Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

পরপর দুর্ঘটনা, তবু নজর নেই বালি সেতুতে

স্থানীয়দের অভিযোগ, হাওড়া সেতুর থেকে বয়সে ১১ বছরের বড় বালি সেতুর নিরাপত্তার বিষয়ে কখনওই প্রশাসনিক স্তরে হেলদোল দেখা যায় না।

অরক্ষিত: নেই নজরদারি। বালি সেতুর রেলিং টপকেও উঠে পড়তে পারেন যে কেউ। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

অরক্ষিত: নেই নজরদারি। বালি সেতুর রেলিং টপকেও উঠে পড়তে পারেন যে কেউ। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:৩৩
Share: Save:

বালি সেতু থেকে ঝাঁপ দেওয়া ক্যানসার আক্রান্ত যুবকের সন্ধান মেলেনি শুক্রবারও। এ দিন সকাল থেকে ফের গঙ্গায় তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। তবে বৃহস্পতিবার দুপুরের ওই ঘটনার পরে প্রশ্ন উঠেছে বালি সেতুর নজরদারি ব্যবস্থা নিয়ে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, হাওড়া সেতুর থেকে বয়সে ১১ বছরের বড় বালি সেতুর নিরাপত্তার বিষয়ে কখনওই প্রশাসনিক স্তরে হেলদোল দেখা যায় না। আর প্রতি পদে তারই মাসুল গুনতে হয় ৮৭ বছরের ‘বৃদ্ধ’ সেতুকে। কখনও রেলিং টপকে কেউ গঙ্গায় ঝাঁপ দিচ্ছেন। কখনও আবার রাতের অন্ধকারে সেতুর লোহার প্লেট চুরি হচ্ছে। পুলিশের ক্যাম্প কিংবা সিসি ক্যামেরার কোনও নজরদারি না থাকায় সেতুর উপরে কখন কী ঘটছে তা-ও জানা সম্ভব হয় না।

যেমন বৃহস্পতিবার সালকিয়ার বাসিন্দা রাজকুমার সোনকার যে গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়েছেন তা পুলি‌শকে এসে প্রথমে জানিয়েছিলেন ওই যুবকের এক বন্ধু। তিনি সেতুর যে অংশের কথা তদন্তকারীদের বলেছিলেন, পরে সেই জায়গার রেলিংয়ের উপর থেকে রাজকুমারের মোবাইলটি পান বালির দুই যুবক। তাতেই ঘটনা সম্পর্কে এক প্রকার নিশ্চিত হন সকলে। তবে ওই দিন রাজকুমারের বন্ধুর দাবির সত্যতা যাচাই করতে প্রথমে সেতু ও নীচে গঙ্গার পাড়ের এলাকায় গিয়ে পুলিশ খোঁজখবর করে।

এক পুলিশ আধিকারিকের কথায়, ‘‘ওই যুবক সত্যি বলছেন কি না তা যাচাই করে দেখতেই সেতু ও নীচের এলাকায় খোঁজ করতে হয়েছিল।’’ এখানেই উঠে আসছে বালি সেতুর সুরক্ষা বলয় না থাকার প্রসঙ্গ। স্থানীয়েরা বলছেন, ‘‘সেতুতে যদি সিসি ক্যামেরা থাকত, তা হলে সহজেই বিষয়টির সত্যতা জানা যেত। কিংবা যদি সেতুতে পুলিশের ক্যাম্প থাকত, তা হলে তৎক্ষণাৎ রাজকুমারের বন্ধুরা সে‌খানে জানাতে পারতেন।’’

হাওড়া সেতু-সহ শহরের অন্য গুরুত্বপূর্ণ সেতু, রাস্তায় সিসি ক্যামেরার নজরদারি থাকলেও বালি সেতুতে তা নেই। আত্মহত্যা রুখতে হাওড়া সেতুর রেলিংয়ে উচ্চতায় আড়াই ফুট থেকে ১০ ফুট করে লাগানো হয়েছে কাঁটাতার। সেখানে প্রায় ৮৮০ মিটার লম্বা বালি সেতুর দু’পাশের ফুটপাতে প্রায় সাড়ে চার ফুট উচ্চতার রেলিং অরক্ষিত। রেলিংগুলিতে জাফরি কাটা থাকায় সহজেই তাতে পা দিয়ে ওঠা যায়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, গত চার মাসে বালির ওই সেতু থেকে অন্তত তিনটি ঝাঁপ দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। শেষ ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার। মাস দু’য়েক আগে বরাহনগরের এক তরুণী সেতু থেকে ঝাঁপ দিয়েছিলেন। খবর পেয়ে বালি থানার পুলিশ সেতুর নীচের এলাকা নিমতলা ঘাট থেকে নৌকা নিয়ে তরুণীকে উদ্ধার করে প্রাণে বাঁচায়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা সম্ভব হয় না বলেও দাবি নিমতলা ঘাট এলাকার বাসিন্দাদের।

আবার সেতুর মূল ইস্পাতের কাঠামোর নীচের অংশটি রোদ-জল, পান ও পানমশলার পিক থেকে বাঁচাতে লোহার প্লেটের ঢাকনা দেওয়া থাকলেও প্রায়ই তা চুরি হয়ে যাচ্ছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, বালি সেতুর সম্পূর্ণ কাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব রেলের। দু’পাশের রাস্তা শুধু মেরামতি করে পূর্ত দফতর। রেললাইনের নিরাপত্তা রেলরক্ষী বাহিনীর আর রাস্তায় শুধু আইনশৃঙ্খলা দেখে বালি, বেলঘরিয়া ও বরাহনগর থানা। পুলিশ অবশ্য জানাচ্ছে, ক্যামেরা লাগানো বা রেলিং উঁচুর দায়িত্ব তাঁদের নয়।

পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক নিখিল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘খুব শীঘ্রই সেতু পরিদর্শন করে, সমস্যাগুলি খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bally Bridge Accident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE