Advertisement
E-Paper

ভাঙন থেকেই উঠে আসে নতুন দৃশ্যপ্রতিমা

সম্প্রতি হ্যারিংটন আর্ট-এ অনুষ্ঠিত অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়ের প্রদর্শনীটি দেখে এলেন মৃণাল ঘোষঅরিন্দম চট্টোপাধ্যায়ের সমৃদ্ধ একক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হল সম্প্রতি হ্যারিংটন স্ট্রিট আর্ট সেন্টার-এ। প্রদর্শনীটির উদ্যোক্তা গান্ধার আর্ট গ্যালারি। প্রদর্শনীতে অরিন্দমের ছবির সংখ্যা ১০০-র কাছাকাছি।

শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০০:২৪

অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়ের সমৃদ্ধ একক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হল সম্প্রতি হ্যারিংটন স্ট্রিট আর্ট সেন্টার-এ। প্রদর্শনীটির উদ্যোক্তা গান্ধার আর্ট গ্যালারি। প্রদর্শনীতে অরিন্দমের ছবির সংখ্যা ১০০-র কাছাকাছি। তেলরং ও অ্যাক্রিলিকের ক্যানভাস, কাগজের উপর জলরং, প্যাস্টেল ছাড়াও ছিল অজস্র ছোট ছোট ড্রয়িং। এই গ্যালারিতে সুযোগ ছিল বিষয় অনুযায়ী, মাধ্যম অনুযায়ী ছবিগুলিকে সাজিয়ে তোলার। সেটা করা হয়েছে বলে প্রদর্শনীটির নিহিত বার্তা সঠিকভাবে সঞ্চারিত করা গেছে।

কিন্তু এ সবই তো বাইরের কথা। আমরা অভিভূত হই এই চিত্রমালার অন্তর্নিহিত বহ্নিতে। সে অগ্নিতে আলো তত নেই, যত আছে বিধ্বংসী দহন। এই ধ্বংসের কথা অনেকটা প্রসঙ্গান্তরিত হয়েই উঠে আসে প্রদর্শনীর শিরোনামে। ‘এই বজ্র আমাকে ধ্বংস করুক’ – এরকম এক শিরোনামের ভাবনাতেই আমরা প্ররোচিত হই। ইংরেজিতে শিরোনাম রাখা হয়েছে ‘দ্য লাইটনিং শুড হ্যাভ স্ট্রাক মি।’ মুম্বইয়ের রঞ্জিত হাসকোটে ক্যাটালগের ভূমিকা লিখেছেন। শুরুতে তিনি গালিবের গজল থেকে একটি উদ্ধৃতি দিয়েছেন, যার প্রথম বাক্যটি হল ‘উন্মোচনের আলো আমাকে স্পর্শ করুক।’ ইংরেজি অনুবাদে: ‘দ্য লাইটনিং অব রেভেলেশন শুড হ্যাভ স্ট্রাক্ট মি’। কিন্তু এই চিত্রমালায় যে উন্মোচন, তা আলোর ততটা নয়, যতটা অন্ধকারের।

আমরা এক জটিল অন্ধকার সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। ধর্মান্ধতা, লোভ, সন্ত্রাস, দুর্নীতি আমাদের গণতন্ত্রকে ক্রমশই ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। অশীতিপর প্রবীণ লেখক এম. এম. কালবুর্গিকে তাঁর বাড়িতে এসে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়। তামিল লেখক পেরুমল মুরাগনকে হুমকি দিয়ে লেখা বন্ধ করে দেওয়ার প্ররোচনা চলে। গোমাংসের গুজবে নিরীহ মানুষকে মেরে ফেলা হয়। এ রকম এক নৈরাজ্যের পরিস্থিতিতে কোনও কি ভূমিকা আছে শিল্প-সাহিত্যের? শিল্পীরা মর্মে মর্মে দগ্ধ হচ্ছেন। অরিন্দম সেই দহনের ভাষা খুঁজছেন।

বজ্রাঘাতে ধ্বংস হয়ে যাওয়া ছাড়া এই সভ্যতার যেন কোনও বিকল্প নেই। অরিন্দম নিজেকে অতিক্রম করে নতুন শিল্পভাষা তৈরি করতে চেয়েছেন। সাম্প্রতিকের এই ঘটনা প্রবাহ তাঁকে আর আভাসে তৃপ্ত থাকতে দেয়নি। তিনি এই জীবনকে, অস্তিত্বকে দুর্মরভাবে ভেঙে ফেলতে চেয়েছেন। সেই ভাঙনের ভিতর থেকে তুলে আনতে চেয়েছেন বাস্তবসঞ্জাত দৃশ্যপ্রতিমা, যা প্রতীক হয়ে বজ্রসম আঘাত হানে আমাদের চেতনায়।

ক্যানভাসের উপর তেলরঙে আঁকা ছবি ‘মকিং বার্ড’-এ আমরা এ রকমই একটি প্রতীক দেখি। বিকৃতদর্শন একটি পাখি উড়ছে। তার পক্ষিত্বের জীবতাত্ত্বিক বিশদ প্রতিমাকল্পে তেমন কিছু নেই। একটি যুদ্ধবিমানের আদলও আসে। প্রেক্ষাপটে বর্ণের যে বুনোট তা দুটি অংশে বিভাজিত। নিম্নাংশে আঁধারমগ্ন ধরাপৃষ্ঠ। উপরে যে শূন্য পরিসর তাও ক্ষতবিক্ষত। এই প্রেক্ষাপটটিই হতে পারত একটি বিমূর্ত ছবি, যেখানে ধরা পড়ত অন্ধকারের বিশ্লেষণ। এই শিল্পীর বিমূর্ত পর্যায়ের একটি আদর্শ ছবি হতে পারত এটি। কিন্তু শিল্পী শুধু আভাসে সন্তুষ্ট থাকতে চান না। তিনি প্রত্যক্ষভাবে আনতে চান এমন প্রতিমা, যা কোনও আখ্যানের মধ্যে না গিয়েও সামগ্রিক বিপন্নতার প্রতীক হয়ে উঠবে। এই বিদ্রুপের পাখি বীভৎসভাবে নেমে আসছে পৃথিবীর দিকে।

‘কনস্পায়ারিং ক্লাউডস’ ছবিটিতে আকাশের মেঘ যেন ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তা থেকে উৎক্ষিপ্ত বজ্র যেন বিশ্বকে ধ্বংস করতে উন্মুখ। নীচে একটি বৃত্তাকার প্ল্যাটফর্মের উপর একটি গোজাতীয় প্রাণী ভয়ার্ত দাঁড়িয়ে আছে। এ ছবিটিও প্রাণীটিকে বাদ দিয়ে হতে পারত একটি উচ্চস্তরের বিমূর্ত ছবি। কিন্তু প্রাণীটি এই ধূমায়িত বহ্নিময় পরিমণ্ডলকে গভীরতর এক সর্বনাশে স্পন্দিত করে তুলছে।

‘ডেথ অব এ রিভার’ ছবির প্রেক্ষাপটে নদীর মৃত্যু, আর সম্মুখপটে মানুষের। মাঝখানে যন্ত্রণাক্ত একটি উড়ন্ত পাখি। একটি ছবিতে শূন্য ঘরে একটি সোফা। প্রসঙ্গহীন ভাবেই সেটি জ্বলছে। মানুষের অস্থিরতা ও শঙ্কার আগুনে জ্বলছে।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy