দলে ওপেনার নেই। চিন্তা কিসের? লোকেশ রাহুল আছেন তো। দলে মিডল অর্ডার নেই? অসুবিধা কোথায়? লোকেশ রাহুল আছেন তো। চোট খেলতে পারছেন না অধিনায়ক। তাতে কী? আছেন তো লোকেশ রাহুল। বার বার কঠিন সময়ে রাহুলের কাঁধেই মাথা রেখেছে ভারত। নিরাশ করেননি রাহুল। আর এক রাহুল (দ্রাবিড়) ছিলেন ভারতীয় দলের ‘দ্য ওয়াল’। ব্যাট করতে নেমে দেওয়ালের মতো দাঁড়িয়ে থাকতেন। আর এই রাহুল ভারতীয় দলের ‘দ্য স্টেপনি’। যখন যেখানে প্রয়োজন, তাঁকে ব্যবহার করেছেন ভারতীয় দল। আরও এক বার সেই রাহুলই উতরে দিলেন ভারতকে। কোচ গৌতম গম্ভীরের মুখে হাসি ফেরালেন রাহুল।
বেঙ্গালুরুবাসী দুই রাহলের মধ্যে মিলও অনেক। দ্রাবিড়ও চুপচাপ নিজের কাজ করতেন। ব্যাট হাতে কত ম্যাচ যে দলকে জিতিয়েছেন তার হিসাব নেই। যখন ব্যাট হাতে খারাপ ফর্মে ছিলেন, তখন উইকেটকিপিং শুরু করেন। লোকেশও তাই। চুপচাপ নিজের কাজ করেন। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি উইকেটকিপিং করেন। দু’জনেই ঠান্ডা মাথায় খেলেন। ভারতের ক্রিকেটজনতা মনে রাখবেন দুই রাহুলকেই।
রায়পুরে দ্বিতীয় ম্যাচে টস হারার পর রাহুল জানিয়েছিলেন, তাঁর নিজেকে লাথি মারতে ইচ্ছা করছিল। রাহুল জানতেন, এই সিরিজ়ে টসের গুরুত্ব কতটা। টস জেতা মানে ম্যাচ অর্ধেক জিতে ফেলা। তাই বিশাখাপত্তনমে টসের সময় বাঁহাতে কয়েন তোলেন। ভাগ্যও ফেরে। টস জেতে ভারত। ম্যাচও জেতে। সিরিজ়ও ভারতের পকেটে আসে।
অথচ এক দিনের ম্যাচে ভারত এই প্রথম টস হারল তা নয়। এর আগে টানা ২০ ম্যাচে টস হেরেছে তারা। শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালের এক দিনের বিশ্বকাপের ফাইনালে। তার পর রোহিত শর্মাই হোন, বা শুভমন গিল, ছবি বদলায়নি। অথচ, রাহুলের মতো তাঁরা কিন্তু নিজের ঘাড়ে দায় নেননি। বোঝা যাচ্ছিল, পরিবর্ত অধিনায়ক হয়েও এই সিরিজ় জেতার কতটা চেষ্টা তাঁর।
সিরিজ় জেতার পর টসের কথা জানিয়েছে রাহুল। বলেছেন, “প্রথমেই টসের কথা বলব। আগের দুই ম্যাচে আমার উপর দল খুব একটা গর্ব করেনি। কারণ, টস জিততে পারিনি। এই ম্যাচে ওরা আমাকে এসে জড়িয়ে ধরছিল। বোলারদের আর ভেজা বল নিতে হয়নি। তার সুবিধা পেয়েছি।”
আরও পড়ুন:
আইপিএলে অধিনায়কত্ব করলেও ভারতীয় দলে কোনও দিন পূর্ণাঙ্গ অধিনায়কের দায়িত্ব পাননি রাহুল। সহ-অধিনায়ক হয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ়ে সহ-অধিনায়ক না হলেও তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নিরাশ করেননি রাহুল। বিশাখাপত্তনমেও তাঁর অধিনায়কত্ব চোখে পড়েছে। নজর কেড়েছেন রাহুল। খেলা শেষে তিনি বলেছেন, “বোলারেরা নিজের কাজ করেছে। ৪০০ রান তাড়া করা আর ২৭১ রান তাড়া কর আলাদা বিষয়। ডি’কক খুব ভাল খেলছিল। ওকে আউট করা জরুরি ছিল। এই সিরিজ়ে সবচেয়ে ভাল লেগেছে যে ভাবে আমরা নিজেদের স্নায়ুর চাপ ধরে রাখচে পেরেছি। একটা ম্যাচ জিততে পারিনি। তাতে কেউ ঘাবড়ায়নি। সিরিড় জিতেছি।”
অধিনায়ক হিসাবে রাহুলের পরিসংখ্যান খারাপ নয়। ভারতের হয়ে সব ফরম্যাট মিলিয়ে মোট ১৯ ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেছেন তিনি। জিতেছেন ১৩ ম্যাচ। ছয় ম্যাচ হেরেছেন। তাঁর জয়ের হার প্রায় ৭০ শতাংশ। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি এক দিনের ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেছেন রাহুল। ১৫ ম্যাচের মধ্যে ১০ জিতেছেন। হেরেছেন পাঁচটি। টেস্টে তিন বার অধিনায়কত্ব করেছেন রাহুল। জিতেছেন দু’টি টেস্ট। হেরেছেন এক বার। একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে অধিনায়কত্ব করে সেটিতে জিতেছেন রাহুল।
শুধু অধিনায়ক হিসাবে নয়, ব্যাটার হিসাবেও নিজের কাজ করেছেন রাহুল। হার্দিক পাণ্ড্য না থাকায় এই সিরিজ়ে ফিনিশারের ভূমিকা নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন তিনি। প্রথম দুই ম্যাচে অর্ধশতরান করেছেন। তিনি ছিলেন বলেই ভারত ৩৫০ রানে পৌঁছেছে। তৃতীয় ম্যাচে ব্যাট করার প্রয়োজন পড়েনি।
রাহুল মুখে খুব বেশি কথা বলেন না। কাজে করে দেখাতে বিশ্বাসী তিনি। সেই কারণেই ব্যক্তিগত মাইলফলকের পর তাঁর উল্লাসের ধরনই হল, কারও কথায় পাত্তা নিয়ে দিয়ে নিজের কাজ করি (দু’কান দুই আঙুল ঢুকিয়ে উল্লাস করেন রাহুল)। তিনি জানেন, খেলাটাই আসল। সেটা যে ভূমিকাতেই হোক না কেন। তাই তো ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি কিপিংয়ের ধারও বাড়িয়েছেন। নিজেকে আরও অপরিহার্য করে তুলেছেন। ভারতের টেস্ট ও এক দিনের দলে রাহুলের জায়গা নিশ্চিত। শুধু জায়গা পোক্ত করা নয়, তার দামও দিচ্ছেন রাহুল। বুঝিয়ে দিচ্ছেন, তিনি ভারতীয় দলের ‘স্টেপনি’। কঠিন পরিস্থিতি থেকে তিনিই দলকে উদ্ধার করেন।