Advertisement
E-Paper

এই অনন্ত আকাশতলে আমরা সবাই পড়শিই

কে আমার পড়শি? আমিই বা পড়শি কার? কিসের ভিত্তিতে তৈরি হয় এই পড়শিয়ানা? ইতিহাস ও ভূগোল গুলে দর্শন ও সমাজচর্চার বিস্তর অধ্যায় শেষেও এই উত্তর খুঁজে পাই না আর।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:২৫
হাতে হাত বেঁধে থাকার সময় এখন। অন্যথায় বিলাপ করব অদূর ভবিষ্যতেই। ছবি: সংগৃহীত।

হাতে হাত বেঁধে থাকার সময় এখন। অন্যথায় বিলাপ করব অদূর ভবিষ্যতেই। ছবি: সংগৃহীত।

প্রয়াত হলেন অশ্রুকুমার সিকদার। আমরা, আনন্দবাজার, হে়ডলাইন করলাম, পড়শির খোঁজে নতুন দেশে পাড়ি দিলেন অশ্রুকুমার সিকদার। অশ্রুকুমার মনে করিয়ে গেলেন তাঁরই লেখা, পাড়ায় এখন পড়শি নেই... । আচমকাই যেন এক অমোঘ সত্যের মুখোমুখি দাঁড়ালাম আমরা।

কে আমার পড়শি? আমিই বা পড়শি কার? কিসের ভিত্তিতে তৈরি হয় এই পড়শিয়ানা? ইতিহাস ও ভূগোল গুলে দর্শন ও সমাজচর্চার বিস্তর অধ্যায় শেষেও এই উত্তর খুঁজে পাই না আর। পাড়ার ছেলেপুলেদের মধ্যে অতীব জনপ্রিয় ‘ওমরাও চাচা’, তিনি যে শিখ সেই কথাটাই জানতে পারব ১৯৮৪-র ভয়াবহ শিখনিধন কাণ্ডের সময়, মিলেমিশে থাকা সমাজ আচমকা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে, ওমরাও চাচার বাড়িতে ঢিল-পাটকেল ছোড়া শুরু হয়ে যাবে এ কথা ভাবিনি কখনই, কারণ ওমরাও চাচা আমার পড়শি ছিলেন। পড়শি আফজল চাচাও, বাচ্চাদের দেখলেই লজেন্স দিতেন যিনি, বিরানব্বইয়ের পর তাঁকেই যখন দেখেছি উদ্‌ভ্রান্তের মতো পালাতে। বুঝিনি, বিশ্বাসবোধে চিড় ধরছে কোথাও, পড়শি মিলিয়ে যাচ্ছে ক্রমেই যেন।

আর তার পর, ইদানীং যখন দেশপ্রেমের নামে উগ্র জাতীয়তাবাদের হিংস্রকণ্ঠের গর্জন ছড়িয়ে পড়ে সমাজ জুড়ে, নিতান্ত নিরীহ এক কাশ্মীরি শালওয়ালার মুখ-নাক মেরে ফাটানো হয়, মারমুখী জনতার চিৎকৃত উল্লাসে ভেসে আসে হুঙ্কার, ‘বল ভারতমাতার জয় নইলে আরও মুখ ফাটিয়ে দেব’, তখন এক অমোঘ সত্যের বিসর্জন হয়ে যায়। বহু বছর ধরে এ পাড়ারই মাসি-পিসি-দাদা-বৌদি-দিদি-কাকুদের মাঝে শাল বিক্রি করে আসা ওই কাশ্মীরি যুবক ধীরে ধীরে প্রৌঢ় হয়ে গেলেন শুধুমাত্র এই জেনেই, এ পশ্চিমবঙ্গীয় দেশ এ পাড়া এ মানুষ এরা সব আমারই নিজস্ব, আমারই পড়শি। ওই শালওয়ালারও কি এক মুহূর্তের জন্যও মনে হয়েছিল, পাড়ায় এখন পড়শি নেই?

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

এই নেতির মধ্যে থাকলে আমরা এক দিন মৃতই হয়ে যেতাম। তাহেরপুরের ওই প্রচণ্ড মারখাওয়া কাশ্মীরি শালওয়ালা আমাদের আরও এক বার জীবনের দিকে টেনে আনলেন। বিচার-বুদ্ধিহীন, রক্তলোলুপ, উন্মার্গগামী এক দল মানুষের হাতে মার খাওয়ার পরেও তিনি বলেছেন, এ রাজ্যের মানুষের উপর আস্থা আছে, কিছু লোক এ কাণ্ড করেছেন, এটাই সার্বিক চিত্র নয়।

আরও পড়ুন: ‘দেশভক্ত’দের বেধড়ক মারে রক্তাক্ত, তবু বাংলা ছাড়বেন না কাশ্মীরের জাভেদ

হে কাশ্মীরি শালওয়ালা, তোমার কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। মনুষ্যত্বের যাবতীয় উপাদানগুলো সরিয়ে রেখে পৈশাচিক এক উন্মাদনায় মেতে আমরা যখন তোমার রক্তদর্শন করলাম, তখন যে অন্যায় করলাম তা হয়তো বা ক্ষমার অযোগ্যই। কিন্তু তুমিই শেখালে, শত অন্যায়ের পরেও, এই অনন্ত আকাশতলে আমরা সবাই পড়শিই।

হাতে হাত বেঁধে থাকার সময় এখন। অন্যথায় বিলাপ করব অদূর ভবিষ্যতেই। দূর ভবিষ্যতের কোনও এক মৃত নগরী আঙুল তুলে বললেও বলতে পারে, তোমাদের পাড়ায় পড়শি ছিল, নাকি সবটাই লোনলি ক্রাউড?

Newsletter Anjan Bandyopadhyay অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় Hindu Extremism Violence
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy