Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

রাত ঘুরতেই ছাড়ে উঠছে প্রশ্ন

মুম্বই কিংবা আমদাবাদে নেমে ট্রেনে নয় পশ্চিম এশিয়া থেকে জেলায় ফেরা ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের গন্তব্য ছিল হাওড়া স্টেশন।

ফেরা: বিরামহীন ঘরে ফেরা চলছেই। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

ফেরা: বিরামহীন ঘরে ফেরা চলছেই। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২০ ০৫:৫৬
Share: Save:

স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশিকা বলছে— সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে এমন মানুষজনের ঠিকানা নিভৃত কোয়রান্টিন। অথচ রবিবার, পুণে-মুম্বই-কোলাপুর, কেউ বা বেঙ্গালুরু কিংবা কর্মসূত্রে ভিন দেশে প্রবাস কাটিয়ে ঘরে ফেরা ৭২ জন শ্রমিককে কোয়রান্টিনে রেখেও পরের দিনই পাঠিয়ে দেওয়া হল আপন ঠিকানায়। সঙ্গে বাড়ির বাইরে না বের হওয়ার নিছকই পরামর্শ। আর তা নিয়েই সোমবার সকাল থেকে ছড়িয়েছে উদ্বেগ, উঠেছে প্রশ্ন। জেলার এক পরিচিত চিতিৎসকের প্রশ্ন, ‘‘সরকার বলছে এক, কিন্তু স্বাস্থ্য দফতর করছে আর এক, ওই ৭২ জনকে সরকারি উদ্যোগ কোয়রান্টিনে রাখলে কী এমন ক্ষতি হত!’’

মুম্বই কিংবা আমদাবাদে নেমে ট্রেনে নয় পশ্চিম এশিয়া থেকে জেলায় ফেরা ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের গন্তব্য ছিল হাওড়া স্টেশন। অতঃপর বাস যোগে মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন গ্রাম। রবিবার বহরমপুরে নামার পরে ৭২ জন এমনই ঘরে ফেরা শ্রমিককে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কোয়রান্টিন কেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়েছিল, প্রেসক্রিপশন ছিল ১৪ দিনের কোয়রান্টিন। কিন্তু সোমবার সকালে শারীরিক পরীক্ষার পর তাঁদের একে একে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। অথচ স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশিকা বলছে— ভিন্ রাজ্য কিংবা দেশ থেকে আসা মানুষজনের পথ্য কোয়রান্টিন। স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, ছেড়ে দেওয়া হলেও ওই ৭২ জন শ্রমিককে ১৪ দিন নজরদারিতে রাখবে স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু তা আদৌ সম্ভব কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জেলা স্বাস্থ্য দফতরেরই এক কর্তা। তিনি বলেন, ‘‘এত তোড়জোড়ের তা হলে অর্থটা কি, তা ছাড়া জেলার কোয়রান্টিন কেন্দ্রগুলিতে জায়গার তো তেমন অভাব নেই এখনও।’’

জেলার মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক প্রশান্ত বিশ্বাস অবশ্য তার একটা ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, ‘‘ওঁরা দিন চারেক আগে ভিন রাজ্য থেকে ফিরেছেন। তাঁদের মধ্যে বিদেশ ফেরত কেউ ছিলেন বলে জানা নেই। স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশে মেনেই ২৪ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল। এ দিন স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরে তাঁদের ছাড়া হয়েছে।’’ মেডিক্যাল কলেজের সুপার দেবদাস সাহা বলেন, ‘‘পরীক্ষার পর দেখা দিয়েছে কোয়রান্টিন কেন্দ্র তাঁদের থাকার প্রয়োজন নেই। তাই বাড়িতে স্বাস্থ্য দফতরের নজরদারিতে থাকতে বলা হয়েছে।’’ এই চাপানউতোর পর্বে সোমবার সকালে আবুধাবি ফেরত বহরমপুরের বানজেটিয়া এলাকার এক যুবককে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়েছে। ১০ মার্চ তিনি আবুধাবি থেকে ফেরেন বলে জানা গিয়েছে। তার পরে স্বাস্থ্য দফতরের নজরদারিতে ছিলেন। কিন্তু দু’দিন ধরে তাঁর জ্বর, গলা ব্যথা শুরু হওয়ায় তিনি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসেন। এর পরেই তাঁকে আইসোলেনশন ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়। সোমবার তাঁর লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। আজ, মঙ্গলবার তা পাঠানো হবে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার গভীর রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত বহরমপুরে মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিকের অফিসের সামনে ১৯টি বাসে জেলায় ফেরা ১১৫০ জনের পরীক্ষা করানো হয়েছে। তবে তাঁদের পরীক্ষা করে তেমন কোনও উপসর্গ না পাওয়ায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ ও লকডাউনের জেরে উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে সোমবার বিকেলে জেলা প্রশাসন ব্লক ও মহকুমা প্রশাসনের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফরেন্স করা হয়েছে। কীভাবে করোনাভাইরাস মোকাবিলা করতে হবে সে বিষয়ে যেমন নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তেমনি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সরবরাহ যাতে ঠিক থাকে সে বিষয়েও নির্দেশ

দেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Isolation Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE