Advertisement
E-Paper

দেশের কাপড়ে বিশ্বের নকশা

নিজের দেশ আর সংস্কৃতির প্রতি তাঁর প্রীতি অমলিন। খাদির সঙ্গে অবলীলায় বেনারসি মিশিয়ে অনবদ্য, ঋদ্ধ এক ক্যানভাস গড়ে তোলেন সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়।নিজের দেশ আর সংস্কৃতির প্রতি তাঁর প্রীতি অমলিন। খাদির সঙ্গে অবলীলায় বেনারসি মিশিয়ে অনবদ্য, ঋদ্ধ এক ক্যানভাস গড়ে তোলেন সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়।

শর্মিলা বসুঠাকুর

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৭ ০০:৪৫
ছবি: কুনাল বর্মণ

ছবি: কুনাল বর্মণ

ছোট্ট ছেলে। চন্দননগরে স্কুলে পড়ে। গরম কালে স্কুল থেকে ফেরার সময় ঈশান কোণে কালো মেঘ আর কালবৈশাখীর আগমন বার্তায় এক ছুটে বাড়ি। সাদা চুড়িদার, কুর্তা, চটি আর পুরনো একটা চশমা পরে ফের দৌড়য় গঙ্গার পাড়ে, জেটির দিকে। কুড়ি ফুট চওড়া নদীর ওপর জেটিতে দাঁড়িয়ে খোলা গলায় গেয়ে ওঠে সেই ছেলে ‘কারার ওই লৌহকপাট, ভেঙে ফেল কর রে লোপাট...’ ছেলেটির প্রিয় গান যে এটাই। আজ সে মস্ত হয়েছে, মহা নামডাক তাঁর। ৪৩ বছর বয়সেই খ্যাতির একেবারে শীর্ষে। ডিজাইনার সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়।

দেশের প্রতি, দেশজ জিনিসের প্রতি, স্বীয় সংস্কৃতির প্রতি আজও তাঁর প্রীতি অমলিন। সেই ভালবাসার প্রমাণ মেলে তাঁর কালেকশনেও। যেখানে অবলীলায় খাদির সঙ্গে বেনারসি, নেটের সঙ্গে ভেলভেট মিশিয়ে গড়ে তোলেন এক ঋদ্ধ ক্যানভাস। শাড়ি, লহেঙ্গা, পাশ্চাত্য পোশাক, সবেতেই তাঁর অবাধ অনায়াস গতি। ভারতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির শিকড়ের সন্ধানে তিনি উপস্থাপন করেন ‘পিলি কোঠি’-র মতো র‌্যাম্প শো। যেখানে তিনতালের ঠেকার সঙ্গে কথক নৃত্যের বোলপড়ন্ত, আর সেই ছন্দে ছন্দেই মডেল-কন্যাদের হেঁটে আসা।

ছেলেবেলায় কাঁকিনাড়া জুটমিলের কম্পাউন্ডে বড় ভাল সময় কেটেছে তার। শ্রী অরবিন্দ বিদ্যামন্দির স্কুলে কবিতার ক্লাস বেজায় পছন্দ ছিল। ভালবাসত রচনা লিখতে। মাধ্যমিকে দুর্দান্ত রেজাল্ট। তার পর পারিবারিক কারণে কলকাতায় চলে আসা। সেন্ট জেভিয়ার্স থেকে পাশ করে ন্যাশনাল স্কুল অফ ফ্যাশন টেকনোলজিতে ভর্তি হওয়া। মা-বাবার প্রাথমিক আপত্তি থাকলেও সব্যসাচীর ফ্যাশন ডিজাইনার হওয়া ছিল নিয়তি-নির্ধারিত। ছেলেবেলাতেই তাঁর জীবনের চিত্রনাট্য লেখা হয়ে গিয়েছিল। তা না হলে বাবার পাজামা দিয়ে জামার হাতা বানিয়ে কিং লিয়র নাটকের পোশাক বানায় এইটুকুন একটা বাচ্চা ছেলে! মায়ের শাড়ি টাঙিয়ে বাড়িতে নাটক করা কেনই বা হবে তার প্রিয় খেলা!

বাবার সঙ্গে হাত ধরে লেক মার্কেটে বাজার করতে গিয়ে মশলার দোকানের সামনে হাঁ করে দাঁড়িয়ে থাকত বাচ্চা ছেলেটা। উঁচু করে রাখা হলুদ, লঙ্কা, জিরেগুঁড়োর রং তার মাথার মধ্যে তালগোল পাকিয়ে দিত। কী এক অস্থিরতা! ঘানি ভাঙানো সর্ষের তেল কিনতে গিয়ে খোলের মোটা, খরখরে টেক্সচারে আপ্লুত হয়ে পড়ত ছেলেটা। এই আর্দিনেস-ই পরবর্তী কালে তাঁর কালেকশনের মূল মন্ত্র হয়ে দাঁড়ায়। বোন পায়েলের সঙ্গে কম্পিটিশন হত ছোটবেলায়, কে কত ভাল পোশাক ড্রয়িং করতে পারে।

ছেলেবেলায় প্রকৃতির মাঝে কাটানো মনটা আজও সজীব। তাই তাঁর বেশির ভাগ কালেকশনের প্রেরণা প্রকৃতি। মাটি পাতা ফুল থেকে ধার করা রং তাঁর ক্রিয়েশনের কালার প্যালেট। মানুষের মুখ, গানের সুরও তাঁকে উৎসাহিত করে। রিয়েল লাইফ সোর্স অব ইনস্পিরেশন হলে তা মনকে ছুঁয়ে যেতে বাধ্য। এটা তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস।

‘নিফট’ থেকে পাশ করে দুটো এগজিবিশন, তার পরেই নিজের লেবেল। বন্ধু সেলিনা জেটলি মিস ইন্ডিয়া কনটেস্টে যাবে, সব্যসাচী খাদির নানা রঙের কাপড়ের পট্টি জুড়ে স্কার্ট বানিয়ে ফেললেন। সঙ্গে হল্টার টপ, আর মাথায় পাগড়ি। চারিদিকে হইচই পড়ে গেল। এর পরেই ব্রিটিশ কাউন্সিল ও একটি নামী ইংরেজি পত্রিকার উদ্যোগে ট্রেনিংয়ের জন্য তাঁর লন্ডন যাত্রা।

ঘটনা এগিয়ে চলে আপন গতিতে। সিঙ্গাপুর, দিল্লি, মুম্বই ফ্যাশন উইক তো আছেই, ফ্যাশনের মক্কা মিলানে একমাত্র ভারতীয় ডিজাইনার হিসেবে আমন্ত্রিত হন। লন্ডন, নিউ ইয়র্কের সম্ভ্রান্ত ফ্যাশন শো-তেও আমন্ত্রিত হয়েছেন। দেশে বিদেশে বহু আমন্ত্রণ, পুরস্কার, শো। অগুনতি সম্মানে ভূষিত হয়েছেন।

সঞ্জয় লীলা ভংশালীর হাত ধরে ‘ব্ল্যাক’ ছবিতে প্রথম পোশাক পরিকল্পনা আর প্রথম পদক্ষেপেই জাতীয় পুরস্কার, শ্রেষ্ঠ পোশাক পরিকল্পনার জন্য। বলিউডের তাবড় তাবড় নায়িকা ও সুন্দরীরা সব্যসাচীর পোশাকে মহিমান্বিতা। তা বলে শুধু নারী ও পুরুষের পোশাকে থেমে থাকা নয়। সব্যসাচী বাচ্চাদের পোশাকও বানাতে শুরু করলেন। ভারতীয় পোশাকের কাট, টেকনিক ও আমাদের হ্যান্ডলুমের ঋদ্ধ ঐতিহ্যের প্রতি শিশুমনকে সংবেদী করে তুলতেই তাঁর এই প্রয়াস। সৃজনশীল মনের নকশার সঙ্গে ব্যবসার গাণিতিক গতিবিধির মেলবন্ধন বড়ই দুর্লভ, বিশেষ করে আমাদের দেশে। এ সমীকরণ বড় সহজ নয়। কিন্তু তিনি যে সব্যসাচী!

Poila Baisakh Special Poila Baisakh Celebration Bengali New Year Celebration Celebration Celebrities fashion designer Sabyasachi Mukherjee Sabyasachi Mukherji
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy