জয়া আর পুণ্যিকে চিকিৎসাবিদ্যা শিখতে দূর গ্রামে পাঠান। কী ভাবে শিক্ষার পাশাপাশি অন্ধবিশ্বাস, আর মেয়েদের প্রতি সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে ওঠে জয়াবতী, তাই নিয়েই তৃষ্ণা বসাকের উপন্যাস জয়াবতীর জয়যাত্রা। অপরূপ ভাষার জাদুতে জয়াবতীর দস্যিপনা, তার নির্ভয়-যুক্তিপূর্ণ তর্ক আর পুণ্যির শান্ত, স্নিগ্ধ উপস্থিতি এক অন্য বাংলার ছবি তুলে ধরে। যে অষ্টাদশ শতকের বাংলায় সতীদাহ প্রথা ছিল, মেয়েদের কঠোর একাদশী পালনের রীতি ছিল, আবার একই সঙ্গে ছিল লক্ষ্মী-সরস্বতীর মতো মেয়েরাও, যারা কাশী থেকে আসা এক বিখ্যাত পণ্ডিতকে তর্কযুদ্ধে হারিয়ে দেওয়ায় বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়, এবং কাশীতে টোল খুলে বসে। অন্ধকারের মাঝে এই আলোর উপস্থিতিটুকুই তো মেয়েদের পাথেয় হয়ে এসেছে এত কাল।

সমরেশ বসু-কালকূট ও অন্যান্য

নবকুমার বসু

৫৫০.০০

ঋতবাক

নবকুমার বসুর পরিচিতি মূলত কথাসাহিত্যিক রূপেই। তিনি সাহিত্যিক সমরেশ বসুর পুত্র। কথাসাহিত্যের পাশাপাশি তাঁকে কেন প্রবন্ধও লিখতে হল, তারই অনুসন্ধান এই বই। লেখক জানাচ্ছেন, “বাস্তব এবং বাস্তবের মতো, সৃষ্টিধর্মী সাহিত্যে এই তফাৎটুকু রাখতে হবে। রাখতে হয়। আর তফাৎটুকু ঘুচিয়ে দেওয়ার জন্যই সৃষ্টিধর্মী লেখককে প্রবন্ধ লিখতে হবে।” প্রবন্ধ লেখকের চর্চাভূমিকে আরও বিস্তৃত করে। সঙ্কলনটিতে এই বিস্তারেরই পরিচয়। কথাসাহিত্য সৃষ্টির ক্ষেত্রে সমরেশ বসুর সঙ্গে একটি দূরত্ব লেখক বজায় রেখেছেন বরাবর। কিন্তু প্রবন্ধ সঙ্কলনে রয়েছে ব্যক্তি সমরেশকে অনুসন্ধানের চেষ্টা; সাহিত্যিক সমরেশ ও কালকূটকে অন্য দৃষ্টিতে দেখার প্রয়াস। সত্যজিৎ রায়ের সাহিত্য, চিত্রনাট্য নিয়ে আলোচনা রয়েছে; বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য ‘পিতা’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সংক্রান্ত প্রবন্ধটি, ‘পিতা-ঠাকুরের হারিয়ে যাওয়া’। এখানে প্রবন্ধশৈলীর অতিরেক আখ্যানের বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে যেন। এ ছাড়াও, সারদাদেবীকে নিয়ে উপন্যাস লেখার নানা মুহূর্ত, যুবরানি ডায়ানা, প্রবাসী বাঙালি ও তার নববর্ষ, ‘সাহিত্য ও বাংলা বাজারের বর্তমান অবস্থান’-সহ নানা বিষয়ে লেখকের ভাবনা ফুটে উঠেছে। প্রাবন্ধিকসুলভ গাম্ভীর্যের বদলে ব্যক্তিগত ভাবনাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন লেখক এই সঙ্কলনে।

আমার মুক্তি ঘাসে ঘাসে:

একজন বাঙালি আন্তর্জাতিক রেফারির আত্মকথা

সাগর সেন

৩২০.০০

মান্দাস

১৯৫১ সালে হুগলির জাঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেওয়া, নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা এক কিশোরের পক্ষে খেলার জগতের সঙ্গে পেশাদারি ভাবে যুক্ত হওয়ার স্বপ্ন দেখাটাও যে একটা ‘চ্যালেঞ্জ’, জানতেন সাগর সেন। তবে পরিবারের সহায়তায় ও নিজের চেষ্টায় পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলোও সমান তালে চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। সৌরভ মুখোপাধ্যায়ের অনুলিখনে এই বই তুলে ধরে সাগরের ব্যক্তিগত ও পেশাদার জীবনের নানা ঘটনা, স্মৃতি। ১৯৮২ সালে জাতীয় স্তরে রেফারি হওয়া, সময়ের সঙ্গে কী ভাবে ফিফা প্যানেলভুক্ত হলেন, নানা আন্তর্জাতিক ম্যাচ পরিচালনার সুযোগ পেলেন, রয়েছে তার বিবরণও। ১৯৯৬-এ শেষ বারের মতো পেশাদার রেফারির ভূমিকায় নামেন সল্টলেক স্টেডিয়ামে। অন্য দিনের মতোই সে দিনও মাঠ গমগম, কিন্তু মনের কোণে এক গভীর শূন্যতা, “আজকের পর আর নামব না মাঠে, আর নামব না।” সেই ম্যাচটিও কিছু ঘটনার সূত্রেই স্মৃতিতে অমলিন। অবসর নেওয়ার পরেও নানা ভাবে তিনি যুক্ত খেলার সঙ্গে, মাঠের সঙ্গে। এ সব নানা প্রসঙ্গ দিয়েই সাজানো হয়েছে বইটিকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

book review Samaresh Basu
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE