Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সুনতালেখোলাকে ঘিরে বড় পর্যটন প্রকল্প, নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর

একটানা দীর্ঘ পথ হাঁটতে পারেন তিনি। তা সে সমতলেই হোক বা পাহাড়ে। প্রথম দফায় সাত কিলোমিটার। তার পর আধ ঘণ্টার বিরতি নিয়ে ফের সাত কিলোমিটার। মঙ্গলবার সুনতালেখোলায় প্রায় ১৪ কিলোমিটার হাঁটলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবং তারই ফাঁকে সেরে ফেললেন এলাকার পর্যটন শিল্পকে ঢেলে সাজার পরিকল্পনাও। সোমবার উত্তরবঙ্গ সফরে এসেছেন মমতা। দুপুরে বাগডোগরা নামার পরে ঝড়বৃষ্টি মাথায় করে সন্ধ্যায় সুনতালেখোলার বন উন্নয়ন নিগমের বাংলোয় পৌঁছন। দুর্যোগের মধ্যে সেই সন্ধ্যায় আর বেরোতে পারেননি। তবে মঙ্গলবার আবহাওয়া ঠিক হতে বেরিয়ে পড়েন মমতা। এবং তার পরে দু’দফায় প্রায় গোটা এলাকা পায়ে হেঁটে ঘুরে ফেলেন তিনি।

সুনতালে নদীর উপরে ঝুলন্ত সেতুতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার।— নিজস্ব চিত্র।

সুনতালে নদীর উপরে ঝুলন্ত সেতুতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার।— নিজস্ব চিত্র।

দেবাশিস ভট্টাচার্য
সুনতালেখোলা শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৪৩
Share: Save:

একটানা দীর্ঘ পথ হাঁটতে পারেন তিনি। তা সে সমতলেই হোক বা পাহাড়ে।

প্রথম দফায় সাত কিলোমিটার। তার পর আধ ঘণ্টার বিরতি নিয়ে ফের সাত কিলোমিটার। মঙ্গলবার সুনতালেখোলায় প্রায় ১৪ কিলোমিটার হাঁটলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবং তারই ফাঁকে সেরে ফেললেন এলাকার পর্যটন শিল্পকে ঢেলে সাজার পরিকল্পনাও।

সোমবার উত্তরবঙ্গ সফরে এসেছেন মমতা। দুপুরে বাগডোগরা নামার পরে ঝড়বৃষ্টি মাথায় করে সন্ধ্যায় সুনতালেখোলার বন উন্নয়ন নিগমের বাংলোয় পৌঁছন। দুর্যোগের মধ্যে সেই সন্ধ্যায় আর বেরোতে পারেননি। তবে মঙ্গলবার আবহাওয়া ঠিক হতে বেরিয়ে পড়েন মমতা। এবং তার পরে দু’দফায় প্রায় গোটা এলাকা পায়ে হেঁটে ঘুরে ফেলেন তিনি।

পর্যটন এবং বন দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে প্রথমে ওই এলাকায় প্রায় সাত কিলোমিটার ঘোরেন। এর পর আধ ঘণ্টা বিরতি নিয়ে ফের বেরিয়ে পড়েন। এ বার লক্ষ্য, নেওড়া ভ্যালি প্রকল্পের আওতায় থাকা প্রায় আড়াই হাজার মিটার উঁচু মৌচুকি। খাড়াই এবং রুক্ষ পাথুরে ঠেঙিয়ে এক সময় সেখানে পৌঁছন মমতা।

এই গোটা পথ-পরিক্রমার পরে বোঝা গেল, পর্যটন শিল্পকে ঢেলে সাজতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লামাহাটা, তাগদার পর এ বার দার্জিলিং জেলার সুনতালেখোলাকে ঘিরে একটি বড় পর্যটন প্রকল্প হাতে নিচ্ছে তাঁর সরকার। পর্যটন, বন এবং যুবকল্যাণ দফতরের সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনকে সঙ্গে রেখে ওই প্রকল্প গড়ে তোলার কথা জানিয়েছেন তিনি।

সুনতালেখোলায় ঘোরার সময় ওই জায়গাকে ঘিরে ছয়-সাত কিলোমিটার এলাকা জুড়ে একটি বড় পর্যটন প্রকল্পের কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। পর্যটন ও বন দফতরের আধিকারিকদের এ বিষয়ে নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মোবাইলে কথা বলেন যুবকল্যাণমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের সঙ্গেও।

প্রকল্প গড়ে তুলতে কী নিদান দিলেন মমতা?

এলাকায় অনেক নতুন নতুন ভিউ পয়েন্ট তৈরি করতে হবে। কটেজের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি গড়ে তুলতে হবে সুইস কটেজও। ঠিক করতে হবে এলাকার রাস্তাঘাট। তবে, পরিকাঠামো ব্যবস্থার উপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে চেয়েছেন তিনি। অরূপবাবুকে ওই এলাকায় একটি যুব আবাস গড়ে তোলার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। যেখানে ডর্মেটরিতে কম খরচে পর্যটকেরা থাকতে পারবেন। এর আগে লামাহাটা ও তাগদায় মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগেই এই ধরনের পর্যটন প্রকল্প গড়ে তোলা হয়। কিন্তু গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার আন্দোলনে বছরখানেকের মধ্যেই পুড়ে যায় তাগদা ক্যান্টনমেন্ট ক্লাবের বাংলো।

এমনিতে কালিম্পং মহকুমার মধ্যে পড়ে সুনতালেখোলা। কিন্তু, আলিপুরদুয়ার থেকেও খুব বেশি দূরে নয় এই পর্যটনকেন্দ্রটি। এই মুহূর্তে বন উন্নয়ন নিগমের আটটি কটেজ আছে এখানে। আছে দু’টি হনিমুন কটেজ এবং ২৮টি তাঁবু। চালসা পেরিয়ে সামসিং হয়ে সুনতালেখোলা পৌঁছতে হয়। এখানে যেমন চা-বাগান, পাহাড় রয়েছে, তেমনই মূর্তি নদী বা জঙ্গল এলাকাও খুব একটা দূরে নয়। কয়েক কিলোমিটারের মধ্যেই রয়েছে গরুমারা জাতীয় উদ্যান এবং চাপড়ামারি অভয়ারণ্য। সুনতালে মানে কমলালেবু এবং খোলার অর্থ নদী। সেই সুনতালে নদীর উপরের ঝুলন্ত ব্রিজ পেরিয়ে যেতে হয় বন উন্নয়ন নিগমের কটেজগুলিতে। ভুটান সীমান্তও এখান থেকে বেশ কাছে।

আন্তর্জাতিক পর্যটকদের কাছে এই প্রকল্পকে তুলে ধরতে চেয়ে মুখ্যমন্ত্রী আঞ্চলিক পর্যটকদেরকেই বেশি গুরুত্ব দিতে চেয়েছেন। বছরের বিভিন্ন সময়ে কলকাতা-সহ এ রাজ্যের নানা জায়গা থেকে পর্যটকরা ভিড় জমান পাহাড় ও ডুয়ার্সে। বাদ যান না অন্য রাজ্যের পর্যটকরাও। পর্যটন মরসুমে দেশি-বিদেশিদের চাপে এই এলাকার সব ক’টি থাকার জায়গাই প্রায় ভর্তি থাকে। অনেকে জায়গা না পেয়ে
অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হন। মরসুম বাদে অন্য সময়েও প্রায় ৫০ শতাংশ জায়গা ভর্তি থাকে বলে পর্যটন কর্তাদের দাবি। মুখ্যমন্ত্রী সে জায়গা থেকেই এই প্রকল্প গড়ে তোলার বিষয়ে জোর দিয়েছেন। যাতে বাণিজ্যিক ভাবে প্রকল্পটি সফল হয়। শুধু সরকারি উদ্যোগ নয়, মুখ্যমন্ত্রী ‘হোম স্টে’র সংখ্যাও বাড়াতে বলেছেন। যার ফলে স্থানীয় অর্থনীতি চাঙ্গা হবে বলে তাঁর আশা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE