Advertisement
E-Paper

অবন্ধু-বৎসল

নয় বৎসর পর যখন দুটি দেশ মুখোমুখি হয়, তখন আরও একটু হৃদ্যতা থাকাই প্রত্যাশিত। কিন্তু কূটনীতি বস্তুটি প্রত্যাশার শৃঙ্খলের ধার ধারে না। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এর্দোগান ভারত সফরের ঠিক আগেই কূটনীতির স্বরটি তাই উচ্চগ্রামে বাঁধিয়া দিলেন।

শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৭ ০০:৫০
Share
Save

নয় বৎসর পর যখন দুটি দেশ মুখোমুখি হয়, তখন আরও একটু হৃদ্যতা থাকাই প্রত্যাশিত। কিন্তু কূটনীতি বস্তুটি প্রত্যাশার শৃঙ্খলের ধার ধারে না। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এর্দোগান ভারত সফরের ঠিক আগেই কূটনীতির স্বরটি তাই উচ্চগ্রামে বাঁধিয়া দিলেন। কাশ্মীর লইয়া বিতর্কিত মন্তব্য করিয়া ভারতীয় মহলকে আগে উত্তমরূপে চটাইলেন, তাহার পর ভারতে পদার্পণ করিলেন। ভারতও পিছাইয়া থাকিবার পাত্র নয়। অতিথি প্রেসিডেন্টের বিতর্কিত মন্তব্যের সোজাসাপটা প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে বিতর্ক কয়েক দাগ বাড়াইয়া দিয়া তবে দিল্লি এর্দোগানকে স্বাগত অভ্যর্থনা জানাইতে গেল। আরও একটি পদক্ষেপে তুরস্কের উষ্মার সম্ভাবনা উসকাইয়া রাখিল। দিল্লির বিদেশ দফতরের আকস্মিক সিদ্ধান্তে সাইপ্রাসের প্রেসিডেন্ট আমন্ত্রিত হইলেন, যে সাইপ্রাসের সহিত তুরস্কের বহু দিন কোনও কূটনৈতিক সম্পর্ক নাই। সুতরাং নয় বৎসর পর রুমির দেশ এবং গালিবের দেশ যখন বৈঠকে বসিল, প্রকাশ্য পরিবেশ সৌহার্দ্যময় হইলেও ভিতরে উষ্ণ প্রবাহ গোটা সময় জুড়িয়া বহিতেছিল। রুমি ও গালিবের নামোদ্ধৃতি অকারণ অলঙ্কার নয়। সত্যই তুরস্কের সহিত ভারতের সম্পর্ক বহু যুগের। উষ্ণপ্রবাহের মধ্যে সেই যোগাযোগসূত্র নূতন করিয়া বাঁধিবার সাম্প্রতিক চেষ্টায় তুরস্কের তুলনায় ভারতের আগ্রহ ও কৃতিত্ব দুই-ই অনেক বেশি: এর্দোগান সফরের নিরপেক্ষ বিচার বলিতেছে।

কাশ্মীর লইয়া বহুপাক্ষিক আলোচনায় ভারত যে রাজি নয়, দ্বিপাক্ষিক সমাধানই তাহার অভীষ্ট, ভারতের এই অবস্থান অনেক কালের পুরনো। এত দিনে ভারতীয় অবস্থান এক প্রকার গ্রাহ্য হইয়া গিয়াছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও পূর্বেকার বহুপাক্ষিক সমাধানের গোঁয়ার প্রচেষ্টায় ঢিলা দিয়াছে। এখন আবার নূতন করিয়া মধ্যস্থতার প্রসঙ্গ ওঠানো কোনও কূটনৈতিক সমাধান-ইচ্ছার প্রকাশ নয়, কেবল ভারতকে চটাইবার ইচ্ছার প্রকাশ। বিশেষত যখন গত বৎসর পাকিস্তান সফরে প্রেসিডেন্ট এর্দোগান মুক্তকণ্ঠে কাশ্মীরে পাক অবস্থানের প্রতি পূর্ণ সমর্থনের কথা জানাইয়া আসিয়াছেন। ভারত প্রতিযুক্তি দিতে পারে, যেখানে প্রত্যক্ষগ্রাহ্য তথ্য অনুযায়ী, কেবল পাকিস্তানের দিক হইতে সীমান্ত-রেখা অতিক্রমী হিংসার উত্তরেই ভারত অস্ত্র-প্রয়োগ ঘটায়, যেখানে সমস্যা নিশ্চিত ভাবেই ‘দ্বিপাক্ষিক’, অন্য কোনও দেশ ‘বহুপাক্ষিকতা’র কথা বলিবে কেন। আর যদি পাকিস্তানের উসকানিকে সেই দেশ আদৌ না দেখিতেই মনস্থ করে, তবে তো বলিতে হয়, তাহার নিরপেক্ষ দৃষ্টির অভাব রহিয়াছে— তাহাকে ভারত মানিতে যাইবেই বা কেন!

বাস্তবিক, এর্দোগানের তুরস্ক যে ঠিক ‘নিরপেক্ষ’ নয়, বরং ইসলামি বিশ্বের ঐক্যসাধন-ব্রতের অন্যতম প্রাগ্রসর ব্রতী, তাহা তুর্কি প্রেসিডেন্ট নিজেই মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করিবেন। সম্ভবত সেই কারণেই ভারত-তুরস্কের বৈঠকে সন্ত্রাস দমনের যৌথ আগ্রহ আলোচনার সময় নকশাল সংকট ইত্যাদি ভারতের অভ্যন্তরীণ সমস্যাই অধিক প্রাধান্য পাইল, পাক সীমান্তবর্তী সন্ত্রাস তেমন গুরুত্ব পাইল না। ভারতের নিরাপত্তা পরিষদে যোগ দিবার প্রসঙ্গে এর্দোগান সোৎসাহ সমর্থন জোগাইলেন, কিন্তু পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্তির কথাও এক নিঃশ্বাসে মনে করাইয়া দিতে ভুলিলেন না। এমতাবস্থায় ভারত হয়তো কেবল মনে রাখিল, এত পুঞ্জীভূত পাক-প্রীতি সত্ত্বেও ভারতে আদৌ কেন পা রাখিতে বাধ্য হইয়াছেন এর্দোগান। হইয়াছেন, কেননা তুরস্কের জাতীয় অগ্রগতির মাত্রাটি তাঁহার নিজের কর্তৃত্বের সাফল্য হিসাবে উঁচুতে চড়ানো দরকার, আর ভারতীয় লগ্নি ও ব্যবসায়িক দক্ষতাকে তুরস্কের সেই জাতীয় অগ্রগতির জন্য দরকার। ভারতের তুরুপের তাস ভারত নিজেই। এই আত্মপ্রত্যয়ই দিল্লির কূটনীতির দিশাটি ঠিক করিবার জন্য আপাতত যথেষ্ট।

Diplomacy Bilateral relationship

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy