ছবি এএফপি।
নয় মাসে গোটা দুনিয়ায় দশ লক্ষ প্রাণ লইল করোনাভাইরাস। এই ভাইরাস আরও কত দিন বিশ্বকে সন্ত্রস্ত, বিপর্যস্ত করিবে কে বলিতে পারে? প্রতিষেধক কবে আসিবে, আসিলেও তাহা সকলে কবে পাইবে, অনিশ্চিত। যথেষ্ট প্রতিষেধক তৈরি করিতে যত অর্থ প্রয়োজন, রাষ্ট্রগুলি এখনও তাহা জোগাড় করিতে পারে নাই। অর্থনীতি মন্দায় ডুবিলে আদৌ অর্থ জুটিবে কি না, তাহা লইয়াও সংশয়। ফলে, আরও অনেক ক্ষয়ক্ষতির অপেক্ষায় থাকা ভিন্ন উপায় কী? আপাতত হাতে আছে একটিই অস্ত্র: সংক্রমণ এড়াইতে নাগরিকের আচরণ নিয়ন্ত্রণ। অনন্যোপায় রাষ্ট্রগুলিও সে দিকেই জোর দিতেছে। ব্রিটেন সম্প্রতি করোনা-সম্পর্কিত আচরণবিধি আরও কঠোর করিয়াছে। ঘরের বাহিরে ছয় জনের অধিক মানুষ একত্র হইলে, ঘরের ভিতরে দুই জনের অধিক ব্যক্তি একত্র হইলে (যদি না তাঁহারা একই বাড়িতে বাস করেন) দশ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত জরিমানা হইতে পারে। কাহারও বাড়িতে রাত্রিযাপন করিলে চার হাজার পাউন্ড, গৃহান্তরিন থাকিবার নির্দেশ অমান্য করিয়া দফতরে হাজির হইলে ছয় হাজার পাউন্ড খেসারত দিতে হইতে পারে।
অর্থাৎ, বরিস জনসন স্পষ্ট করিলেন, ব্রিটেনে করোনা সতর্কতা শিথিল হইবে না। বরং নিয়ন্ত্রণের পরিসর বাড়িবে, বিধি ভাঙিবার শাস্তি আরও কঠোর হইবে। এই সিদ্ধান্ত অকারণ নহে। ব্রিটেনে, এবং সামগ্রিক ভাবে ইউরোপ মহাদেশে কোভিড সংক্রমণ বাড়িতেছে। উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলিতে কোভিড-বৃদ্ধির হার সর্বাপেক্ষা উদ্বেগজনক। দক্ষিণ এশিয়াতে মোটের উপর কোভিড বাড়িতেছে, এবং সর্বাধিক সংক্রমণ ভারতে। তবে ভারত সরকারের সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলিতেছে, কোভিড-আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা কমিয়াছে, মৃত্যুহারও। দেশবাসী এমন ‘সুসংবাদ’ পাইতে উদ্গ্রীব। ছয় মাস কাটিয়াছে মৃত্যুভয়ে, কর্মহীনতায়, অর্ধাহারে। এখনও কি অতিমারি প্রশমিত হইবার সময় হয় নাই?
এইখানেই সতর্কতা প্রয়োজন। ভারতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ব্যাপ্তি, এবং কোভিড-আক্রান্ত ব্যক্তির যথাযথ সংখ্যা যে সরকারি পরিসংখ্যানে সম্পূর্ণ ধরা পড়ে নাই, তাহার প্রমাণ মিলিয়াছে। নানা রাজ্যের জনগোষ্ঠীতে নমুনা সমীক্ষা হইতে প্রাপ্ত সংক্রমণের হার সরকারি পরিসংখ্যানকে অতিক্রম করিয়াছে। তদুপরি, ভারতে মাত্র একুশ শতাংশ মৃত্যুর কারণ সর্বভারতীয় স্তরে নথিভুক্ত হয়। অতএব প্রকৃত কোভিড-মৃত্যুহার অজানা। ধরিতে হইবে, সংক্রমণ ও মৃত্যুর সরকারি পরিসংখ্যান হিমশৈলের চূড়ামাত্র। তাহা দিয়াই নীতি নির্ধারণ হয়, এমনও নহে। মণ্ডপ বাঁধিয়া সর্বজনীন দুর্গাপূজার অনুমতি দিয়াছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার— ‘করোনাকে লকডাউন করিয়া’ পূজা আয়োজনের বজ্রনির্ঘোষ শোনা গিয়াছে। রাজ্যবাসী এই অনুমোদনকে যদি নিষেধাজ্ঞা শিথিলের ইঙ্গিত ভাবিয়া বসেন, তাহা হইলে বিপদ। আজও কোভিড-আক্রান্তদের চাপে হাসপাতালগুলি বিপর্যস্ত, স্থান ও কর্মী অকুলান। ফের সংক্রমণের ‘ঢেউ’ আসিতে পারে। ভাইরাসের সহিত এই লড়াই শীঘ্র শেষ হইবে, এমন ভরসাও নাই। সংক্রমণ হইতে সুরক্ষার জন্য শিল্প ও পরিবহণ, শিক্ষা-চিকিৎসা, বিনোদন-পর্যটন, জীবনের সকল ক্ষেত্রে প্রচলিত ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন আনিতে হইবে। যত দিন তাহা না হয়, তত দিন স্বেচ্ছা-সংযমই নাগরিকের একমাত্র অস্ত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy