Advertisement
১১ মে ২০২৪
কল্যাণী

জেলাতে শান্ত রাখতে কৌশলী হচ্ছে পুলিশ

বড় রাস্তার মোড়ে পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ। অবস্থা সুবিধে নয় ভেবে মোটরবাইক ঘুরিয়ে অন্য পথ খুঁজছিলেন বীজপুরের রাজেন্দ্র যাদব। হঠাৎ অসময়ের বন্ধু হিসেবে রূপে দেখা দিল মুসকো চেহারার এক যুবক। কোন পথে গেলে কল্যাণী পর্যন্ত কোনও হ্যাপা ছাড়াই যাওয়া যাবে তারই সুলুকসন্ধান বলে গেল গড়গড়িয়ে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৬ ০১:০৪
Share: Save:

বড় রাস্তার মোড়ে পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ। অবস্থা সুবিধে নয় ভেবে মোটরবাইক ঘুরিয়ে অন্য পথ খুঁজছিলেন বীজপুরের রাজেন্দ্র যাদব। হঠাৎ অসময়ের বন্ধু হিসেবে রূপে দেখা দিল মুসকো চেহারার এক যুবক। কোন পথে গেলে কল্যাণী পর্যন্ত কোনও হ্যাপা ছাড়াই যাওয়া যাবে তারই সুলুকসন্ধান বলে গেল গড়গড়িয়ে। খানিক এগিয়ে রাস্তাও দেখিয়ে দিল। পুলিশকে ঘোল খাওয়ানোর আনন্দে গোঁফ মুচড়ে নিজের মনে হাসতে হাসতে এগোলেন রাজেন্দ্র।

কিন্তু একি! গলি আগলে দাঁড়িয়ে যেন সাক্ষাত যমদূত। শুধু পুলিশে রক্ষে নেই, দোসর জওয়ানও। আর পালাবার জো নেই। বাধ্য হয়ে মোটরবাইক থামাতে হয়। তল্লাশি থামিয়ে মিলল দু’টি পিস্তল, সঙ্গে ছয় রাউন্ড গুলি।

রাজেন্দ্রর নম্বরপ্লেটহীন গাড়িটি এখন কল্যাণী থানায়। আর তার ঠাঁই হয়েছে শ্রীঘরে। আর যাঁর কথা শুনে বড় রাস্তা ছেড়ে গলি ধরে এগিয়েছিল তিনি আর কেউ নন, কল্যাণী থানার এক পুলিশকর্মী!

শুধু রাজেন্দ্র নয় পুলিশের এমন ফাঁদে পা দিয়ে আঙুল কামড়াচ্ছে আড়াইশোরও বেশি দুষ্কৃতী। কল্যাণীর এসডিপিও কৌস্তভদীপ্ত আচার্য জানালেন, ‘‘এটা ছিল তল্লাশি চালানোরই একটি অঙ্গ। পুলিশের জালে এ ভাবেই একে একে দুষ্কৃতীরা ধরা পড়ছে। উদ্ধার হয়েছে গাঁজা-সহ অন্যান্য নেশার দ্রব্য। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ২৫৮টি নম্বরপ্লেটহীন গাড়ি।’’

ভোটের সময় কল্যাণী, গয়েশপুর, হরিণঘাটা, চাকদহ পুলিশ এবং নির্বাচন কমিশনের মাথা ব্যাথার অন্যতম কারণ। এই সময় এই সব এলাকায় সমাজ বিরোধীদের দাপট বরাবর বেড়ে যায়।

কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়েও যে সব রাস্তায় তল্লাশি চালানো সম্ভব নয়, তা বুঝেছিল পুলিশ। তখনই ঠিক হয় পুলিশকর্মীদের দিয়েই বিভ্রান্ত করা হবে। যে রাস্তায় পুলিশ রয়েছে, সেই রাস্তাতেই যাতে দুষ্কৃতীদের টেনে আনা যায়। সেই জন্যই পুলিশ দেখে পালিয়ে যাওয়া সমাজবিরোধীদের পথ দেখিয়ে জালে ফেলবে পুলিশ কর্মীরাই!

শুধু কল্যাণী নয় সীমান্ত জেলা নদিয়াকে ভোটের মুখে শান্ত রাখতে নানা পদক্ষেপ করেছে জেলা প্রশাসন। জেলার ২২টি থানা এলাকার ৬৬টি জায়গায় নাকা তল্লাশির ব্যবস্থা করা হয়েছে। নির্বাচন ঘোষণার পর ওই ৬২টি জায়গায় বিভিন্ন সময় গাড়ি আটকাতে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। নির্বাচনে নজরদারির জন্য গড়া হয়েছে স্ট্যাটিক সার্ভিলেন্স টিম নামে এক বিশেষ দল। এ বারে নাকা তল্লাশির পাশাপাশি জেলায় রেগুলেটেড মার্কেট কমিটির চারটি চেকপোস্ট, সীমান্ত এলাকা গেদে, জেলাশাসকের অফিস, সার্কিট হাউস-সহ বিভিন্ন জায়গায় সিসিটিভি লাগাচ্ছে প্রশাসন। সিসিটিভির মাধ্যমেও জেলায় নজরদারি চালাবে প্রশাসন।

জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, চাপড়ার লক্ষ্মীগাছা হুদাপাড়া দুষ্কৃতী উপদ্রুত এলাকা। সেখানে নাকা পয়েন্ট করা হচ্ছে।

দুষ্কৃতী উপদ্রুত হওয়ায় চাপড়ার গয়ালডাঙা ঢাল, ধুবুলিয়ার সোনাতলামোড়, মুরুটিয়ার বালিডাঙ্গা মধুপুর মোড় নাকা পয়েন্ট করা হয়েছে। এ ছাড়াও বর্ধমান, হুগলি, মুর্শিদাবাদ ও উত্তর ২৪ পরগণার সীমান্তে একাধিক জায়গায় নাকা পয়েন্ট করা হচ্ছে।

সিসিটিভি বসানো হবে নবদ্বীপের রামচন্দ্রপুর, হরিণঘাটার বিরহি, চাপড়ার দইয়েরবাজার ও চাকদহের বিষ্ণুপুরে। তা ছাড়াও গেদে সীমান্তে সিসিটিভি লাগানো হচ্ছে। এই সব এলাকার ওপর দিয়ে বিভিন্ন জেলার যানবাহন যাতয়াত করে।

সিসিটিভি লাগানোর ফলে যানবাহনের ওপরে যেমন নজরদারি চালানো যাবে, তেমনি নির্বাচনের কাজে যুক্ত স্ট্যাটিক সার্ভিলেন্স টিম থেকে শুরু করে ফ্লাইং স্কোয়াড টিম ঠিকমতো কাজ করছে কি না তাও নজরদারি করা যাবে।

নদিয়ার জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, “নির্বাচন ঘোষণার পর থেকে জেলার ৬২টি জায়গায় নাকা চেকিং করা হচ্ছে। ভিডিওগ্রাফিও হচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় সিসিটিভি লাগিয়ে সব সময় নজরদারি চালানো হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

election assembly election 2016 peace police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE