ছবি এএফপি।
কেউ ট্রাই-সাইকেল ঠেলে নিয়ে না গেলে এক পা-ও এগিয়ে যাওয়ার সাধ্য নেই ভদ্রেশ্বর তেলেনিপাড়ার বিমল গুহরায়ের।
বার্ধ্যকের সরণিতে প্রবেশ করা মানুষটি গৃহশিক্ষকতা করেন। লকডাউনের জেরে পড়ানো বন্ধ। তাই উপার্জনও নেই। আছে দুর্দশা। বিমলবাবুর কথায়, ‘‘কোথাও গিয়ে যে দাঁড়াব, সেই উপায় নেই। চন্দননগরের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সবুজের অভিযান কিছু খাদ্যসামগ্রী বাড়িতে এসে দিয়ে গিয়েছে। আর কেউ খোঁজটুকুও নেয়নি। সাহায্য করা হচ্ছে বলে প্রচার যতটা চলছে, বাস্তব ততটা নয়।’’
লকডাউন-পর্বে বিমলবাবুর মতো মানুষদের কাছে যাতে সরকারি উদ্যোগে খাদ্যসামগ্রী, ওষুধ-সহ প্রয়োজনীয় ত্রাণ পৌঁছনোর পৃথক ব্যবস্থা করা হয়, সেই দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে ‘সবুজের অভিযান’-এর সহযোগী সংস্থা ‘আইন পরিষেবা কেন্দ্র’। সংস্থার সম্পাদক বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিশেষ শারীরিক চাহিদাসম্পন্ন মানুষ এবং ক্যানসার, যক্ষ্মা-সহ নানা কঠিন রোগে আক্রান্তদের কাছে ত্রাণ পৌঁছনোর বিশেষ ব্যবস্থা করুক কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকার। বিষয়টি নিয়ে আমরা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে ই-মেল করেছি। এটিকে জনস্বার্থ মামলা হিসেবে বিবেচনা করার আর্জি জানানো হয়েছে।’’
সংগঠনের সদস্যেরা জানান, লকডাউনের পর থেকে এই ধরনের অসহায় মানুষদের তাঁরা খাদ্যসামগ্রী দিচ্ছেন। অনেকেই রীতিমতো কষ্ট করে তা নিতে আসছেন। অনেকে তা-ও পারছেন না। এই ধরনের লোকজনকে চিহ্নিত করে তাঁদের বাড়িতে চাল-আলু-ডাল পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে কিছুদিন আগে চন্দননগরের মহকুমাশাসকের মাধ্যমে জেলা প্রশাসনের কাছে চিঠি দেওয়া হয়। যাতে এমন লোকজনের খোঁজ করে খাদ্যসামগ্রী বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়।
কী বলছে প্রশাসন?
চন্দননগর মহকুমা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, প্রতিবন্ধীদের বিষয়ে সমীক্ষা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে এমন সাত জনের বাড়িতে ওষুধ পৌঁছনো হয়েছে। দু’জনের বাড়িতে গিয়ে চাল এবং অন্যান্য জিনিস কিনতে নগদ কিছু টাকা দেওয়া হয়েছে। ক্যানসার রোগীর চিকিৎসা বা কারও ডায়ালিসিসের ক্ষেত্রে সমস্যা হলে বিষয়টি নিয়ে সমন্বয় করা হচ্ছে। বুধবার গোন্দলপাড়ার এক ব্যক্তির ডায়ালিসিসের ব্যবস্থার জন্য তাঁর পরিজনেরা মহকুমাশাসকের দফতরে গিয়েছিলেন। প্রশাসনের ওই কর্তা বলেন, ‘‘ওই ব্যক্তির ডায়ালিসিসের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। চলচ্ছক্তিহীন বা প্রকৃতই সমস্যা রয়েছে এমন লোকজনের বিষয় প্রশাসনের গোচরে আনা হলে সেই অনুযায়ী অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।।’’
কিন্তু বিশ্বজিৎবাবুদের দাবি, হুগলিতে কোথাও যথাযথ ভাবে এই কাজ হচ্ছে না। তাই তাঁরা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। প্রয়োজনে রাজ্যপালের কাছেও দরবার করা হবে। তিনি বলেন, ‘‘রেশন দোকানে বা থানা থেকে খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হলে সেখানে প্রতিবন্ধীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হোক। আলাদা লাইন করা হোক। যাঁদের বাড়ি থেকে বেরনো কঠিন, তাঁদের ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হোক। অর্থকষ্টে ভুগছেন এমন ক্যানসার আক্রান্তদের জন্য চিকিৎসা বা ডায়ালিসিসের ব্যবস্থাও সরকার করুক। ব্যাঙ্কেও এঁদের অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার।’’
চন্দননগরের পাদ্রিপাড়ার বাসিন্দা নাসিমা খাতুন ক্যানসারে ভুগছেন। তাঁর বোন সবেরা খাতুন বলেন, ‘‘খুব কষ্টে সংসার চলছে। সরকার কিছু সাহায্য করলে ভাল হয়।’’ ‘সবুজের অভিযান’-এর এক সদস্যের কথায়, ‘‘সে দিন পাদ্রিপাড়ার এক ব্যক্তি সাহায্য নিতে এসেছিলেন। তাঁর মুথে ক্যানসার। মুখটা বিকৃত হয়ে গিয়েছে। মুখে গামছা জড়িয়ে এসেছিলেন। মুখটা অমন হয়ে যাওয়ায় এবং তা থেকে দুর্গন্ধ ছড়াতে পারে ভেবে তিনি লাইনে দাঁড়াতে অস্বস্তি বোধ করছিলেন, পাছে তাঁকে দেখে অন্যদের অস্বস্তি হয়। এই লোকগুলোর কথা সত্যিই আলাদা করে ভাবা দরকার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy