Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

স্বীকৃতির অভাবে যোগ ছাড়তে  চলেছেন জাতীয় স্তরে সোনাজয়ী 

ভাল করে হাঁটতে পারত না সে। ছিল রক্তাল্পতা। ডাক্তার বলেছিলেন, ওষুধে নয়, নিয়মিত শরীরচর্চা ও যোগাসনেই রোগ সারবে। বাগদার মামাভাগিনা গ্রামের সঞ্চয়িতা চক্রবর্তীর বয়স তখন সাত বছর।

যোগচর্চা: সঞ্চয়িতা চক্রবর্তী।

যোগচর্চা: সঞ্চয়িতা চক্রবর্তী।

নির্মাল্য প্রামাণিক
বাগদা শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:০৭
Share: Save:

ভাল করে হাঁটতে পারত না সে। ছিল রক্তাল্পতা। ডাক্তার বলেছিলেন, ওষুধে নয়, নিয়মিত শরীরচর্চা ও যোগাসনেই রোগ সারবে। বাগদার মামাভাগিনা গ্রামের সঞ্চয়িতা চক্রবর্তীর বয়স তখন সাত বছর। সেই থেকে তার যোগশিক্ষা শুরু।

প্রথমে চার বছর বনগাঁর সুভাষপল্লিতে বিদিশা চক্রবর্তীর কাছে শিখেছেন। পরে আরও চার বছর হাবড়ায় বিপ্লব আইচের কাছে। তারপর বাড়িতেই করে চলেছেন অনুশীলন। এখন সঞ্চয়িতা সুস্থ।

কিন্তু নিজের সুস্থতার পরই থেমে যাননি বছর চব্বিশের সঞ্চয়িতা। এ বার তিনি এলাকার শিশুদের যোগচর্চার মাধ্যমে সুস্থ থাকার প্রশিক্ষণ দিয়ে চলেছেন। নিজেও বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে পুরস্কার আনছেন। তাঁর ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেও অনেকে জেলাস্তরের প্রতিযোগিতায় পুরস্কার ছিনিয়ে আনছেন।

জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় সঞ্চয়িতার প্রথম সাফল্য আসে ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে বেঙ্গালুরুতে। সেখানে চতুর্থ হয়েছিলেন তিনি। সেই বছরই নভেম্বরে রাঁচিতে প্রথম হন। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে গাজিয়াবাদে প্রথম স্থান অর্জন করেন। সম্প্রতি পঞ্জাবের পাতিয়ালায় ‘যোগা ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া’ আয়োজিত প্রতিযোগিতায় ২৫-৩৫ বছরের বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন তিনি।

২০১৭ সালে সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত ‘এশিয়ান যোগা ফেডারেশন’ আয়োজিত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ১২টি দেশের প্রতিযোগীদের মধ্যে দ্বিতীয় হয়ে সঞ্চয়িতা প্রথম আন্তর্জাতিক স্তরে সাফল্যের মুখ দেখেন। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ওই প্রতিযোগিতার আসর বসেছিল কেরলে। সেখানেও ৯টি দেশের প্রতিযোগিদের মধ্যে চতুর্থ হয়েছেন।

সঞ্চয়িতার বাবা সাধন চক্রবর্তী মামাভাগিনায় মুদিখানা দোকান চালান। সঞ্চয়িতা তিন ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয়। দিদি সঙ্গীতার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ভাই সুনয়ন মেক্যানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ডিপ্লোমা শেষ করে বাবাকে দোকানের কাজে সাহায্য করেন।

সঞ্চয়িতা বলেন, ‘‘মা-বাবা ছাড়া কারও সহযোগিতা পাইনি। বহু জায়গায় দরবার করেও সরকারি বা বেসরকারি কোনও সাহায্যই কপালে জোটেনি। যোগব্যয়াম ভালবাসি, কিন্তু এ বার হয়তো বাধ্য হয়েই ছাড়তে হবে।’’ প্রায় একই রকম সুর শোনা গেল সঞ্চয়িতার বাবার গলায়। মেয়ের অনুশীলনের খরচ বা কোনও প্রতিযোগিতায় দেশে-বিদেশে যাওয়ার খরচ নিজেদেরই বইতে হয় বলে জানাচ্ছেন সাধনবাবু।

তিনি বলেন, ‘‘ওর সাফল্যে গর্ববোধ করি। পুরস্কারও জিতছে। কিন্তু অন্য রাজ্যে যোগাসনে জাতীয় স্তরে পুরস্কার পেলে মেয়েরা যেমন চাকরি পাচ্ছেন, এ রাজ্যে যোগাসনে তেমন কোনও সুযোগ নেই।’’ হতাশ সাধনবাবু আরও জানান, দেশে-বিদেশে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় মেয়েকে পাঠাতে গিয়ে তাঁর জমানো পুঁজি প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছে। সঞ্চয়িতার ঠিকঠাক কাজের কোনও যোগাযোগ এ বার না হলে তিনি তাঁর বিয়ে দেওয়ার কথাও ভাবছেন বলে জানালেন।

ভিন রাজ্য থেকে মোটা মাইনের চাকরির প্রস্তাব অবশ্য একবার এসেছিল। কিন্তু সে কাজ চুক্তিভিত্তিক বলে সঞ্চয়িতা নিজেই তা করতে রাজি হননি। অন্য রাজ্যে তাঁকে পাঠাতে পরিবারের আপত্তি ছিল বলেও জানিয়েছেন সঞ্চয়িতা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sports Yoga Gold Medalist
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE