Advertisement
E-Paper

ফেলের নিয়ম

সত্যই অবিচার বটে! ছাত্রছাত্রীরা কতগুলি বিষয়ে ফেল করিলে সত্যই তাঁহারা ‘ফেল’ করিবেন, কোনও ছিদ্র গলিয়া পরিত্রাণের পথ পাইবেন না, তাহা আগেই জানাইয়া রাখা প্রয়োজন বইকি!

শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:৪৩

লেখাপড়া না শিখিলেও যখন দিব্য গাড়ি-ঘোড়ায় সওয়ার হওয়া যায়, তখন লেখাপড়ার আর প্রয়োজন কী! পাট তুলিয়া দিলেই হয়। বস্তুত, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক পার্ট-ওয়ান পরীক্ষার ফল সেই দিকেই ইঙ্গিত করিতেছে। কলা বিভাগে অর্ধেকের বেশি পরীক্ষার্থী পাশ করিতে পারেন নাই। বিজ্ঞান বিভাগেও পাশের হার গত বৎসরের তুলনায় ১৪ শতাংশ কমিয়াছে। দুরবস্থার কারণ? অকৃতকার্য ছাত্রছাত্রী এবং খোদ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দায়ী করিয়াছেন ২০১৬ সালের পরিবর্তিত নিয়মকে। পূর্বের নিয়মে অনার্সের পড়ুয়া জেনারেলের দুটি বিষয়েই অকৃতকার্য হইলেও পরবর্তী অনার্স পরীক্ষায় বসিতে পারিতেন। পরে সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষা দিবার সুযোগও ছিল। কিন্তু নূতন নিয়মে জেনারেলের একটি বিষয়ে অন্তত পাশ করিতেই হইবে। একই ভাবে, জেনারেলের পড়ুয়াদেরও তিনটি বিষয়ের মধ্যে একটিতে নহে, দুইটিতে পাশ করিতেই হইবে। চলতি বৎসরেই সেই নিয়ম প্রয়োগ হওয়ায় পাশের হারে ধস নামিয়াছে। এবং পড়ুয়াদের প্রতি অবিচারের অভিযোগ উঠিয়াছে। কারণ নূতন নিয়ম সম্পর্কে তাঁহাদের নাকি ‘অবহিত’ করা হয় নাই।

সত্যই অবিচার বটে! ছাত্রছাত্রীরা কতগুলি বিষয়ে ফেল করিলে সত্যই তাঁহারা ‘ফেল’ করিবেন, কোনও ছিদ্র গলিয়া পরিত্রাণের পথ পাইবেন না, তাহা আগেই জানাইয়া রাখা প্রয়োজন বইকি! কিন্তু প্রশ্ন, এই নূতন নিয়ম আগে জানিলে কি তাঁহারা পড়ায় আরও মন দিতেন? নিয়মিত ক্লাস করিতেন? যদি উত্তরটি ‘হ্যাঁ’ হয়, তাহা হইলে সেই পড়াশোনা এখন করিলেন না কেন? না কি ফাঁস যতক্ষণ না তীব্র হয়, ততক্ষণ তাঁহারা পড়াশোনাটি বাদ দিয়া অন্য কাজে বেশি মনোনিবেশ করিবেন এবং ফেল করিলে নিয়মের দোহাই তুলিয়া কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অবস্থান, বিক্ষোভ করিয়া বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করিবেন— ইহাই তাঁহাদের মতে স্বাভাবিক? অবাক লাগে, কলেজে প্রবেশের পর নিয়মিত ক্লাস করা, উপযুক্ত প্রস্তুতিসহ পরীক্ষায় বসা এবং পাশ করিয়া ডিগ্রি লওয়া— এই সহজ পথটির মধ্যে এত বাঁকা হিসাব আসে কোথা হইতে! এই পথে হাঁটিতে না চাহিলে কলেজ ছাড়িয়া দিলেই চলে। পড়াশোনা করিতে না চাহিবার দায় তো বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মের নহে, তাহা পড়ুয়াদের দায়।

শিক্ষকরাও কি দায় সম্পূর্ণ এড়াইতে পারেন? অনিয়মিত হাজিরা, শিক্ষা-বহির্ভূত কাজে ব্যস্ত থাকা, রাজনীতি এবং প্রাইভেট টিউশনে অধিক মনোযোগ— ইহাই পশ্চিমবঙ্গের বহু শিক্ষকের স্বভাবে পরিণত। ছাত্রদরদি শিক্ষাব্রতীর সংখ্যা ক্রমহ্রাসমান। সুতরাং ছাত্রদের খামতিগুলি খুঁজিয়া তাহা মেরামতের তাড়নাও নাই, ছাত্র-শিক্ষক যোগ কমিয়া যাইবার যাহা অবধারিত পরিণতি। এই অব্যবস্থা কাটাইতে হইলে শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢালিয়া সাজিতে হয়। সর্বাগ্রে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষক উভয়েরই উপস্থিতির হারে নিয়মিত নজরদারি এবং বিধি ভঙ্গে কড়া শাস্তির প্রয়োজন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করিবার মূল শর্তই শিক্ষা, এই কথাটিও স্মরণ করাইবার প্রয়োজন। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক ফলের প্রেক্ষিতে সেই কথাটিই বলিয়াছেন। বিশ্ববিদ্যালয়েরও উচিত চাপের মুখে নতি স্বীকার না করিয়া কথাটিতে অনড় থাকা।

assessment rules CU Students
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy