সারা পৃথিবীর মতো আমাদের দেশেও অধিকাংশ ব্যবসাই চলে ব্যাঙ্ক থেকে প্রাপ্ত ঋণের ওপর ভিত্তি করে। এই ঋণভিত্তিক অর্থায়নের প্রক্রিয়ায় ব্যবসায়ীদের ঋণের একটা নির্দিষ্ট অংশ নিয়মিত সুদ সমেত পরিশোধ করে চলতে হয়। যদি সেই নিয়মে ছেদ পড়ে, ঋণের ওপর সুদের অঙ্কটা বাড়তে থাকে লাফিয়ে লাফিয়ে— যার পুরোটাই পরবর্তী কালে পরিশোধ করা বাধ্যতামূলক। কোনও ব্যবসায়ী যদি তা না করতে পারেন, তা হলে তাঁকে ডিফল্টার বা ঋণখেলাপি বলে চিহ্নিত করা হয়।
এই দীর্ঘ লকডাউনের জন্য আমাদের দেশে বহু ব্যবসায়ীই— বিশেষ করে, ছোট বা মাঝারি মাপের ব্যবসায়ী (মাইক্রো, স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজ়েস বা এমএসএমই)— এক রকম বাধ্য হয়েই কয়েক মাসের মধ্যে ঋণ খেলাপের পথে হাঁটবেন, এমন একটা আশঙ্কা তীব্র হচ্ছিল। তার কারণ, লকডাউনের দরুন দীর্ঘ দিন ব্যবসা বন্ধ থাকার ফলে তাঁরা নিয়মিত ঋণের কিস্তি ও সুদ পরিশোধ করতে পারছেন না। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে যাঁরা ব্যবসা করছেন, তাঁদের মধ্যে প্রায় ৪৪% মার্চ মাসে সুদ পরিশোধ করতে পারেননি। এই ঋণ জমতে জমতে যখন কয়েক মাসের মধ্যে ঋণের পাহাড়ে পরিণত হবে, তখন এঁদের ঋণখেলাপি হওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না। কেন্দ্রীয় সরকারের কোভিড-১৯ প্যাকেজে এমএসএমই ক্ষেত্রকে যে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, অনুমান, তার পিছনেও আছে এই আশঙ্কা।
এটা ঠিকই যে ব্যবসায়ীদের ঋণখেলাপি হওয়াটা অস্বাভাবিক কোনও ঘটনা নয়। তবে যেটা অস্বাভাবিক, সেটা হচ্ছে বহু ব্যবসায়ীর একই সঙ্গে ঋণখেলাপি হয়ে পড়াটা। এই ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্য রকমের বেশি এই দীর্ঘ লকডাউনের পরবর্তী কালে। সাধারণ সময়ে কিছু ব্যবসায়ী ঋণ খেলাপ করলেও, বাকিরা কিন্তু ঠিক সময়ে নিয়মমাফিক তাঁদের ঋণ পরিশোধ করে চলেন। যার ফলে, ঋণখেলাপিদের জন্য ব্যাঙ্কগুলির যে আর্থিক ক্ষতি হয়, সেটা পূরণ হয়ে যায় অন্য ব্যবসায়ীদের ঋণ পরিশোধ করার ফলে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে, বহু ব্যবসা এক সঙ্গে ঋণখেলাপি হয়ে উঠতে পারে বলে, সেই ক্ষতিপূরণ হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এর ফলে ভারতের গোটা ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা, যা এমনিতেই অনুৎপাদক সম্পদের সমস্যায় জর্জরিত, তার অবস্থা বেশ শোচনীয় হয়ে উঠতে পারে। ব্যাঙ্কগুলোও হয়তো ঋণ দিতে অসম্মত হবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই।