কোনও-মতে: ত্রিপল টাঙিয়ে বাস। রায়দিঘিতে তোলা নিজস্ব চিত্র
আমপানের তাণ্ডবের পরে প্রায় তিন সপ্তাহ কেটে গিয়েছে। ঝড়-বিধ্বস্ত বহু মানুষ এখনও ফিরতে পারেননি স্বাভাবিক জীবনযাত্রায়। ঘরবাড়ি হারিয়ে এখনও বাঁধের উপর বাস করছেন অনেকে। ভরসা বলতে শুধু একটা ত্রিপলের ছাউনি। কাকদ্বীপ মহকুমার একাধিক জায়গায় চোখে পড়ল এই ছবি।
রায়দিঘির মণিনদী-সহ কিছু নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় গ্রাম। এখনও জল সরেনি সর্বত্র। বাঁধের উপরে আশ্রয় নিয়ে আছেন অনেকে। নামখানা ব্লকের মৌসুনি পঞ্চায়েতে মুড়িগঙ্গা নদী বাঁধের উপরে ত্রিপল খাঁটিয়ে বাস করছে প্রায় ৭০টি পরিবার। ত্রিপলের ছাউনি থেকে বেরিয়ে এসে শেখ মোমরেজ, মোমিনা বিবি, শেখ তৈয়বরা বলেন, “আমপানের পর থেকেই এখানে আছি। ঘরের ভিতর এখনও জল। জোয়ার এলেই জল ঢুকছে। ফেরার জায়গা নেই।” স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ঝড়ের রাতে এই এলাকায় প্রায় ৩০০ মিটার বাঁধ ভেঙে যায়। নোনাজলে প্লাবিত হয় ঘরবাড়ি, চাষের জমি। বাধ্য হয়ে বাঁধের উপরে এসে আশ্রয় নেন সব-হারানো পরিবারগুলি। অভিযোগ, তারপর থেকে পরিস্থিতি বদলায়নি এতটুকুও। এখনও জলে ভাসছে ঘরবাড়ি। ফলে ত্রিপলের আশ্রয়েই কোনওরকমে দিন কাটছে। সরকারি সাহায্যও সে ভাবে মেলেনি বলেই জানাচ্ছেন বাঁধে বাস করা অধিকাংশ মানুষ। স্থানীয় বাগডাঙা গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য শম্পা মাইতি বলেন, “বাধ্য হয়েই ৭০টা পরিবার নদীবাঁধের উপর বসবাস করছে। বাঁধ সংস্কারের জন্য অর্থ পঞ্চায়েতের তহবিলে নেই।” পাথরপ্রতিমা ব্লকের রামগঙ্গা পঞ্চায়েতের মৃদঙ্গভাঙা নদীবাঁধের উপরেও এখনও বাস করছেন অনেকে। অভিযোগ, সরকারি ত্রাণ মেলেনি। খাবার-দাবার দেওয়া তো দূরের কথা, ত্রিপলের জন্য বারবার পঞ্চায়েতে ছুটেও খালি হাতে ফিরতে হয়েছে বলে অভিযোগ।
বাঁধের উপরে গিয়ে দেখা গেল দর্মার বেড়া, ত্রিপল চাপিয়ে কোনও রকমে মাথা গোঁজার ঠাঁই বানিয়ে নিয়েছেন সুব্রত দলুই, রাখি দলুইরা। রাখি বলেন, “আমপানের আগের দিন আমরা ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলাম। দু’দিন পরে ফিরে এসে দেখি ঘরের জিনিসপত্র সব ধুয়েমুছে সাফ। তারপর থেকেই কোনও রকমে ত্রিপল খাঁটিয়ে রয়েছি।”
কবে বাড়ি ফিরতে পারবেন জানেন না কেউই। সুব্রতর কথায়, “বর্ষা চলে এল। এখানে তো এ ভাবে থাকা যাবে না। এ দিকে, নদীবাঁধ যে ভাবে সংস্কার হচ্ছে বর্ষার জোয়ারের কোটাল এলেই আবার ভেঙে যাবে। আবার হয় তো ত্রাণ শিবিরেই আশ্রয় নিতে হবে।” ত্রাণ না মেলার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কাকদ্বীপের মহকুমাশাসক শৌভিক চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রিপল পাঠানো হয়েছে। তবুও যদি কোনও ভাবে কেউ না পায় তাঁরা সরাসরি ব্লক প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy