বাজার বন্ধের আগে অটোতে চলছে প্রচার। ছবি: নির্মল বসু
আক্রান্তের সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়েছে। শেষ এক সপ্তাহে সংক্রমিত হয়েছেন প্রায় ১০০। রোজই বসিরহাট মহকুমার বিভিন্ন এলাকা থেকে সংক্রমণের খবর আসছে। এই অবস্থায় আগামী ৬ দিনের জন্য শহরের সব বাজার-হাট বন্ধের সিদ্ধান্ত নিল বসিরহাট পুরসভা এলাকার ব্যবসায়ীরা। তবে ওষুধ-সহ জরুরি পরিযেবা সচল রাখা থাকবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। একই সঙ্গে বসিরহাট শহরে সব রকম সুবিধা যুক্ত একটি কোভিড হাসপাতালের দাবি জোরদার হচ্ছে। কারণ আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও মহকুমায় তাঁদের চিকিৎসা মিলছে না।
বসিরহাট পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান তপন সরকার বলেন, “পুর এলাকায় যে ভাবে করোনা-সংক্রমণ শুরু হয়েছে, তাতে ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত। সরকারি ভাবে ঘোষণা না হলেও তাঁরা নিজেরাই লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।”
বসিরহাট মহকুমার জনসংখ্যা ১৭ লক্ষ। বসিরহাট শহরের অদূরে একটি নার্সিংহোমকে অস্থায়ী কোভিড হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সেখানে ২৩টি শয্যা রয়েছে। তপন বলেন, “পুর এলাকায় এক দিনে ১৫ জন করোনা পজ়িটিভ হয়েছেন। গত কয়েক দিনে পুরসভার ২৩টি ওয়ার্ডে আক্রান্ত হয়েছেন ১০৪ জন। মারা গিয়েছেন ৬ জন। বসিরহাট শহরে যে ভাবে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, তাতে দ্রুত আরও কয়েকটি কোভিড হাসপাতাল জরুরি।” তপন জানান, বিষয়টি খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নজরে আনায়, তাঁর নির্দেশে পুলিশ-প্রশাসন, বিধায়ক, চিকিৎসকদের নিয়ে কোভিড হাসপাতাল নিয়ে একটি বৈঠক করা হয়েছে। বসিরহাট স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “বসিরহাটে আক্রান্ত ৫২৮ জনের মধ্যে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ৯৪ জন পরিযায়ী শ্রমিকের করোনা রিপোর্ট পজ়িটিভ এসেছে। এখনও পর্যন্ত সুস্থ হয়ে ৩৫৬ জন বাড়ি ফিরেছেন। আট হাজারের বেশি মানুষের লালারসের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।” চিকিৎসকেরা স্বীকার করছেন, আক্রান্তের সংখ্যা যে ভাবে বাড়ছে, তাতে রোগীর চাপ সামাল দেওয়া আগামী দিনে মুশকিল হবে। এই মুহূর্তে মহকুমার ৭৩ জন করোনা-আক্রান্তের চিকিৎসা চলছে বারাসত ও কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালে। বাড়িতে রেখে চিকিৎসা চলছে ৭৮ জনের।
বসিরহাট পুরাতন বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক বিশ্বনাথ দেবনাথ বলেন, “বাজারের চাল, আলু, পান এবং চানাচুর বিক্রেতার করোনা ধরা পড়েছে। আরও কয়েকজন ব্যবসায়ী অসুস্থ। লকডাউন করলে কিছুটা হলেও সংক্রমণ কমবে এই আশায় ছ’দিন জরুরি পরিষেবা চালু রেখে পুর এলাকার সব হাট-বাজার বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’ শহরের বাসিন্দা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বপ্না মুখোপাধ্যায় বলেন, “দোকান বাজার বন্ধ করলে অনেক মানুষের অসুবিধা হবে ঠিকই, তবে এর ফলে যদি সংক্রমণ কমে, তবে তা করাই উচিত।”
সংক্রমণের সংখ্যা বৃদ্ধিতে উদ্বিগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের দাবি বসিরহাট শহরে সব রকম পরিকাঠামো-সহ একটি কোভিড হাসপাতাল তৈরি করা হোক। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলিও একই দাবিতে প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি জমা করেছে। প্রশাসনের তরফে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। সংক্রমণ যে হারে বাড়ছে, পূর্ণাঙ্গ কোভিড হাসপাতাল মহকুমায় না থাকলে রোগীদের নিয়ে সমস্যায় পড়তে হবে বলে মনে করছেন জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বৈঠকে সকলেই এই বিষয়ে একমত হন যে, অবিলম্বে একটি পূর্ণাঙ্গ কোভিড হাসপাতাল না হলে আগামী দিনে বিপর্যয় শুরু হতে পারে। এই অবস্থায় বসিরহাট সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালটি অন্যান্য রোগীদের জন্য রেখে জেলা হাসপাতালটিকে কোভিড হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার করা যায় কিনা তা নিয়ে সরকারের কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয়।
তবে বিষয়টিতে চিকিৎসকেদের তেমন সমর্থন নেই। তাঁরা মনে করছেন, জেলা হাসপাতালকে কোভিড হাসপাতালে পরিণত করা হলে অন্যান্য রোগীদের চিকিৎসায় সমস্যা হতে পারে। বিষয়টি নিয়ে আরও আলোচনা চেয়েছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy