Advertisement
E-Paper

সমকালেও প্রসারিত হয়েছে বিকল্প রূপকল্প

সম্প্রতি কেমোল্ড আর্ট গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত হল নবীন শিল্পীদের সম্মেলক প্রদর্শনী। দেখলেন মৃণাল ঘোষগত তিন বছর যাবৎ কেমোল্ড আর্ট গ্যালারি ও ‘স্মিতা’ আর্ট-এর যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাংলার উদীয়মান শিল্পীদের ছবি নিয়ে সম্মেলক প্রদর্শনী। এই প্রদর্শনীর তৃতীয় সংস্করণ মোট ১২-টি পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হল সম্প্রতি কেমোল্ড গ্যালারিতেই। এখানে ১০২-জন নির্বাচিত শিল্পীর কাজের পাশাপাশি দেখানো হয়েছে ১২-জন আমন্ত্রিত শিল্পীর ছবি ও ভাস্কর্য।

শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:০১

গত তিন বছর যাবৎ কেমোল্ড আর্ট গ্যালারি ও ‘স্মিতা’ আর্ট-এর যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাংলার উদীয়মান শিল্পীদের ছবি নিয়ে সম্মেলক প্রদর্শনী। এই প্রদর্শনীর তৃতীয় সংস্করণ মোট ১২-টি পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হল সম্প্রতি কেমোল্ড গ্যালারিতেই। এখানে ১০২-জন নির্বাচিত শিল্পীর কাজের পাশাপাশি দেখানো হয়েছে ১২-জন আমন্ত্রিত শিল্পীর ছবি ও ভাস্কর্য।

এখন আমাদের শিল্পচর্চায় তিনটি ধারা পাশাপাশি চলছে – আধুনিক, আধুনিকতাবাদী ও উত্তর-আধুনিক। কনসেপচুয়াল আর্টে যে বিভিন্ন আঙ্গিকের চর্চা হয়, সেগুলিকে সামগ্রিক ভাবে বলা হয় ‘অলটারনেটিভ আর্ট’। বাংলায় আমরা বলতে পারি ‘বিকল্প রূপকল্প’। আলোচ্য প্রদর্শনীতে আমরা যে সব ছবি দেখি – তার অধিকাংশই আধুনিকতার ধারার অন্তর্গত। কোথাও কোথাও আধুনিকতাবাদী আঙ্গিকের প্রভাব আছে। যে মূল প্রবণতাগুলি এই প্রদর্শনীর অধিকাংশ কাজে দেখা যায়, সেগুলি হল স্বাভাবিকতাবাদী আঙ্গিকের ব্যবহার, নব্য-ভারতীয় ধারার আঙ্গিককে সমকালে প্রসারিত করে নেওয়ার চেষ্টা এবং আধুনিকতাবাদী আঙ্গিকে বাস্তবের বিশ্লেষণাত্মক রূপায়ণ। কনসেপচুয়াল আর্টের অনুষঙ্গও এসেছে অল্প শিল্পীর কাজে।

আমন্ত্রিত শিল্পীদের নির্বাচন থেকেই প্রদর্শনীর মূল সুরটি অনুভব করা যায়। প্রায় সকলেই আধুনিকতার ধারায় কাজ করতে অভ্যস্ত। দু’একজন আধুনিকতাবাদের দিকে যান কখনও। ব্যতিক্রম ছত্রপতি দত্ত। ‘বিকল্প রূপকল্পে’র নানা ধারায় তিনি নিরন্তর কাজ করেন। এই প্রদর্শনীতে তাঁর যে ছবিটি রয়েছে তাকে আধুনিকতাবাদী-ধারার অন্তর্গত করা যায়। ‘ভিতর-বাহির’ শিরোনামের ছবিটিতে তিনি আজকের নারীর অস্তিত্বের সংকট অনুধাবনে প্রয়াসী হয়েছেন।

অতিথি-শিল্পীদের মধ্যে দুজন ভাস্কর। নিরঞ্জন প্রধানের ব্রোঞ্জটিতে একজন সাঁপুড়ের বাঁশি বাজিয়ে সাপ খেলানোর প্রতিমাকল্প। বিমল কুণ্ডুর ভাস্কর্যে ধ্রুপদী তন্ময়তা জ্যামিতিক তল-বিভাজনের সৌকর্যে বিশেষ অভিঘাত সৃষ্টি করেছে। বাকি ন’জন চিত্রীর মধ্যে অন্ধ্রপ্রদেশের থোতা বৈকুণ্ঠম, কলকাতার বিশ্বপতি মাইতি ও ধীরেন শাসমল লৌকিক ও স্বদেশচেতনাদীপ্ত আঙ্গিকে কাজ করেছেন। পার্থ রায় নিসর্গ এঁকেছেন গাঠনিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে। বিরাজ কুমার পাল এঁকেছেন জলবিধৌত এক বনানীর নিসর্গ।

নির্বাচিত শিল্পীদের মধ্যে স্বাভাবিকতাবাদী আঙ্গিকে বিশেষ অভিঘাত সৃষ্টি করেছেন সৌগত মজুমদার, প্রতাপচন্দ্র চক্রবর্তী, শুভাশিস কুমার প্রমুখ। শুভাশিস এঁকেছেন জলহীন বিশুদ্ধতার এক নিসর্গ। রোদের তেজে ফেটে ফেটে গেছে তৃণহীন প্রান্তর।

তার উপর দিয়ে জলপাত্র নিয়ে জলের সন্ধানে ছুটে চলেছে একটি শিশু। স্বাভাবিকতাবাদী আঙ্গিকেই আধ্যাত্মিকতার উন্মীলন ঘটিয়েছেন স্বপন রায়। তাঁর ‘দ্য মায়েস্ট্রো অ্যান্ড হাউজ অব উইসডম’ ছবিতে সম্মুখপটে রয়েছে ধ্যানমগ্ন বুদ্ধের মূর্তি। পশ্চাৎপটে কুয়াশাময় এক নগরীর আভাস। এ ভাবেই মগ্ন প্রশান্তিকে ধরতে চেয়েছেন অনুরাধা হালদার ও ইন্দ্রাণী হালদার। স্বাভাবিকতাকেই ভাঙতে ভাঙতে নব্য-ভারতীয় ঘরানার অন্তর্মুখিনতার দিকে নিয়ে যান অনেকে। সুব্রত ঘোষের ‘ইনার আই’ ছবিটি এর একটি দৃষ্টান্ত। নব্য-ভারতীয় ঘরানার দর্শন এখনকার অনেক শিল্পীর কাজের মধ্যে নানা ভাবে প্রবাহিত হচ্ছে। অরিজিৎ বসু, বিনয় দলুই, বিশ্বজিৎ গুহ রায়, ময়নুল হাসান, মধুমিতা দাশগুপ্ত প্রমুখ শিল্পী এই আঙ্গিকে কাজ করেছেন। মধুমিতা-র ‘ইন্দাজ ভ্যালি সিভিলাইজেশন’ ছবিটি বিশেষ অভিনিবেশের দাবি রাখে। সিন্ধু সভ্যতার কিছু প্রতীক ও প্রতিমাকল্প সাজিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন তাঁর রচনাবন্ধ।

পাশ্চাত্য অভিব্যক্তিবাদী আঙ্গিকের সঙ্গে লৌকিক সারল্য মিশিয়ে অসামান্য কল্পরূপাত্মক ছবি করেছেন প্রদীপ চোধুরী। প্রদীপ মজুমদার ও চিন্ময় চক্রবর্তীর বিমূর্ত ছবিতে জ্যামিতিক তল-বিভাজন ও আলোছায়ার বৈপরীত্য খুবই কল্পনাদীপ্ত। অনির্বাণ শেঠ চামড়ার পটে ছবি এঁকেছেন।

এই প্রদর্শনীর মনুষ্যরূপী উড়ন্ত বিমানের ছবিটিতে কনসেপচুয়াল আর্টের কিছু লক্ষণ আছে।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy