Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

মাছ পুড়িয়ে দিল দুষ্কৃতীরা

কয়েক বিঘা জমির উপর তৈরি বাজারটি একটি ঘেরা জায়গার ভিতরেই। মাথার উপর রয়েছে টিনের চাউনি। অনেকে বিক্রেতাই বাজারের ভিতর সামগ্রী রেখে চলে যান।

ভস্মীভূত: এ ভাবেই পোড়ানো হয়েছে মাছ। নিজস্ব চিত্র

ভস্মীভূত: এ ভাবেই পোড়ানো হয়েছে মাছ। নিজস্ব চিত্র

প্রকাশ পাল
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৮ ০০:১৫
Share: Save:

চুরির অভিযোগ উঠছিল দীর্ঘদিন‌ ধরেই। এ বার শ্রীরামপুর টিনবাজারে মাছ পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল। মঙ্গলবার রাতের ঘটনা। বুধবার সকালে ঘটনার কথা জানাজানি হলে বিক্ষোভ দেখান ব্যবসায়ীরা। পুলিশে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, রাত হলেই বাজার চত্বরে মদ-গাঁজার আসর বসে। নানা জিনিস চুরি হয়। পুলিশকে জানিয়েও লাভ হয়নি। অথচ বাজারের পাশেই থানা। আদালত, পুলিশের একাধিক আধিকারিকের কার্যালয়, মহকুমাশাসকের দফতর-সহ বিভিন্ন প্রশাসনিক দফতর ঢিল ছোড়া দূরত্বে।

কয়েক বিঘা জমির উপর তৈরি বাজারটি একটি ঘেরা জায়গার ভিতরেই। মাথার উপর রয়েছে টিনের চাউনি। অনেকে বিক্রেতাই বাজারের ভিতর সামগ্রী রেখে চলে যান। অভিযোগ, বুধবার সকালে বাজারে এসে দেখা যায়, মহম্মদ আশরাফ নামে এক ব্যবসায়ীর বেশ কয়েকটি রুই মাছ উধাও। বেশ কয়েকটি মাছ পুড়ে গিয়েছে। আশরাফ বলেন, ‘‘চল্লিশ কেজি মাছ ছিল। অনেকগুলো চুরি করে নিয়েছে দুষ্কৃতীরা। বাকিগুলোতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। চুরি প্রায়ই হয়। কিন্তু মাছগুলো পুড়িয়ে কেন দিল, বুঝতে পারছি না।’’

শুধু মাছ নয়, গোবিন্দ সাউ নামে এক ব্যবসায়ীর অভিযোগ, দিন কয়েক আগে তাঁর ওজন মাপার যন্ত্র চুরি যায়। প্রাণগোবিন্দ দত্ত কয়েক দশক ধরে চাল এবং আনাজ বিক্রি করেন ওই বাজারে। তাঁর কথায়, ‘‘রাতে বাজার বন্ধ হয়ে গেলে এখানে অসামাজিক কাজকর্ম হয়। বাড়ি ফিরে ভয়ে থাকি, এই বুঝি চুরি হল।’’

অনেকেরই অভিযোগ, রাতে স্থানীয় কিছু যুবক বহিরাগতদের নিয়ে এসে মদ-গাঁজার আসর বসায়। টিনবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক তারক দাস বলেন, ‘‘পুলিশ দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক।’’

ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, বাজারের জমির মালিক স্থানীয় পুরসভা। কয়েক বছর আগে এখানে প্রোমোটিংয়ের চেষ্টা হয়। ব্যবসায়ীদের আন্দোলনে তা অবশ্য করা যায়নি। অনেকে আবার সন্দেহ করছেন, এর পিছনে ওই কারবারিদের হাত থাকতে পারে। এক ব্যবসায়ীর বক্তব্য, ‘‘ভিতরে ভিতরে সেই চেষ্টা চলছে কি না, সে কারণেই তাণ্ডব কি না, জানি না।’’ শ্রীরামপুর কেন্দ্রীয় ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক অম্বিকা মান্না বলেন, ‘‘এখানে প্রায় আড়াইশো ব্যবসায়ী আছেন। দুষ্কৃতীদের বাড়বাড়ন্তে তাঁরা আতঙ্কিত। আগুনে আরও বড় ঘটনা ঘটতেই পারত।’’

৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেখাদেবী সাউ বলেন, ‘‘ঘটনার কথা শুনেছি। ওখানে কিছু সমস্যা আছে। পুরপ্রধান অমিয় মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলব। রাতে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থাও করছি আমরা।’’ চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের অবশ্য দাবি, ওই বাজারে মদ-গাঁজার ব্যাপারে কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি। তবে পুলিশ সেখানে নিয়মিত টহলদারি চালাবে। চুরি বন্ধের চেষ্টা করা হবে। পুলিশের বক্তব্য, কেউ আগুন লাগিয়ে দিয়েছে, না কি কোনও ভাবে লেগে গিয়েছে তা দেখা হচ্ছে।

আঞ্চলিক ইতিহাস নিয়ে যাঁরা চর্চা করেন তাঁদের বক্তব্য, টিনবাজারের ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। দুই শতক আগে ডেনমার্কের উপনিবেশের সময় তৎকালীন গভর্নর ওলিবির আমলে প্রায় ছয় বিঘা জমিতে বাজারটি তৈরি হয়। বিদেশি কারিগরিতে লোহার কাঠামো দিয়ে বাজারটি গড়া হয়। বাজারের পাশাপাশি বড় বড় গুদামও করা হয়েছিল। গুদামের ছাদ ছিল টিনের। ডেনিসরা বাজারটির নাম দিয়েছিলেন ‘ক্রাউন বাজার’। পরে তা টিনবাজার হয়ে যায়। অনেকেই মনে করেন, টিনের চাল থেকেই এই নাম। এখন গুদাম ঘরগুলি নেই। তবে মূল বাজারটি থেকে গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fish Burn Criminal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE