ফাইল চিত্র।
বেশ অপ্রত্যাশিতই ঠেকছে এই আচরণ। মানানসই নয় একেবারেই। ক্ষমতা কখনও একা আসে না। ক্ষমতা যাঁর বা যাঁদের হাতে আসে, সঙ্গে করে তাঁর বা তাঁদের জন্য অনেকটা দায়িত্বও নিয়ে আসে। ক্ষমতাধরকে দায়িত্বশীল হতেই হয়। কিন্তু ভারতের ক্ষমতাশালী প্রতিবেশী চিনের আচরণে দায়িত্বশীলতার ছাপ বেশ কম। সীমান্তে যে সঙ্কট ঘনীভূত হয়েছে, তার প্রশমনের জন্য দুই দেশকেই দায়িত্বশীলতার সঙ্গে পদক্ষেপ করতে হবে, দুই দেশের কাছ থেকেই আচরণগত সংযম কাম্য। ভারত সেই সংযম দেখাচ্ছে অনেকাংশেই। কিন্তু চিনের তরফে একের পর এক অসংযমী বয়ান পরিস্থিতির প্রশমনের পথে খুব বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
চিন এবং ভারত, উভয়েই বৃহত্ শক্তি আজকের পৃথিবীতে। অর্থনৈতিক মাপকাঠিতে হোক বা সামরিক ক্ষমতার বিচারে, এই দুই এশীয় রাষ্ট্র এখন গোটা বিশ্বের কাছে সমীহের পাত্র। দুই প্রতিবেশী পরমাণু শক্তিধরও বটে। এমন দুই রাষ্ট্রের মধ্যে সঙ্ঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হলে খুব বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা মাথাচাড়া দেয়। এ সত্য ভারত এবং চিনের জানা তো বটেই, এ সত্য গোটা বিশ্বেরই জানা। তা সত্ত্বেও ডোকলামকে ঘিরে সঙ্কটকাল ক্রমশ প্রলম্বিত হচ্ছে যে ভাবে, তাকে দুর্ভাগ্যজনক ছাড়া আর কিছু বলা যায় না।
ত্রিদেশীয় সীমান্তে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার তাগিদে এবং ভূ-কৌশলগত ভাবে অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ এক ভূখণ্ডের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত রাখার স্বার্থে ডোকলামে সেনা পাঠিয়েছে ভারত। নয়াদিল্লি এমনটাই বলছে। বেজিঙের দাবি, চিনা ভূখণ্ডে অবৈধ অনুপ্রবেশ করেছে ভারতীয় বাহিনী। এই ধরনের জটিলতার শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি শুধুমাত্র আলোচনার মাধ্যমেই হওয়া সম্ভব। চিন মুখে বলছে, শান্তিই চায় তারা। কিন্তু আলোচনা শুরুর পথে অঙ্কুশ রাখছে, ভারতকে নিঃশর্ত সমর্পণের শর্ত দিচ্ছে। এতেই থামছে না চিন, প্রায় দু’মাস ধরে চলতে থাকা এই সঙ্কটের মাঝেই প্রায় রোজ ভারতের বিরুদ্ধে অত্যন্ত চড়া বয়ান দিচ্ছে, প্রায় রোজ হুঁশিয়ারি দেওয়া হচ্ছে, কয়েক দিন অন্তরই যুদ্ধের হুঙ্কার শোনানো হচ্ছে। ভারত কিন্তু সচেতন ভাবেই বাগ্যুদ্ধ এড়িয়ে যাচ্ছে। চিনের সংবাদমাধ্যম, বিদেশ মন্ত্রক, প্রতিরক্ষা মন্ত্রক নিয়ম করে যে বিষ উগরে দিচ্ছে, ভারত রোজ তার জবাব দিলে পরিস্থিতি মারাত্মক কোনও মোড়ে পৌঁছে যেত এত দিনে। ভারতের দায়িত্বশীল আচরণ এখনও পর্যন্ত সেই মোড়ে পৌঁছতে দেয়নি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে।
ডোকলাম থেকে ভারত সেনা প্রত্যাহারে রাজি। কিন্তু ভারত সেনা সরালে কি চিনও ফিরিয়ে নেবে নিজেদের বাহিনীকে? এ প্রশ্নের জবাবও দিতে রাজি নয় চিন। কূটনৈতিক স্তরে বার বার বেজিঙের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করছে দিল্লি। বার বার আলোচনার প্রস্তাব রাখছে। ব্রিকসের কর্মসূচিতে যোগ দিতে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা চিন সফরে গেলেন। তার মাঝেই ডোকলাম সঙ্কটের নিরসনকল্পে আলোচনা শুরুর জন্য দৌত্য করে এলেন। চিন তবু একবগ্গা, অনমনীয়। সীমান্ত বিবাদ নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনায় বসার স্বার্থে চিন সেনা প্রত্যাহার করেছে— এমন বার্তা চিনা জাতীয়তাবাদের গরিমাকে চুরমার করবে বলে চিনা কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা। তাই বার বার ভারতকে হুঁশিয়ারি-হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ভারত সেনা সরালে চিনও সরাবে, এটুকু ঘোষণা করতেই যদি চিনের রাষ্ট্রীয় গরিমা আঘাত পেয়ে যায়, তা হলে নিঃশর্তে সেনা সরিয়ে নেওয়ার মতো পদক্ষেপ ভারতীয় জাতীয়তাবাদকে কতটা আঘাত করতে পারে, সে কথাও চিনকে ভেবে দেখতে হবে।
বৃহত্ হলেই যে মহত্ হওয়া যায় না, সে কথা স্বতঃসিদ্ধ। দুর্বোধ্য দায়িত্বজ্ঞানহীনতা দেখিয়ে চিন সে কথা আরও স্পষ্ট ভাবে প্রমাণ করে দিচ্ছে। অনেক মাপকাঠিতেই ভারতের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে চিন। কিন্তু দায়িত্বশীলতার প্রশ্নে ভারতের চেয়ে যোজন পিছিয়ে ভারতের এই প্রতিবেশী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy