Advertisement
১১ মে ২০২৪
Coronavirus in West Bengal

উত্তর ২৪ পরগনায় লম্বা হচ্ছে আক্রান্তদের তালিকা

এখনও পর্যন্ত বাইরে থেকে এলাকায় ফেরা বেশিরভাগ শ্রমিকের লালারস পরীক্ষা হয়নি এখনও। সেটাও চিন্তায় রেখেছে স্বাস্থ্য দফতরকে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০২০ ০৫:৫৭
Share: Save:

এক সপ্তাহে, এক লাফে ২৮৮ জন করোনা আক্রান্ত বাড়ল উত্তর ২৪ পরগনা জেলায়। গত এক সপ্তাহে জেলায় অন্তত পাঁচ হাজার পরিযায়ী শ্রমিক ফিরেছেন। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, নতুন আক্রান্তদের মধ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যাই বেশি। হিসেব বলছে, আক্রান্তদের সিংহভাগই মহারাষ্ট্র-ফেরত। এখনও পর্যন্ত বাইরে থেকে এলাকায় ফেরা বেশিরভাগ শ্রমিকের লালারস পরীক্ষা হয়নি এখনও। সেটাও চিন্তায় রেখেছে স্বাস্থ্য দফতরকে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার করোনা এবং পরিযায়ী চিত্রও তেমন সন্তোষজনক নয়। সেখানেও হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিক নিজের এলাকায় ফিরছেন। দুই জেলারই একটা বড় অংশ আমপানে তছনছ হয়ে গিয়েছে। একদিনে এলাকা পুনর্গঠন ও ত্রাণ বিলি। অন্যদিকে পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর নজরদারি। সব মিলিয়ে সাড়াশি চাপে রয়েছে প্রশাসনও। বেশিরভাগ এলাকায় ভিন্ রাজ্য থেকে ফেরা শ্রমিকেরা ইচ্ছেমতো এলাকায় ঘুরলেও প্রশাসনিক নজরদারি নেই বলে অভিযোগ। তবে স্থানীয় এলাকাতে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোলমাল বাধছে নিয়মিত। দুই জেলার প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত উত্তর ২৪ পরগনায় প্রায় ১৪ হাজার পরিযায়ী শ্রমিক ফিরেছেন। দক্ষিণে সেই সংখ্যা ৩০০৫।

গত এক সপ্তাহে বনগাঁ মহকুমায় ৩২ জন শ্রমিক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। দিন কয়েক আগে বনগাঁ শহরের রাস্তায় সাধারণ মানুষের পাশাপাশি হেঁটেছেন, দোকানে গিয়ে চা খেয়েছেন এক ঝাঁক পরিযায়ী শ্রমিক। ঘটনার পর আতঙ্কিত শহরবাসী। শ্রমিকেরা অবশ্য নিজের ইচ্ছায় বনগাঁ শহরে ঘোরেননি। তাঁদের যাওয়ার কথা ছিল বাগদা এবং গোপালনগরে। অভিযোগ সরকারি গাড়ি তাঁণদের বনগাঁ শহরে নামিয়ে দেয়। পরে নিজেরা যানবাহনের ব্যবস্থা করে বাগদা-গোপালনগরে ফিরছেন। শহরে অবশ্য পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য স্কুলে নিভৃতবাসে রাখা হচ্ছে। বনগাঁর পুরসপ্রশাসক মণ্ডলির চেয়ারম্যান শঙ্কর আঢ্য জানান, পরিযায়ী শ্রমিকদের নিজেদের এলাকায় পৌঁছে দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে প্রশাসনের কাছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে অভিযোগ আসছে, স্কুল থেকে বাইরে চলে আসছেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা।

গত এক সপ্তাহে বারাসাত হয়ে প্রচুর শ্রমিক বসিরহাটে পৌঁছেছেন। তবে গোল বেধেছে অন্য জায়গায়। বারাসত থেকে রওনা হওয়া বাস যখন নিভৃতবাস কেন্দ্রে পৌঁছচ্ছে তখন বাসপিছু গড়ে ১৫-১৬ জন শ্রমিককে পাওয়া যাচ্ছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, অধিকাংশ শ্রমিক মাঝপথে নেমে পড়ে বাড়ির দিকে হাঁটা দিচ্ছেন। তাঁদের চিহ্নিত করে নজরবন্দি করা বা নিভৃতবাস কেন্দ্রে আনাটাই প্রশাসনের কাছে চ্যালেঞ্জ। তাঁদের লালারস কী করে সংগ্রহ করা যাবে, তার কোনও সদুত্তর মেলেনি প্রশাসনের কাছ থেকে। গত এক সপ্তাহে মোট ১২ জন পরিযায়ী শ্রমিকের করোনা রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে।

গত সাতদিনে মিনাখাঁয় প্রায় ৫০০ পরিযায়ী ফিরেছেন। এর মধ্যে লালারস সংগ্রহ হয়েছে ১২১ জনের। ৯ জনের রিপোর্ট এলেও কেউ পজিটিভ নন। স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, সব পরিযায়ী শ্রমিকের লালারস সংগ্রহ করা হচ্ছে না। উপসর্গ দেখা গেলে তবেই লালারস সংগ্রহ করা হচ্ছে। হাসনাবাদ ব্লকে গত সাতদিনে কয়েকশো মানুষ ভিনরাজ্য থেকে ফিরেছেন। লালারস সংগ্রহ হয়েছে ১৮৫ জনের। কেউই আক্রান্ত নন। সন্দেশখালিপর দুটি ব্লকে শতাধিক পরিযায়ী শ্রমিক ফিরলেও এখনও লালারস সংগ্রহ হয়নি।

দিনকয়েক আগে কাকদ্বীপ মহকুমার নামখানা ও পাথরপ্রতিমায় তিন জন পরিযায়ী শ্রমিকের করোনা-রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। এই সব এলকায় পরিযায়ী শ্রমিকেরা নিভৃতবাস কেন্দ্রে না গিয়ে ঘরে ফিরতে চাইলে বাধা দিচ্ছেন পড়শিরা। তার ফলে গোলমাল বাধছে। বিভিন্ন রাজ্য থেকে রোজই পরিযায়ী শ্রমিকের দল এসে পৌঁছচ্ছে কুলতলিতে। প্রশাসন জানিয়েছে, তামিলনাড়ু, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, মহারাষ্ট্র ও দিল্লি থেকে ফেরা শ্রমিকদের নিভৃতবাস কেন্দ্রে পাঠানো হচ্ছে। বাকিদের গৃহ-নিভৃতবাসে রাখা হচ্ছে।

দিন চারেক আগে ক্যানিংয়ে একজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি মহারাষ্ট্র থেকে এলাকায় ফিরেছিলেন। বাসন্তী ব্লকে গত কয়েকদিনে দু’ হাজারের বেশি পরিযায়ী শ্রমিক ফিরেছেন। এই ব্লকে ও তিনজনের করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সম্প্রতি বিহার থেকে গোসাবার পাঠানখালিতে ফেরা এক ব্যক্তিও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। গত কয়েকদিনে প্রায় ১৩০০ পরিযায়ী শ্রমিক এলকায় ফিরেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in West Bengal Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE