Advertisement
E-Paper

চিকিৎসার খরচ

চিন ও ভারত, দুটি বৃহৎ অর্থনীতি, এবং উন্নয়নের আস্ফালনকারী দেশই এ বিষয়ে লজ্জাজনক অবস্থানে রহিয়াছে, ব্রাজিলের অবস্থাও তথৈবচ।

শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:২৬

স্বজনের চিকিৎসার খরচ জুগাইতে সর্বস্বান্ত হইলে লোকে আপন ভাগ্যকেই দুষিয়া থাকে। দোষ কিন্তু ভাগ্যের নহে, ভ্রান্ত নীতির। নাগরিক চিকিৎসার জন্য কত খরচ করিবে, কতটা করিবে রাষ্ট্র, তাহা দেশের নীতির উপরে নির্ভর করে। যে সকল দেশে রাষ্ট্র চিকিৎসার খরচ বহনে অনিচ্ছুক বা অপারগ, সেখানে চিকিৎসার খরচ বহু পরিবারে দারিদ্র ডাকিয়া আনে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশ্ব ব্যাংক সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় দেখাইয়াছে, সার্বিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কোন দেশের অবস্থান কোথায়। চিন ও ভারত, দুটি বৃহৎ অর্থনীতি, এবং উন্নয়নের আস্ফালনকারী দেশই এ বিষয়ে লজ্জাজনক অবস্থানে রহিয়াছে, ব্রাজিলের অবস্থাও তথৈবচ। বিপরীতে রহিয়াছে ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা এবং পূর্ব এশিয়ার দেশগুলি, যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিকের (গড়ে সাতাত্তর শতাংশ) চিকিৎসার খরচ বহন করে রাষ্ট্র। চিকিৎসার জন্য দারিদ্রে পতিত পরিবারের অনুপাত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক শতাংশেরও কম। সার্বিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিরিখে সর্বনিম্ন স্থানে রহিয়াছে আফ্রিকার সাহারা মরুভূমির দক্ষিণের অঞ্চল ও দক্ষিণ এশিয়া। এই দুই ভূখণ্ডের অর্ধেক মানুষের স্বাস্থ্যের দায় কেবল পরিবারের, রাষ্ট্র দায় এড়াইতেছে। ভারতে প্রায় সাড়ে চার শতাংশ পরিবার প্রতি বছর চিকিৎসার খরচ মিটাইয়া খাদ্য-বস্ত্র-শিক্ষার খরচ জুগাইতে না পারিয়া দারিদ্র সীমার নীচে নামিয়া যায়। যাহার অর্থ, প্রায় এক কোটি পরিবার, বা পাঁচ কোটি মানুষ দারিদ্রগ্রস্ত হইয়া পড়ে। তাহার প্রভাব পড়িতেছে শিশুমৃত্যুর হার, প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল প্রভৃতির উপর। মানব উন্নয়ন সূচকে ভারত যে পিছাইয়া পড়িয়াছে, তাহার একটি ব্যাখ্যা মিলিবে এখানে।

এই অবস্থার একটি কারণ স্বাস্থ্য-পরিকাঠামোর অভাব। প্রতি হাজার মানুষের জন্য এক জন চিকিৎসকের লক্ষ্যে পৌঁছানো যায় নাই, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ঘাটতিও বিপুল। হাসপাতালের শয্যা অপ্রতুল, ওষুধের দামে নিয়ন্ত্রণ নাই, সহায়ক স্বাস্থ্যকর্মীর অভাবও আশঙ্কাজনক। যথাযথ চিকিৎসা দুর্লভ হইবার জন্য তাহা দুর্মূল্য হইয়াছে। সম্প্রতি দুই শত নূতন মেডিক্যাল কলেজ খুলিয়া ছয় লক্ষ চিকিৎসক তৈরি করিয়া ঘাটতি পূরণের সিদ্ধান্ত করিয়াছে ভারত সরকার। ফল এখনও মিলে নাই। চিকিৎসাকে মানুষের নাগালে আনিবার আর একটি পথ ছিল স্বাস্থ্যবিমা। বিশেষত দরিদ্রের নিকট চিকিৎসা সুলভ করিতে রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনা চালু হইয়াছিল। ২০০৮ সালে চালু পর এই যোজনার অধীনে পরিবারের সংখ্যা বাড়ে নাই, বরং সর্বোচ্চ চার কোটি হইতে নামিয়া এখন দাঁড়াইয়াছে তিন কোটিতে। মাত্র পনেরোটি রাজ্যে তাহা চালু রহিয়াছে। এককথায়, প্রকল্পটি ব্যর্থ হইয়াছে।

এক দিকে রোগ নিবারণে জনস্বাস্থ্য প্রকল্পের রূপায়ণে দুর্বলতা, অপর দিকে চিকিৎসাকে সুলভ করিবার ব্যর্থতা, এই দুই মিলিয়া ভারতের বর্তমান স্বাস্থ্যচিত্র উদ্বেগজনক। আরও আক্ষেপ, জনরোষের সম্মুখে পড়িয়া কখনও রাজ্য, কখনও কেন্দ্র নানা তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত লইতেছে। আজ ‘স্টেন্ট’-এর দাম বাঁধা হইতেছে, কাল হাসপাতালের বিলের উপর নজরদারি কমিটি বসিতেছে, পরশু বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারে সরকারি ভরতুকি ঘোষিত হইতেছে। ইহার কোনওটিই সমাধান নহে। সার্বিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা হইতে ভারত এতই দূরে, যে চটজলদি উপায়ে কাজ হইবে না। চাই সুচিন্তিত, দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার।

Health Expense health protection
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy