প্রতীকী ছবি।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত অশোকনগরের এক তৃণমূল নেতার মৃত্যু হল বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে। বুধবার রাতে তিনি মারা গিয়েছেন।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ৭০ বছরের ওই নেতার বাড়ি অশোকনগর- কল্যাণগড় পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে। তাঁর ছেলে যুব তৃণমূলের নেতা। অভিযোগ, শাসক দলের নেতা হয়েও তাঁকে বাড়ি থেকে কোভিড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি অ্যাম্বুল্যান্স পেতে নাজেহাল হতে হয়েছিল। অ্যাম্বুল্যান্স পেতে ৭ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। মৃতের পরিবারের সদস্যেরা মনে করছেন, অ্যাম্বুল্যান্স দ্রুত পাওয়া গেলে কোভিড হাসপাতালে তাঁকে তাড়াতাড়ি ভর্তি করা যেত। সে ক্ষেত্রে হয় তো প্রাণে বাঁচানো সম্ভব ছিল। এই ঘটনায় অশোকনগর-কল্যাণগড় পুর এলাকায় করোনা আক্রান্তদের জন্য অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবার পরিস্থিতি ফুটে উঠেছে বলে মনে করছেন স্থানীয় মানুষজনও।
অশোকনগরের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক শর্মিষ্ঠা দত্ত বলেন, ‘‘এই মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। একজন তৃণমূল নেতার যদি অ্যাম্বুল্যান্স পেতে এমন সমস্যা হয়, তা হলে সাধারণ মানুষের কী পরিস্থিতি হবে! আমাদের দাবি, অবিলম্বে পুরসভাকে করোনা রোগীদের জন্য জরুরি প্রয়োজনে অ্যাম্বুল্যান্স ও চালকের ব্যবস্থা করতে হবে।’’
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন ওই বৃদ্ধ। বাড়িতে ওষুধ খেয়েও শারীরিক উন্নতি না হওয়ায় ৩০ জুলাই তাঁকে অশোকনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৩১ জুলাই সেখানে তাঁর লালারস সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় কলকাতায়। ১ অগস্ট বৃদ্ধকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। ২ অগস্ট সকালে রিপোর্ট আসে, তিনি করোনা পজ়িটিভ।
প্রথমে তাঁকে বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা শুরু হয়। কিন্তু ২ অগস্ট দুপুরের পর থেকে অক্সিজেনের মাত্রা নেমে যেতে থাকে। বিকেল ৪টের সময়ে বাড়িতেই তাঁকে অক্সিজেন দেওয়া হয়। চিকিৎসকেরা জানান, তাঁকে কোভিড হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। রাজারহাট-নিউটাউন কোভিড হাসপাতালে বেড বুক হয়।
এরপর থেকে অ্যাম্বুল্যান্স পাওয়ার হয়রানি শুরু বলে পরিবারের অভিযোগ। পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলর অতীশ সরকার যোগাযোগ করেন বারাসতে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কন্ট্রোল রুমে। বৃদ্ধের ছেলে সুমনও বিকেল ৪টে নাগাদ জেলা কন্ট্রোল রুমে ফোন করেন।
তাঁকে জানানো হয়, অ্যাম্বুল্যান্স বাড়ি পৌঁছে যাবে। তাঁকে চালক ফোন করে নেবেন। ৬ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও অ্যাম্বুল্যান্সের খোঁজ মেলেনি। প্রাক্তন কাউন্সিলর অতীশ সরকার, প্রাক্তন বিধায়ক শর্মিষ্ঠা দত্ত, বিজেপি নেতা স্বপন দে সকলে মিলে একটি অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করে আনার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
রাত ১০টা নাগাদ বৃদ্ধের ছেলে যোগাযোগ করেন পুরপ্রশাসক প্রবোধ সরকারের সঙ্গে। মৃতের ছেলে বলেন, ‘‘পুরপ্রশাসক আমাকে পুরসভার এক অ্যাম্বুল্যান্স চালকের ফোন নম্বর দিয়ে যোগাযোগ করতে বলেন। সেই নম্বরে ফোন করে চালক অনুরোধ করি বাবাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এটাও বলি, রোগীকে ধরতে হবে না। শুধু অ্যাম্বুল্যান্স চালালেই হবে। তবুও তিনি যেতে রাজি হননি। পুরপ্রশাসককে সে কথা জানালে তিনি আর এক চালকের নম্বর দিলেন। সেই ফোন বন্ধ ছিল।’’ রাত ১১ নাগাদ জেলা কন্ট্রোল রুমের এক চালক ফোন করে ছেলেকে জানান, তিনি হাবড়ায় রয়েছেন। কিছুক্ষণ পরেই আসছেন। ছেলের কথায়, ‘‘তিনি আসার পরে বাবাকে রাজারহাটে নিয়ে যায়। পর দিন তাঁকে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। ব্যবস্থা করে দেন প্রাক্তন বিধায়ক শর্মিষ্ঠা। সেখানেই বুধবার রাতে তিনি মারা যান।’’
বৃদ্ধের ছেলের আক্ষেপ, ‘‘তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকেই বাবা দল করেন। দীর্ঘ দিন ওয়ার্ডের সভাপতি ছিলেন। ২১ জুলাই দলের পতাকা তুলেছেন। মা তৃণমূলের হয়ে পুরসভার ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন। আর বাবার জন্য একটি অ্যাম্বুল্যান্স পেতে পুরপ্রশাসকের হাতেপায়ে ধরেছি। তিনি ব্যবস্থা করে দেননি। দ্রুত বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারলে হয় তো বাবাকে হারাতে হত না।’’
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরসভার ৩টি অ্যাম্বুল্যান্স রয়েছে। একটি অ্যাম্বুল্যান্স করোনা রোগীদের নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়। পুরসভায় ২ জন স্থায়ী অ্যাম্বুল্যান্স চালক আছেন। বাকি কয়েকজন অস্থায়ী। করোনা রোগীদের অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য স্থায়ী চালকদের কাজে লাগানো হয়।
পুরপ্রশাসক বলেন, ‘‘দু’জন স্থায়ী চালকের মধ্যে শারীরিক কারণে একজন পিপিই পরতে পারেন না। অন্যজন রোগী নিয়ে যান।’’ তাঁর কথায়, ‘‘২ অগস্ট আমি চেষ্টা করেও চালককে পাঠাতে পারিনি। তিনি প্রথমে ফোন ধরেননি। পরে ফোনের সুইচ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ভবিষ্যতে যাতে দ্রুত অ্যাম্বুল্যান্স পেতে অসুবিধা না হয়, তা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’
মৃতের ছেলে গোটা ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘‘অ্যাম্বুল্যান্স চালককের উপরে পুরপ্রশাসক এতটুকু কর্তৃত্ব থাকবে না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy