Advertisement
১১ মে ২০২৪
Coronavirus

নির্দেশকে থোড়াই কেয়ার, চলছে লুকোচুরি খেলা 

দিন দুয়েক আগের ঘটনা। বনগাঁ শহরের একটি রাস্তার কল থেকে জল নিতে এসেছিলেন এক যুবক। তাঁকে বাইরে দেখে আঁতকে উঠেছিলেন পরিচিতরা।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২০ ০২:২৬
Share: Save:

বাড়িতে বাড়তি ঘর নেই। তাই ১৪ দিনের কোয়রান্টিনের জন্য গাছকেই বেছে নিয়েছেন পুরুলিয়ার এক দল যুবক। গাছে মাচা বেঁধে তাঁদের দিন যাপনের ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। ওই যুবকেরা ভিনরাজ্যে কাজ করেন। পরিবার এবং পড়শিদের বিপদে ফেলতে চান না বলেই এমন সতর্কতা তাঁদের। কিন্তু দুই ২৪ পরগনার সতর্কতার ছবিটা কিন্তু এমন নয়। কেউ কেউ ১৪ দিনের নিয়ম মানলেও অধিকাংশই মানছেন না। তাতে করোনা-আতঙ্ক ছড়াচ্ছে এলাকায় এলাকায়।

দিন দুয়েক আগের ঘটনা। বনগাঁ শহরের একটি রাস্তার কল থেকে জল নিতে এসেছিলেন এক যুবক। তাঁকে বাইরে দেখে আঁতকে উঠেছিলেন পরিচিতরা। কারণ, ওই যুবক দিন কয়েক আগে দিল্লি থেকে ফিরেছেন। নিয়ম অনুযায়ী, তাঁর ১৪ দিন বাড়ি থাকার কথা। স্বাস্থ্যকর্মীরাও তাঁকে সেই পরামর্শ দিয়েছিলেন। এমন ঘটনা দুই জেলায় ঘটেই চলেছে। ভিনরাজ্য থেকে ফেরারা বনগাঁ মহকুমা হাসপাতাল, বাগদা গ্রামীণ হাসপাতাল, চাঁদপাড়া গ্রামীণ হাসপাতালে যাচ্ছেন। সেখানকার চিকিৎসকেরা তাঁদের ১৪ দিন বাড়িতে থাকার কথাই লিখে দিচ্ছেন। সেই কাগজ নিয়ে তাঁরা দিব্যি এলাকায় এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ। কেউ প্রশ্ন করলে হাসপাতালের কাগজ বের করে বলছেন, সেটাই তাঁর 'ফিট সার্টিফিকেট।' চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, রোগীরা ফিট সার্টিফিকেট দেওয়ার জন্য তাঁদের উপরে চাপ সৃষ্টি করছেন। রাজি না হলে গোলমালও হচ্ছে। দিন কয়েক আগে এমনই ঘটনা ঘটেছে চাঁদপাড়া ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালে। শেষে পরিস্থিতি সামলাতে হাসপাতালে ছুটতে হয় পুলিশকে।

গাইঘাটা ব্লকে সম্প্রতি জাপান ও চিন থেকে কয়েকশো মানুষ ফিরেছেন। তাঁদের অনেকেই বাড়ি না থেকে বাইরে ঘুরছেন বলে অভিযোগ। বাগদা ব্লকে ঘরে ফেরা লোকজনের অনেকেই ঘরবন্দি থাকছেন না বলে জানালেন এলাকার মানুষ। তাঁদের দাবি, এই অবস্থায় পুলিশ কড়া পদক্ষেপ করুক। বনগাঁর মহকুমাশাসক অশেষবিক্রম দস্তিদার কয়েকটি গ্রামে গিয়ে ভিনরাজ্য বা বিদেশ ফেরতদের কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়ে এসেছেন। বনগাঁর পুলিশ সুপার তরুণ হালদার বলেন, “পুলিশ নজরদারি চালাচ্ছে। পাশাপাশি সচেতনতার প্রচারও চলছে।” প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার মানুষ বনগাঁ মহকুমায় ফিরেছেন।হাসনাবাদের বিশপুর পঞ্চায়েতের বহু মানুষ ভিনরাজ্যে কাজ করেন। করোনা-আতঙ্কে তাঁরা সকলেই গাঁয়ে ফিরেছেন। প্রশাসনের সতর্কবার্তা উপেক্ষা করে গ্রামে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বাইলানি চরপাড়ায় বেঙ্গালুরু থেকে ফিরেছেন তিন যুবক। তাঁরা অবাধেই ঘুরছেন গ্রামে। অভিযোগ পেয়ে বিশপুর পঞ্চায়েতের সদস্য মৃণালকান্তি গিরি ও এক আশা কর্মী এবং কয়েকজন সিভিক ভলান্টিয়ার যুবকদের বাড়িতে যান। কিন্তু তাঁদের মধ্যে দু’জন যুবক বাড়িতে ছিলেন না। জানা যায়, তাঁরা বাজারে চুল কাটাতে গিয়েছে। তাঁদের পরিবারকে সচেতন করা হয়, যাতে তাঁরা আগামী ১৪ দিন বাড়ি থেকে না বের হন। এমনকী, পরিবারের অন্যদের থেকেও সম্পূর্ণ আলাদা থাকেন।

গত সোমবার সকাল থেকে ওই সব এলাকায় প্রশাসন মাইক নিয়ে প্রচার করা হচ্ছে, ভিনরাজ্য থেকে আসা যদি কেউ গ্রামে বাড়ির বাইরে বের হন, তা হলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা হবে। জ্বর, সর্দি, কাশি হলে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে যাওয়ারও পরামর্শ দেওয়া হয়। হাসনাবাদ থানার পুলিশ বিশপুর পঞ্চায়েতের প্রতিনিধি ও এক স্বাস্থ্যকর্মী ভিনরাজ্য থেকে আসা প্রায় ৫০ জনের বাড়িতে গিয়ে সরকারি নির্দেশ মেনে চলার কথা বুঝিয়ে বলেন। ছবিটা কার্যত একই রকম দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও। বাসন্তী, কুলতলিতে ভিনরাজ্য ফেরত অনেকেই সরকারি নির্দেশ মানছেন না বলে অভিযোগ উঠছে। সকাল-বিকেল আশা বা অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা খোঁজখবর নিয়ে চলে গেলেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ছেন অনেকেই। প্রশাসনের নজর এড়িয়ে অনেকে এলাকায় ফিরে এসেছেন বলেও অভিযোগ উঠছে বিভিন্ন জায়গায়। এমনকী, হাসপাতালে গিয়ে রুটিন চেকআপও করেননি তাঁরা। কুলতলি গ্রামীণ হাসপাতালের এক কর্মী জানান, অনেকেই চুপি চুপি এলাকায় ঢুকে পড়েছেন। আমরা হাসপাতালের তরফে এলাকায় গিয়ে খোঁজখবর করে বাড়ি গিয়ে পরীক্ষা করে এসেছি। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক পরিমল ডাকুয়া বলেন, “কিছু মানুষ একেবারেই সহযোগিতা করছেন না। তাঁদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE