Advertisement
E-Paper

কণ্টকাকীর্ণ

সু চি-র নির্বাচনী সাফল্যের সম্ভাব্য প্রধান অস্ত্রটিও বিতর্কে জর্জরিত।

শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২০ ০১:২৪
—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

আরও এক বার বিজয় মুকুট উঠিল আউং সান সু চি-র শিরে। পাঁচ বৎসর পূর্বে মায়ানমারের প্রথম অবাধ নির্বাচনে আশানুরূপ ভাবেই অসামান্য জয় হাসিল করিয়াছিল তাঁহার দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি)। পুনর্নির্বাচন লইয়া সংশয় না থাকিলেও সরকারের বিরুদ্ধে বিবিধ অসন্তোষের আঁচও অলক্ষিত থাকে নাই। তৎসত্ত্বেও এনএলডি-র আসনসংখ্যা বৃদ্ধি পাইয়াছে। প্রমাণিত হইয়াছে, ক্ষমতাসীন সু চি-র জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ে নাই, বরং তাহা ক্রমবর্ধমান। কিন্তু ইহাও বিস্মৃত হইলে চলিবে না যে, ভবিষ্যতের পথটি কুসুমাস্তীর্ণ নহে। গত বারের প্রধান দুই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ হয় নাই। দেশকে সেনার কবল হইতে মুক্ত করিয়া সম্পূর্ণ গণতন্ত্রে উত্তরণ এবং সীমান্ত অঞ্চলে যুদ্ধরত সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীগুলির সহিত শান্তি চুক্তির প্রক্রিয়া সম্পন্ন হইবার লক্ষণ নাই। সু চি-র নির্বাচনী সাফল্যের সম্ভাব্য প্রধান অস্ত্রটিও বিতর্কে জর্জরিত। রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে যে ভাবে আন্তর্জাতিক মহলের মতামত অগ্রাহ্য করা হইয়াছে, উহাই তাঁহাকে দেশের মাটিতে সাফল্য আনিয়া দিয়াছে বলিয়া অনুমান।

এই বারের নির্বাচনে সেনা-সমর্থিত প্রধান বিরোধী দল সু চি-র বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা এবং মুসলমান সম্প্রদায়ের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলিয়াছিল। সাম্প্রদায়িক ও বিদ্বেষমূলক প্রচারের তির শাসককে বিঁধে নাই, কিন্তু রোহিঙ্গাদের দুর্দশা বাড়াইয়া দিয়াছে। রোহিঙ্গাপ্রধান রাখাইন প্রদেশে ভোট বাতিল হইয়াছে। বর্তমানে বাংলাদেশের অস্থায়ী শিবিরে বসবাসকারী আট লক্ষ রোহিঙ্গার তো ভোটাধিকারের প্রশ্নই নাই, উপরন্তু দেশের বাসিন্দাদের ভোটও বাতিল হওয়ায় গণতন্ত্রের যাথার্থ্য লইয়া সংশয়ের ছায়া ঘনীভূত হইয়াছে। বিরোধী দলের পক্ষেও নির্দিষ্ট অভিযোগ না তুলিয়াই নির্বাচনকে ‘অন্যায্য’ দাগাইয়া দিতে অসুবিধা হইল না। নির্বাচনের পূর্বে নানা প্রান্তের সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর রাজনৈতিক দলগুলির সহিত জোট করিতে উদ্যোগী হয় এনএলডি, কেবল রোহিঙ্গা সমস্যার অস্তিত্বটিই অস্বীকার করিয়াছিল। এই একদেশদর্শিতাই পুরা প্রক্রিয়া ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ লইয়া প্রশ্ন জাগায়।

আন্তর্জাতিক মহল অবশ্য সু চি-র দলের জয় লইয়া সন্দেহ প্রকাশ করে নাই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অভিনন্দন বার্তায় ইহাকে ‘গণতন্ত্রের পথে উত্তরণের চলমান প্রক্রিয়া’র ‘সফল’ প্রয়াস বলিয়াছেন। উল্লেখ্য, নয়াদিল্লির সহিত সু চি-র সুসম্পর্কটি পুরাতন হইলেও উক্ত পরিসরে বেজিংয়ের প্রভাব ভারতকে ভাবাইতেছে। অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এবং সীমান্তে সুস্থায়ী শান্তির স্বার্থে বেজিং বিনা এনএলডি সরকারের গত্যন্তরও নাই। বেজিংই পারে, বিনিয়োগ ও পরিকাঠামোর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান দিতে এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলিকে আলোচনার টেবিলে লইয়া আসিতে। বিপ্রতীপে, ‘স্বাধীন ও সক্রিয়’ বিদেশনীতি গঠন করিতে চিনের বৃহৎ ছায়া হইতে অপসৃত হওয়াও মায়ানমারের পক্ষে জরুরি। মানবাধিকার লঙ্ঘনে দুষ্ট সরকার পশ্চিমি দুনিয়ার সহায়তা কতখানি পাইবে, উহা নিশ্চিত নহে, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত কারণে আঞ্চলিক ও প্রতিবেশী শক্তিগুলির আশ্রয় তাহাদের নিকট জরুরি। সেই স্থলে অন্যতম মুখ্য শক্তি ভারত। অপর পক্ষে সু চি-র জয় কূটনৈতিক ভাবে নয়াদিল্লির জন্যেও তাৎপর্যপূর্ণ। পাশের বাড়ির প্রতিবেশী বলিয়া কথা।

Aung San Suu Kyi Rohingya National League for Democracy NLD
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy