Advertisement
E-Paper

নাগরিকের আস্থা হারিয়ে কিন্তু রাষ্ট্র নিজের শ্রীবৃদ্ধি করতে পারে না

অর্থনীতির পণ্ডিতরা বলতে পারেন, এটাই রীতি। বলতে পারেন, কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে অর্থনীতি এ ভাবেই ধাপে ধাপে নিজেকে রূপান্তরের পথে নিয়ে যায়। ধরে নেওয়া যাক, এই ক্রমবিবর্তনই অর্থনীতির ভবিতব্য।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৭ ০৫:০৯
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

রান্নার গ্যাসের দামে ভর্তুকি দেওয়ার যে সরকারি বন্দোবস্ত রয়েছে, তার দ্রুত অবসানের নির্দেশ জারি হল। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কোটি টাকা না থাকলে গ্রাহকের প্রাপ্য সুদের হার কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হল। স্বল্পসঞ্চয়ে সুদের হার কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তে সিলমোহর তো বেশ কিছু দিন আগেই পড়ে গিয়েছে। কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের যে ধারণা, তার সঙ্গে এ দেশের অর্থনৈতিক নীতির সঙ্গতি থাকছে তো? রাষ্ট্র সব নাগরিকের প্রতি সমপরিমাণ দায়বদ্ধতার ভাবনা থেকে সরে যাচ্ছে না তো? সংশয় কিন্তু তৈরি হচ্ছে কোথাও না কোথাও।

অর্থনীতির পণ্ডিতরা বলতে পারেন, এটাই রীতি। বলতে পারেন, কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে অর্থনীতি এ ভাবেই ধাপে ধাপে নিজেকে রূপান্তরের পথে নিয়ে যায়। ধরে নেওয়া যাক, এই ক্রমবিবর্তনই অর্থনীতির ভবিতব্য। কিন্তু ক্রমবিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করার তাগিদে কি আমরা নাগরিকের ন্যূনতম অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য বা ন্যূনতম সামাজিক নিরাপত্তার পরিসরকে দিন দিন সঙ্কুচিত করে ফেলতে পারি? এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজায় জোর দেওয়ার সময় এসে গিয়েছে।

রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়ন দীর্ঘ মেয়াদে নাগরিকের জীবনযাত্রারও উন্নয়নই ঘটায়। তাই রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে নাগরিককে সাময়িক স্বার্থত্যাগ করতে হতে পারে। স্বার্থত্যাগ করতে বা চাপের মুখোমুখি হতে নাগরিক প্রস্তুত। কিন্তু চাপ শুধু সাধারণ মধ্যবিত্ত বা নিন্মবিত্তের জন্য, স্বার্থত্যাগ শুধু তাঁদের ভাগে— এমন ধারণা চারিয়ে যাওয়ার উপক্রম রাষ্ট্রের পক্ষে শুভ বা সুখকর নয়। এ কথা সরকারকে মাথায় রাখতে হবেই।

প্রত্যেক নাগরিকের অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্যের খেয়াল রাখার অঙ্গীকার ছিল, বিপুল কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি ছিল, মূল্যবৃদ্ধির রাশ শক্ত হাতে টেনে ধরার কথা ছিল। এই সব কিছু মিলিয়েই ‘অচ্ছে দিন’-এর স্বপ্ন ছিল। কিন্তু এখন যদি নাগরিকদের এক বিরাট অংশের মনে হয়, সরকারের প্রায় প্রতিটি পদক্ষেপই স্বপ্নভঙ্গের বার্তা নিয়ে আসছে, তা হলে সে দুর্ভাগ্যজনকই।

রাষ্ট্রকে মনে রাখতে হবে, রাষ্ট্রের সাফল্যের মাপকাঠি শুধু একটি সুসংহত বন্দোবস্তের পরিচলনা নয়, রাষ্ট্রের সাফল্যের মাপকাঠি নাগরিকের বিশ্বাস এবং আস্থাও। সেগুলো ধরে রাখার জন্য যতটুকু যত্নবান হওয়া জরুরি, সেটুকু যত্নবান রাষ্ট্রকে হতেই হবে। রাষ্ট্রের পদক্ষেপ নাগরিকের মনে যদি সংশয়ের জন্ম দিয়ে থাকে এবং সে সংশয় যদি ক্রমে অবিশ্বাসে রূপান্তরিত হয়, তা হলে অর্থনীতির রূপান্তরও কিন্তু বৃথা যাবে।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় Anjan Bandyopadhyay LPG Newsletter
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy