Advertisement
২১ জানুয়ারি ২০২৫

বহিবারে দাও শকতি

পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত কয়েকটি নির্দিষ্ট বিষয় বাদে অপর কিছু পড়াইতে পারিবে না স্কুল। একগুচ্ছ নির্দেশিকার সার কথাটি হইল, স্কুলের পঠনপাঠনের চাপে পড়ুয়াদের পিঠ কিংবা মন যেন বাঁকিয়া না যায়। শুভ উদ্যোগ।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

অবশেষে খুদে পড়ুয়াদের পৃষ্ঠের দায়িত্ব গ্রহণ করিল কেন্দ্রীয় সরকার। ২০০৬ সালে কেন্দ্রীয় আইনে জানানো হইয়াছিল, পড়ুয়ার ওজনের দশ শতাংশের অধিক হইবে না তাহার ব্যাগের ওজন। কেহ মানেন নাই। নূতন নির্দেশিকায় স্পষ্ট করা হইয়াছে, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়াদের ব্যাগের ওজন দেড় কিলোগ্রামের অধিক হইবে না। থাকিবে না কোনও ‘হোম-ওয়ার্ক’। তৃতীয় হইতে পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম, অষ্টম ও নবম এবং দশম শ্রেণিতে ব্যাগের ওজন যথাক্রমে তিন, চার, সাড়ে চার এবং পাঁচ কিলোগ্রাম হইবে। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত কয়েকটি নির্দিষ্ট বিষয় বাদে অপর কিছু পড়াইতে পারিবে না স্কুল। একগুচ্ছ নির্দেশিকার সার কথাটি হইল, স্কুলের পঠনপাঠনের চাপে পড়ুয়াদের পিঠ কিংবা মন যেন বাঁকিয়া না যায়। শুভ উদ্যোগ। ক্ষীণ হইলেও আশা জাগে, হয়তো শিশুগুলি প্রাত্যহিক বোঝা বহিবার হাত হইতে নিষ্কৃতি পাইবে। হয়তো সচেতন হইবে বিদ্যালয়গুলি, পরিবারের হুঁশ ফিরিবে। অন্তত, কিছু বিকল্প খুঁজিতে বাধ্য হইবেন তাঁহারা। অবশ্য সরকারের দৌড় যদি নির্দেশিকা অবধিই হয়, তবে ২০০৬ সালের পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা অমূলক নহে। বস্তুত, বোঝা লাঘবের আরামটি চিরস্থায়ী করিতে গেলে নিয়মের বেড়াজাল হইতে অধিক প্রয়োজন সঙ্কটের যাথার্থ্য অনুধাবন। এবং তাহাতে স্কুল ও অভিভাবক, দুই তরফেই সমান দায়িত্ব বুঝিয়া লওয়া প্রয়োজন। স্কুল বোঝা কমাইলে বহু অভিভাবক ভাবেন, তাঁহার সন্তান পিছাইয়া পড়িবে। অতএব, তাঁহারাই ব্যাগ ভারী করিবার দায়িত্ব লন।

প্রথমে হিসাব করিতে হয়, ব্যাগে উপস্থিত কোন বস্তুটির ওজন সর্বাধিক। নিঃসন্দেহে পুস্তকের। ইদানীং, পড়ুয়াদের পাঠ্যক্রমের প্রতি আকৃষ্ট করিতে রঙিন পুস্তকের রমরমা বাড়িতেছে। অতএব, পৃষ্ঠাগুলি ভারী হইতেছে, পুস্তকও। ফলস্বরূপ ব্যাগের ওজন অতিরিক্ত হইয়াছে। প্রশ্ন উঠিবে, খুদেদের লেখাপড়ায় আগ্রহী করিবার ভার যদি ঘুরপথে তাহাদের পিঠের উপরেই বর্তায়, তবে তাহা কি প্রকৃত উৎসাহের জন্ম দিবার ক্ষমতা রাখে? রঙিন পুস্তক বর্জনীয় কি না, সেই তর্ক আপাতত বকেয়া থাকুক। তবে এই রূপ পুস্তক পড়ুয়াদের নিকট পৌঁছাইবার বিকল্প ব্যবস্থা ভাবিতে হইবে। যাহাদের নিমিত্ত আধুনিক ব্যবস্থা, ক্লেশটি তাহাদের উপরেই ন্যস্ত করার পন্থাটি অদূরদর্শিতার প্রমাণ। উদাহরণস্বরূপ বলা যাইতে পারে, অঙ্কনশিক্ষার সকল সরঞ্জাম প্রতিটি ক্লাসের দিন দরকার হয় না। সুতরাং, তাহা বহন করা অর্থহীন। কী করিলে সেই বন্দোবস্ত সুচারু হইবে, তাহা মাথা ঘামাইয়া নির্ধারণ করিতে হইবে স্কুল কর্তৃপক্ষকে। ‘কখন কী প্রয়োজন হয়’— অভিভাবকদের এই রূপ আতঙ্কের কারণেও বহু পড়ুয়া প্রতি দিন প্রয়োজনের অতিরিক্ত পুস্তক বহন করিয়া থাকে। অতএব, যেন তেন প্রকারেণ সন্তানকে পড়াইবার চেষ্টা না করিয়া যুক্তির দ্বারা পরিচালিত হইবার প্রয়োজন আছে অভিভাবকদেরও। অতিরিক্ত সামগ্রী আনা চলিবে না, জানাইয়াছে সরকার। কোনটি আনা চলিবে আর কোনটি চলিবে না, ইহা পড়ুয়াবিশেষে বুঝিয়া লইতে হইবে স্কুল এবং অভিভাবকদের। বাস্তব অবশ্য মুচকি হাসিয়া বলিবে, ব্যাগের বোঝা না বাড়াইয়া বহিবার শকতি গড়িয়া তুলিতে পারিলে কালের নিয়মেই অআকখ মুখস্থ করিয়া লইতে পারিবে কচিকাঁচারা।

অন্য বিষয়গুলি:

Weight School Bag Central Government
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy