Advertisement
E-Paper

মানুষের বিপন্ন অস্তিত্বের প্রকৃত চিত্রভাষা

সম্প্রতি অ্যাকাডেমিতে অ্যান্টি-ভাইরাস দলের সম্মেলক প্রদর্শনীটি দেখে এলেন মৃণাল ঘোষঅ্যান্টি-ভাইরাস দলটির প্রথম সম্মেলক প্রদর্শনী অনু‌ষ্ঠিত হয়েছিল ২০১১ সালে। নামেই প্রকাশ এই দলের অন্যতম লক্ষ্য প্রথা বিরোধিতা ও পরিব্যাপ্ত সামাজিক সংকটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী দৃষ্টিভঙ্গি জাগিয়ে রাখা। দলের সব সদস্যের কাজে যে একই প্রকল্পের প্রতিফলন থাকে, সব সময় তা নয়।

শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০০:০০

অ্যান্টি-ভাইরাস দলটির প্রথম সম্মেলক প্রদর্শনী অনু‌ষ্ঠিত হয়েছিল ২০১১ সালে। নামেই প্রকাশ এই দলের অন্যতম লক্ষ্য প্রথা বিরোধিতা ও পরিব্যাপ্ত সামাজিক সংকটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী দৃষ্টিভঙ্গি জাগিয়ে রাখা। দলের সব সদস্যের কাজে যে একই প্রকল্পের প্রতিফলন থাকে, সব সময় তা নয়। তবে বিশ্লিষ্ট রূপের ভিতর দিয়ে প্রকাশের এক নতুন দৃষ্টিকোণ সন্ধান, এর অধিকাংশ শিল্পীর কাজেই দেখা যায়। বিগত পাঁচ বছরে দলের সদস্য-শিল্পীদের পরিবর্তন ঘটেছে। অনেকে দল ছেড়েছেন। যোগ দিয়েছেন নতুন শিল্পী। তারুণ্যের তেজ এই দলটির শক্তির উৎস। অ্যাকাডেমিতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হল তাঁদের চতুর্থ সম্মেলক। ৯-জন চিত্রী অংশ নিয়েছেন।

বাস্তব জীবনে ‘অ্যান্টি ভাইরাস’-এর কাজ প্রতিকূল জীবাণুদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ। শিল্পকলা অশুভকে কোন ওভাবে প্রতিহত করতে পারে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। তবু সত্যের বহু-মাত্রিক রূপের দিকে আলো ফেলার প্রয়াস, শিল্পের একটি অনিবার্য দায়। দৃশ্যকলায় প্রতিরোধ গড়ে উঠতে পারে দু’ভাবে। সৌন্দর্যের অরূপমূর্তির আভাস আনেন কেউ। যেমন যামিনী রায়, বিনোদবিহারী বা মাতিস। বাস্তবের অন্ধকারকেও দেখিয়ে দিতে চান কোনও শিল্পী। যেমন পিকাসো বা আমাদের চিত্তপ্রসাদ, সোমনাথ হোর। এই দলের শিল্পীরা রূপের ভাঙনের পথই বেছে নিয়েছেন। দু’একজন অবশ্য আলোর পথেরও ইঙ্গিত করেছেন।

স্বপন কুমার মল্লিক তাঁর ছবিতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন গতানুগতিকের বাইরে প্রথাবিরোধী চিত্রভাষা গড়ে তুলতে। উচ্চাকাঙ্খা, বিকৃত যৌনকামনা, হিংসা, সন্ত্রাস, বিশ্বায়ন-উত্তর বিশ্বে মানবিক মূল্যবোধকে ধ্বংস করেছে। স্বপন নিম্নবর্গীয় সংস্কৃতি থেকে তুলে আনেন ভাষা। উত্তর-আধুনিক পরিভাষায় যাকে বলে ‘কিচ’। ফরাসি সুররিয়ালিজমের যে বিধ্বংসী প্রতিমা-প্রবণতা, লুই বুনুয়েল-এর সিনেমায় যার দৃষ্টান্ত ছড়িয়ে থাকে, তাকেও তিনি ব্যবহার করেন। শূক্রকীটের নিরন্তন চলা, ছড়িয়ে থাকা বুলেট ও পিস্তল, হাতের কঙ্কালের আঙুলে ঝুলন্ত চাবি, ক্ষুরের আঘাতে চোখের মণি থেকে ঝরে পড়া রক্ত, মানব-মানবীর প্রসারিত জিহ্বার স্পর্শে তীব্র শরীরী কামনা— এরকম সব বিধ্বংসী প্রতিমাকল্পের মধ্য দিয়ে শিল্পী নষ্ট হতে থাকা সভ্যতার কল্পরূপ এঁকে চলেন।

সুশান্ত বড়াল গ্রামের নিম্নবর্গীয় মানুষের বিপন্ন অস্তিত্বকে তাঁর চিত্রপটে তুলে ধরেন। জীবনের এই ক্ষয়ের প্রকৃষ্ট চিত্রভাষা গড়ে তুলেছেন, যা আমাদের সাহায্য করে তথাকথিত উন্নয়নের চরম ব্যর্থতাকে উপলদ্ধি করতে।

চারপাশে পরিব্যাপ্ত হয়ে আছে ভয়। ভয় থেকে জেগে ওঠা আর্তনাদ ও প্রতিরোধকে রূপবদ্ধ করেছেন কার্তিক পাল তাঁর ক্যানভাসে। তবে নবনীতা তাঁর প্রকাশে অতিরিক্ত আবেগ এনেছেন।

দারিদ্রসীমার নীচের জীবন, অন্য দিকে উচ্চকিত লোভ, তঞ্চকতা, বিজ্ঞাপন মাস্তানি— এই নিদারুণ বৈপরীত্যে বয়ে চলেছে ভারতীয় জীবন। বিশ্বনাথ দে তাঁর ‘বিপিএল’ শিরোনামের ছবিতে এই বৈপরীত্যের চরিত্র নির্ধারণের চেষ্টা করেছেন বিদ্রুপাত্মক ভাষায় কার্টুনধর্মী রূপায়ণে।

পল্টু ঘোষ এঁকেছেন সৌন্দর্য ও বিপন্নতার সংহত দ্বান্দ্বিক প্রতিমাকল্প। ‘ইন দ্য মুড ফর লাভ’ শীর্ষক রচনাটিতে মানবী-শরীর বিশ্লিষ্ট করে প্রেমের প্রতীকী-প্রতিমাকল্প গড়ে তুলেছেন, যাতে মানবী ও প্রকৃতি একাত্ম হয়ে গেছে।

অমিত রৈখিক অলঙ্করণের মধ্য দিয়ে আলো-অন্ধকারের দ্বৈতে মূর্তের সামান্য আভাস রেখে কল্পরূপাত্মক বিমূর্ত পরিমণ্ডল তৈরি করেছেন। শক্তির ছবিতে নারীর শরীর কল্পরূপাত্মক রহস্যময় সৌন্দর্যে উদ্ভাসিত হয়েছে। শান্তনুর ছবিগুলো দৃষ্টি আকর্ষণ করে মাধ্যম ও প্রকরণের জন্য। তিনি লিনোকাট মাধ্যমে গৃহাভ্যন্তরের ছবি এঁকেছেন। শান্তনু গৃহাভ্যন্তরের জ্যামিতিক বিন্যাস তুলে এনে স্নিগ্ধ সৌন্দর্যের আবহ তৈরি করেছেন। মগ্ন সৌন্দর্যও যে হতে পারে মানবিক মূল্যবোধের বিপর্যেয় বিরুদ্ধে শ্রেষ্ঠ প্রতিবাদ, দিবাকর কর্মকারের ছবি এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy