Advertisement
E-Paper

পরিবর্তন

এই পার্থক্য রচনা করিয়াছে একটি নবলব্ধ অভ্যাস। গণতান্ত্রিকতার অভ্যাস। এই দলের স্তালিনবাদী মানসিকতায় সেই অভ্যাস কেবল নূতন নহে, বৈপ্লবিক।

শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৮ ১৬:৪১

বৃ‌ন্দা কারাট মানিবেন না, বোধ করি তাঁহার মানিবার উপায় নাই, কিন্তু আপন দলটির দিকে চাহিয়া তিনি স্বচ্ছন্দে প্রকাশ কারাটের সহিত নিভৃতে বসিয়া দ্বৈতকণ্ঠে গাহিতে পারেন: এ তুমি কেমন তুমি? যে সিপিআইএম হায়দরাবাদে পার্টি কংগ্রেস বসাইয়াছিল আর সেই মহাসভা হইতে যে সিপিআইএম নিষ্ক্রান্ত হইল, তাহারা আপাতদৃষ্টিতে একই দল, কিন্তু প্রকৃতপ্রস্তাবে দুইয়ের মধ্যে বিপুল পার্থক্য। এই পার্থক্য রচনা করিয়াছে একটি নবলব্ধ অভ্যাস। গণতান্ত্রিকতার অভ্যাস। এই দলের স্তালিনবাদী মানসিকতায় সেই অভ্যাস কেবল নূতন নহে, বৈপ্লবিক। সাত বছর আগে পশ্চিমবঙ্গে এক পরিবর্তন আসিয়া সিপিআইএমকে ডুবাইয়াছিল। তাহা ছিল বাহিরের পরিবর্তন। সেই অবধি দল ক্রমাগত ডুবিতেছে, ষোলো আনা ডুবিতে সামান্যই অবশিষ্ট আছে। আজ অন্য এক পরিবর্তন আসিয়া দলকে বাঁচিবার সুযোগ দিয়াছে। সেই পরিবর্তন অন্দরের এবং অন্তরের। সীতারাম ইয়েচুরিরা সেই সুযোগ কাজে লাগাইতে পারিবেন কি না, প্রকাশ কারাটরা তাঁহাদের সেই সুযোগ কাজে লাগাইতে দিবেন কি না, বলা কঠিন। কিন্তু সুযোগটি মূল্যবান। কেবল সিপিআইএমের পক্ষে নহে, ভারতীয় গণতন্ত্রের পক্ষেও।

নির্বাচনে, বিশেষত আগামী লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সহিত কোনও ধরনের বোঝাপড়া করিব কি করিব না— এই প্রশ্নে সিপিআইএমের অন্তর্বিরোধ নিছক কারাট-ইয়েচুরি-সম্বাদ নহে, ইহা দলের পুরানো সমস্যা। প্রধানত কেরলের পার্টি স্বরাজ্যের স্বার্থ দেখিবার তাগিদে কংগ্রেসকে শতহস্ত দূরে রাখিতে চাহে। ‘কংগ্রেস ও বিজেপি হইতে সমদূরত্ব’ বজায় রাখিবার প্রকল্পকে প্রকাশ কারাটরা নানাবিধ অসার এবং অপ্রাসঙ্গিক তাত্ত্বিক বোলচালের মোড়কে পুরিয়া জনসমক্ষে পেশ করিয়াছেন বটে, কিন্তু মোড়কটি কালক্রমে স্বচ্ছ, তাহার ভিতর দিয়া কংগ্রেস-অ্যালার্জির প্রকৃত কারণ অতি স্পষ্ট— দলের শীর্ষ নেতৃত্বে কেরলের দাপট, সুতরাং কেরলের স্বার্থই দলের নীতি। বঙ্গীয় দলনেতাদের বড় অংশটি এই মতের বিরোধী, কিন্তু তাঁহারা আপন অবস্থান বরাবরই জোরের সঙ্গে পেশ করিতে পারেন নাই, পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্টের স্বর্ণযুগেও কেরলের হাতে তামাক খাইয়াছেন।

এই বারের অভিজ্ঞতা ভিন্ন। পার্টি কংগ্রেসে পশ্চিমবঙ্গ-সহ বিভিন্ন রাজ্য হইতে ভিন্নমতের চাপ এত প্রবল ছিল যে, কার্যত ইয়েচুরির পথই শেষ অবধি জনমতের চাপে দলের পথ হিসাবে স্বীকৃত হইয়াছে। কংগ্রেসের সহিত আনুষ্ঠানিক জোটে সিপিআইএম যাইবে না, যাইবার প্রশ্নও ছিল না, কিন্তু সঙ্ঘ পরিবারকে রুখিবার জন্য কংগ্রেসের সহিত পরোক্ষ বোঝাপড়ার সম্ভাবনা বাতিল করা হয় নাই। এখানেই দলের কট্টরপন্থীরা পরাজিত। দলের অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র বলিতে কী বুঝায়, তাহার অন্তত একটি দৃষ্টান্ত সিপিআইএম তৈয়ারি করিল। নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি বা সনিয়া ও রাহুল গাঁধীর কংগ্রেস সেই দৃষ্টান্ত হইতে শিখিতে পারে। শিখিতে পারে, দেশের অন্য রাজনৈতিক দলগুলিও। তাহাদের অভ্যন্তরীণ কাঠামো সচরাচর ভয়ানক রকমের এককেন্দ্রিক— এক নায়ক বা একা নায়িকাই সেখানে প্রথম এবং শেষ কথা বলিয়া থাকেন। গণতন্ত্রে ইহা বেমানান। নরেন্দ্র মোদীকে প্রতিহত করিবার তাড়নায় সিপিআইএম সেই ট্র্যাডিশন অন্তত এই বৈশাখে পরিত্যাগ করিয়াছে। অন্যেরা?

CPM CPM Party Congress
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy