Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Medical Termination of Pregnancy Act

গর্বধারিণী

শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

প্রায় পঞ্চাশ বৎসর পুরাতন একটি আইন সংশোধনে বিল আনিতেছে কেন্দ্র। ১৯৭১ সালের ‘মেডিক্যাল টার্মিনেশন অব প্রেগন্যান্সি’ আইন অনুসারে গর্ভপাতের সময়সীমা বাঁধিয়া দেওয়া হইয়াছিল বিশ সপ্তাহে, নতুন বিলে তাহা চব্বিশ সপ্তাহে বাড়াইবার প্রস্তাব করা হইয়াছে। অর্থাৎ গর্ভবতী নারী চাহিলে গর্ভাবস্থার ষষ্ঠ মাসেও গর্ভপাত করাইতে পারিবেন, সম্পূর্ণ আইনসঙ্গত ভাবে এবং সুষ্ঠু স্বাস্থ্য পরিষেবা সহায়ে। বিল আনিবার প্রস্তুতিপর্ব শুরু হইয়াছিল আগেই; গত বৎসর জুলাইয়ে এই মর্মে দিল্লি হাই কোর্টে হলফনামা জমা পড়িয়াছিল, ২০১৮ সালেও এক সংসদীয় কমিটি একই প্রস্তাব করিয়াছিল। কমিটি তাহার রিপোর্টে এক গবেষণাপত্র উদ্ধৃত করিয়া দেখাইয়াছিল, ২০১৫ সালে ভারতে ১ কোটি ৫৬ লক্ষ গর্ভপাত হইয়াছে, যাহার মধ্যে ১ কোটি ১৫ লক্ষই বেআইনি ভাবে, উপযুক্ত স্বাস্থ্য পরিষেবা-পরিসরের বাহিরে। ইহাও বলা হইয়াছিল, গর্ভাবস্থা বিশ সপ্তাহ অতিক্রান্ত হইলেই গর্ভপাত করিতে আইনি পথ লওয়া আবশ্যক, কিন্তু দেশের বিচারপ্রক্রিয়া এতই মন্থর যে রায় বা সিদ্ধান্ত আসিতে আসিতে আইনসিদ্ধ সীমাটি পার হইয়া যায়, গর্ভবতী নারী তখন আর চাহিলেও গর্ভপাত করাইতে পারেন না, তাঁহাকে ঝুঁকি লইয়া হাতুড়ের নিকট বা বেআইনি গর্ভপাত ক্লিনিকে যাইতে হয়। এই অন্তরায়সমূহ দূর করিয়া, নারীর নিরাপদ ও আইনসঙ্গত গর্ভপাতের অধিকারকে নিশ্চিত করাই নতুন বিলের উদ্দেশ্য।

গর্ভপাতের অধিকার আসলে প্রজনন সংক্রান্ত অধিকার, মাতৃত্বের অধিকার বা সার্বিক ভাবে নারীর অধিকারকেই প্রতিষ্ঠা দেয়। গর্ভপাত শব্দটি শুনিলেই যাঁহারা অস্বস্তি বোধ করেন বা হাঁ হাঁ করিয়া উঠেন, তাঁহাদের আগে বুঝা প্রয়োজন, কোন প্রেক্ষিত বা পরিস্থিতিতে কোনও নারীকে গর্ভপাতের সিদ্ধান্ত লইতে হয়। কেবল শারীরবৃত্তীয় কারণে সন্তানের জন্ম দেওয়া নারীর পক্ষে স্বাভাবিক বলিয়াই নহে, মা হইতে চাহিবার ইচ্ছা বা অনিচ্ছাও যে সমধিক গুরুত্বপূর্ণ, জাতি-ধর্ম-শিক্ষা নির্বিশেষে ভারতীয় সমাজের অনেকাংশই তাহা স্বীকার করে না। প্রস্তাবিত বিলে আলাদা করিয়া বলা হইয়াছে সেই সকল নারীর কথা যাঁহারা ধর্ষণ বা অজাচারের শিকার, বা নাবালিকা, বা প্রতিবন্ধকতাযুক্ত। এমনকি, ডাক্তারি পরীক্ষায় গর্ভস্থ শিশুর জিনগত বা গঠনগত ত্রুটি ধরা পড়িলে গর্ভপাতের ঊর্ধ্বসীমা বলবৎ থাকিবে না, বলা হইয়াছে ইহাও। অর্থাৎ যৌন হিংসা হইতে নারীর শারীরিক-মানসিক স্বাস্থ্য, গর্ভস্থ সন্তানের স্বাস্থ্য— এই সমস্তই গর্ভপাতের পশ্চাৎপট রূপে বিবেচনা করিতে হইবে।

তিন বৎসর আগে সুপ্রিম কোর্ট বাইশ বৎসর বয়সি এক নারীকে গর্ভাবস্থার চব্বিশ সপ্তাহ অতিক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও গর্ভপাতের অনুমতি দিয়াছিল, কারণ গর্ভস্থ শিশুটির জন্মানোর ঝুঁকি ছিল খুলিবিহীন অবস্থায়। সাম্প্রতিক কালে গর্ভস্থ ভ্রূণের অস্বাভাবিকতা বা যৌন হিংসার ন্যায় কারণ দর্শাইয়া ভারতের বহু বিচারালয়ে গর্ভপাতের সময়সীমা বাড়াইবার জন্য বহু আবেদন জমা পড়িয়াছে। সুতরাং গর্ভপাতকে শুধু ব্যক্তিগত, পারিবারিক বা সামাজিক লজ্জার দিক দিয়া দেখিলে চলিবে না। ইহার সহিত নারীর নারী হিসাবে, মা হিসাবে এবং সর্বোপরি মানুষ হিসাবে সম্মান ও সুবিচার পাইবার অধিকারটি আশ্লিষ্ট। ঘর ও বাহির ঠিক থাকিলে গর্ভধারিণীরা গর্বধারিণীও হইবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Medical Termination of Pregnancy Act Abortion
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE