Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Union Budget

বিচার হবে জন আদালতে

দেশবাসীর জন্য এর চেয়ে বড় জুমলা আর কী হতে পারত— প্রশ্ন কংগ্রেসের। বাজেট জনমুখী নয়, আসলে নির্বাচনমুখী— দাবি অন্যান্য বিরোধী দলেরও।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:৩০
Share: Save:

মহা সংগ্রামের ক্ষেত্র অনেকটাই প্রস্তুত হয়ে গেল। এক দিনেই সংগ্রামের দিকে বেশ কয়েকটা ধাপ এগিয়ে গেল ভারত। কেন্দ্রীয় বাজেটকে ঘিরে দেশে রাজনৈতিক তৎপরতা আবার তুঙ্গে। এর চেয়ে ভাল বাজেট প্রস্তাব আর হতেই পারত না— বিজেপির বক্তব্য অনেকটা এইরকমই। দেশবাসীর জন্য এর চেয়ে বড় জুমলা আর কী হতে পারত— প্রশ্ন কংগ্রেসের। বাজেট জনমুখী নয়, আসলে নির্বাচনমুখী— দাবি অন্যান্য বিরোধী দলেরও।

বাজেট যে নির্বাচনমুখী, তা নিয়ে সংশয় থাকার কোনও অবকাশই নেই। কয়েকমাসের মধ্যেই সাধারণ নির্বাচনে যাচ্ছে ভারত। এই রকম একটা সময়ে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি সম্বলিত বাজেট পেশ করা উচিত, নাকি কাজ চালানোর মতো ‘ভোট অন অ্যাকাউন্ট’ পেশ করা উচিত, তা নিয়ে বিতর্ক ছিলই। তবে শুক্রবার সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবর্ষের জন্য যে বাজেট প্রস্তাব পীযূষ গয়াল পেশ করলেন, বিতর্ককে পাত্তা দিলে যে সে রকম বাজেট প্রস্তাব তৈরি করা সম্ভব হত না, তা খুব স্পষ্ট।

প্রান্তিক বা ক্ষুদ্র কৃষকের জন্য আর্থিক সহায়তার ঘোষণা রয়েছে এই বাজেটে। আরও বেশ কয়েকটা উপায়ে নানা মাপের চাষিকে সাহায্য করার প্রস্তাব রয়েছে। অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের জন্য প্রতিশ্রুতি রয়েছে। মধ্যবিত্ত চাকুরিজীবী মন কাড়ার চেষ্টাও রয়েছে।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

যে সব প্রকল্প এবং সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করল এই বাজেট, সে সব আদৌ বাস্তবায়িত হবে কি না, বাস্তবায়িত হলেও তাতে শ্রমিক-কৃষক-মধ্যবিত্তের সুরাহা ঠিক কতখানি হবে, তা নিয়ে বিতর্ক থাকবেই। কিন্তু বিজেপি উচ্ছ্বসিত। বাজেটের মাধ্যমে শ্রমিক, কৃষক, মধ্যবিত্তের মন জয়ের চেষ্টা নরেন্দ্র মোদীরা যে করেছেন, তা সকলের কাছেই স্পষ্ট। বিজেপি মনে করছে, দেশের জনসংখ্যার এক বিপুল অংশের মন জয় করার জন্য এই বাজেটই যথেষ্ট।

আরও পড়ুন: রোজ ১৭ টাকা চাষিদের অপমান, তোপ রাহুলের, এই বাজেট শুধুই ‘ট্রেলার’, পাল্টা মোদীর

কংগ্রেস অবশ্য একেবারেই তেমনটা মনে করছে না। কংগ্রেসের বয়ান অন্তত তেমনই। দল কেন এই বাজেটকে স্বাগত জানাচ্ছে না, তার ব্যাখ্যা জনপরিসরে খুব স্পষ্টভাবেই দিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী। ২ হেক্টরের কম জমি যে কৃষকদের, বছরে তাঁদের ৬,০০০ টাকা করে অর্থ সাহায্য দেওয়া হলে দৈনিক সাহায্যের পরিমানটা কেমন হয়, সেই হিসেব তুলে ধরেছেন রাহুল। দিনে ১৭টাকা করে অর্থ সাহায্য দেওয়া আসলে কৃষকদের অপমান করা— রাহুল এমনই মতামত ব্যক্ত করেছেন।

অর্থাৎ ক্ষেত্র প্রস্তুত। কয়েকদিন আগেই খুব বড় নির্বাচনী ঘোষণা করেছিলেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী। কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে দেশের সব দরিদ্র পরিবারের ন্যূনতম আয়ের বন্দোবস্ত করে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন রাহুল। গোটা দেশে তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে। বিজেপির হাতে শেষ তাসটা ছিল এই বাজেটই। সকলের ন্যূনতম আয় সুনিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কংগ্রেস সভাপতি যে ভাবে নিঃশেষে শুষে নিচ্ছিলেন প্রচারের আলো, তা ঠেকানোর জন্য বাজেটই সম্ভবত শেষ অস্ত্র ছিল নরেন্দ্র মোদীর কাছে। সেই অস্ত্রের মরিয়া প্রয়োগই করার চেষ্টা করলেন মোদীরা। কিন্তু রাহুল গাঁধীকে টেক্কা দিতে পারলেন কি? সরকারের বিরুদ্ধে উঠতে থাকা অভিযোগের অজস্র আঙুলকে প্রশমিত করতে পারলেন কি? নাকি রাহুল গাঁধীই ‘কৃষকের অপমান’ তত্ত্ব তুলে ধরে এই বাজেটকে ম্লান করে দিতে সক্ষম হলেন?

উত্তর রয়েছে ১৩০ কোটি ভারতবাসীর কাছে। কোন তত্ত্বে বিশ্বাস রাখছেন তাঁরা, তার উপরেই এখন নির্ভর করছে দেশের ভবিতব্য। জন-আস্থার হিসেবটা স্পষ্টভাবে বুঝে নেওয়ার জন্য অপেক্ষা আর মাত্র কয়েকটা মাসের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE