Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ভোটের তাপ রামনবমীর শোভাযাত্রায়

শনিবার পুরুলিয়া শহরের গোশালা হনুমান মন্দির থেকে শোভাযাত্রার আয়োজন করেছে বজরং দল ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদ।

পরপর: রামনবমীর শোভাযাত্রার ডাক দিয়ে দু’টি আলাদা আলাদা কমিটির তোরণ। শহরে দেখা যাচ্ছে এমন হোর্ডিং এবং ব্যানার। ছবি: সুজিত মাহাতো

পরপর: রামনবমীর শোভাযাত্রার ডাক দিয়ে দু’টি আলাদা আলাদা কমিটির তোরণ। শহরে দেখা যাচ্ছে এমন হোর্ডিং এবং ব্যানার। ছবি: সুজিত মাহাতো

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৯ ০৬:২১
Share: Save:

লোকসভা ভোটের মধ্যে রামনবমীকে ঘিরে চড়ছে রাজনীতির পারদ। পুরুলিয়ায় এ বার শোভাযাত্রা হবে ১৯৩টি। বাঁকুড়ায় ৩৫টি। বিজেপি ও তৃণমূল নেতৃত্ব দাবি করেছেন, কোনও শোভাযাত্রাই তাঁরা আয়োজন করেননি। তবে তাঁরা মানছেন, শোভাযাত্রায় দু’দলের নেতা-কর্মীরাই থাকবেন। তাতেই অন্য মাত্রা পেয়েছে এ বারের রামনবমী। তাই নির্বিঘ্নে সব সারতে সতর্ক পুলিশ প্রশাসন শোভাযাত্রায় বেশ কিছু বিধিনিষেধ জারি করেছে।

আজ, শনিবার পুরুলিয়া শহরের গোশালা হনুমান মন্দির থেকে শোভাযাত্রার আয়োজন করেছে বজরং দল ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। সামনে নেই বিজেপি। থাকবেন দলের নেতারা। রবিবার ওই জায়গা থেকেই শোভাযাত্রার আয়োজন করেছে ‘পুরুলিয়া রামনবমী উদযাপন কমিটি’। ওই কমিটির শোভাযাত্রাতেও বহু তৃণমূল নেতৃত্ব থাকবেন বলে জানাচ্ছেন। তা নিয়ে শহরে বড় বড় হোর্ডিং, তোরণ পড়ে গিয়েছে।

শোভাযাত্রার জমক নিয়ে চমক দেবেন বলে দাবি করছেন দু’পক্ষই। গতবার বজরং দলের হয়ে শোভাযাত্রার আয়োজন করার পরে গ্রেফতার হয়েছিলেন বজরং দলের শহর কমিটির অন্যতম শীর্ষনেতা সুরজ শর্মা। ছাড়া পেয়ে তিনি তৃণমূল হয়ে এখন বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। পুরুলিয়া শহরে গেরুয়া শিবিরের মিছিলের অন্যতম উদ্যোক্তা সুরজ বলেন, ‘‘আমাদের রামনবমীর শোভাযাত্রায় হাজার হাজার মানুষ পা মেলাবেন। শোভাযাত্রা হবে নিরস্ত্র। ছোটরা হনুমানের বেশে থাকবে।’’ বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক বিবেক রঙ্গার মতো নেতারা জানিয়েছেন ওই শোভাযাত্রায় থাকবেন।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

গতবার বজরং দলের শোভাযাত্রার অন্যতম প্রধান মুখ গৌরব সিংহ বর্তমানে তৃণমূলে। রবিবারের শোভাযাত্রার অন্যতম প্রধান গৌরব বলেন, ‘‘শোভাযাত্রা তৃণমূলের নয়। সকলেই এই শোভাযাত্রায় স্বাগত। কুড়ি ফুটের রাম ও কুড়ি ফুটের বজরংবলীর মূর্তি থাকবে শোভাযাত্রায়। শোভাযাত্রা হবে নিরস্ত্র।’’ পুরুলিয়া শহর তৃণমূলের সভাপতি বৈদ্যনাথ মণ্ডল বলেন, ‘‘রাম, বজরংবলী কোনও একটি দলের নয়। আমারাও রাম-হনুমানজীর ভক্ত। আমরাও সাধারণ মানুষকে নিয়ে রামনবমী পালন করব।’’

তাল ঠোকাঠুকির শব্দ পাওয়া গিয়েছে শুক্রবারই। বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী এ দিন দাবি করেন, ‘‘রামনবমীকে ঘিরে সাধারণ মানুষের উৎসাহ এখন তুঙ্গে। তাই এত শোভাযাত্রা হচ্ছে। তৃণমূল এখন ভোটের জন্য শোভাযাত্রা করছে।’’ জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক নবেন্দু মাহালির পাল্টা দাবি, ‘‘রামনবমীতে আগে পাড়ায় পাড়ায় লাঠি খেলার আয়োজন হত। এখন ওই ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে ঘিরে বিজেপি রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে। আমরা কেন তাহলে ময়দান ছেড়ে দেব? বিভিন্ন জায়গায় আমাদের কর্মীরাও দলের ব্যানার বাদ দিয়ে শোভাযাত্রার আয়োজন করছেন।’’

বাঁকুড়া জেলাতেও উত্তাপ ছড়িয়েছে। দু’দলের কর্মীরাই শোভাযাত্রায় থাকবেন বলে জানিয়েছেন। জেলা তৃণমূল সভাপতি অরূপ খাঁ বলেন, ‘‘যে কেউ মিছিলে যেতে পারেন। কিন্তু রাজনীতি করা চলবে না।’’ বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্রও বলেন, ‘‘রাজনীতির কথা আসছে কেন? আমি ব্যক্তিগত ভাবেই মিছিলে থাকব।’’

এই পরিস্থিতিতে শিশু সুরক্ষা কমিশন জানিয়ে দিয়েছে, শোভাযাত্রায় নাবালকদের হাতে অস্ত্র যেন না থাকে। তার উপরে নির্বাচনী বিধি চালু হওয়ায় এ ব্যাপারে আরও সজাগ প্রশাসন। পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বলেন, ‘‘নির্বাচনী বিধি বলবৎ রয়েছে। তাই কোনও ভাবেই কোনও শোভাযাত্রায় অস্ত্র নেওয়া যাবে না।’’ প্রতিটি শোভাযাত্রা কমিটিকে থানায় ডেকে এ ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। জানানো হয়েছে, শোভাযাত্রার জন্য পুলিশের কাছ থেকে আগাম অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। সে ক্ষেত্রে শোভাযাত্রার রুট ম্যাপ পুলিশের কাছে জমা দিতে বলা হয়েছে। জানানো হয়েছে, শোভাযাত্রায় বাজানো যাবে না ডিজে। পুরুলিয়া জেলার সমস্ত মদের দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক। বাঁকুড়াতেও থাকছে মদ বিক্রি বন্ধ।

বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও জানান, ‘‘বাহিরাগতেরা শোভাযাত্রায় যোগ দিতে পারবেন না। যে সব জায়গায় একাধিক মিছিল রয়েছে, সেখানে আলাদা আলাদা সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

শোভাযাত্রার আয়োজকেরা দাবি করেছেন, তারা অস্ত্র নিয়ে শোভাযাত্রা করবেন না। লাঠি খেলা হবে। তবে, কেউ যদি অস্ত্র নিয়ে যোগ দেন, অনেক সময় ভিড়ের মধ্যে তা লক্ষ করা সম্ভব নয়। পুলিশ অবশ্য জানাচ্ছে, প্রতিটি শোভাযাত্রার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তারা থাকবে। শোভাযাত্রায় অস্ত্র দেখা গেলে ছবি তুলে রাখা হবে। পরে সেই কমিটির বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE