Advertisement
E-Paper

অযান্ত্রিক

তাহার পর আছে গাড়ি বিক্রির পরিমাণ কমায় অর্থনীতির সার্বিক ভোগব্যয় হ্রাস, কর্মীদের চাকুরি যাওয়ায় তাঁহাদের সামগ্রিক ভোগব্যয়ে বড় ধরনের ধাক্কা। কোন ক্ষতির আয়তন কতখানি, সেই তর্ক গৌণ; মূল কথা হইল, গাড়ি শিল্পে মন্দা ভারতীয় অর্থনীতির পক্ষে সুসংবাদ নহে।

শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৯ ০০:০১
একই সঙ্গে পাঁচ টাকার বিস্কুট আর পাঁচ লক্ষ টাকার গাড়ির বিক্রি কমিয়া গেলে বুঝিতে হয়, সমস্যার শিকড় অর্থনীতির স্বাস্থ্যভঙ্গে।

একই সঙ্গে পাঁচ টাকার বিস্কুট আর পাঁচ লক্ষ টাকার গাড়ির বিক্রি কমিয়া গেলে বুঝিতে হয়, সমস্যার শিকড় অর্থনীতির স্বাস্থ্যভঙ্গে।

ভারতের বাজারে একটি নামজাদা কোম্পানির কর্তা বলিয়াছেন, মানুষ এখন পাঁচ টাকা দামের বিস্কুটের প্যাকেট কিনিতেও ইতস্তত করিতেছে। অতএব, পাঁচ লক্ষাধিক টাকা দামের গাড়ির বাজারে যাহা চলিতেছে, তাহা কেন, বুঝিতে সমস্যা হয় না। গত জুলাইয়ে ভারতে সব বর্গ মিলাইয়া প্রায় সাড়ে বাইশ লক্ষ গাড়ি বিক্রয় হইয়াছিল। এই জুলাইয়ে সংখ্যাটি কমিয়া দাঁড়াইয়াছে সওয়া আঠারো লক্ষ। প্রায় কুড়ি শতাংশ পতন। গত উনিশ বৎসরে কখনও এত তীব্র গতিতে গাড়ির বাজারে পতন ঘটে নাই। ফল, মূর্ছা। সর্বাধিক ধাক্কা লাগিয়াছে যাত্রিবাহী গাড়ির বিক্রিতে— বিক্রয় কমিয়াছে ৩১ শতাংশ। পরিসংখ্যানের তালিকাবৃদ্ধি নিরর্থক। এমন বেদম ধাক্কা লাগিল কেন, সেই কারণ সন্ধান করিবার পূর্বে তাহার ফলাফলের হিসাব কষা ভাল। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েক লক্ষ লোক চাকুরি হারাইয়াছেন। বিক্রয় নাই, উৎপাদন নাই— ফলে, আরও লোকের চাকুরি যাওয়া এক রকম নিশ্চিত। কেবল প্রত্যক্ষ উৎপাদনেই নহে, গাড়ির অনুসারী শিল্পে কর্মরত, এবং বিপণন-বিক্রয়ের সহিত জড়িত কর্মীরাও বিপন্ন বোধ করিতেছেন। বহু চাকুরি ইতিমধ্যেই গিয়াছে। তাহার পর আছে গাড়ি বিক্রির পরিমাণ কমায় অর্থনীতির সার্বিক ভোগব্যয় হ্রাস, কর্মীদের চাকুরি যাওয়ায় তাঁহাদের সামগ্রিক ভোগব্যয়ে বড় ধরনের ধাক্কা। কোন ক্ষতির আয়তন কতখানি, সেই তর্ক গৌণ; মূল কথা হইল, গাড়ি শিল্পে মন্দা ভারতীয় অর্থনীতির পক্ষে সুসংবাদ নহে।

অতঃপর প্রশ্ন, এই ধাক্কা কেন? একই সঙ্গে পাঁচ টাকার বিস্কুট আর পাঁচ লক্ষ টাকার গাড়ির বিক্রি কমিয়া গেলে বুঝিতে হয়, সমস্যার শিকড় অর্থনীতির স্বাস্থ্যভঙ্গে। মানুষের হাতে টাকা নাই। যাঁহাদের হাতে আছে, তাঁহারাও সংশয়ী— এখন খরচ না করিয়া অদূর ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তার জন্য টাকা রাখিবেন কি না, সেই দোটানায় ভুগিতেছেন। ইদানীং ভক্তদের পক্ষেও অর্থনীতির স্বাস্থ্যভঙ্গের কথাটি জোর গলায় অস্বীকার করা দুষ্কর হইয়াছে। তাঁহারাও মানিতেছেন, সমস্যা আছে বটে। সেই সমস্যার মূলে দুইটি মহাসিদ্ধান্ত— এক, নোট বাতিল; দুই, জিএসটি। সমস্যা আরও জটিল হইয়াছে সরকারি নীতির অনিশ্চয়তার কারণে। ভারত স্টেজ চার হইতে সরাসরি ছয়ে চলিয়া যাওয়ার সিদ্ধান্ত গাড়ির বাজারকে অনিশ্চিত করিয়াছিল। ২০১৬-১৭ হইতেই গাড়ি বিক্রির গতি হ্রাস সেই অনিশ্চয়তার ফল। গাড়ি নির্মাতারাও বাজারের চলন বুঝিতে ভুল করিয়াছিলেন। তাঁহাদের বিশ্বাস ছিল, উৎসবের মরসুম আসিলেই চাহিদাও ফিরিয়া আসিবে। উৎসব বিক্রির মরা গাঙে বান আনিতে পারে নাই। সব সংস্থার গুদামেই বিক্রি না হওয়া গাড়ির পাহাড় জমিয়াছে।

ভারতের পক্ষে আরও একটি দুঃসংবাদ— গাড়ির বাজারের এই মন্দা নিতান্তই অভ্যন্তরীণ কারণে ঘটিয়াছে, ফলে আন্তর্জাতিক বাজার চাঙ্গা হইলেও এই সমস্যা সম্পূর্ণ উবিয়া যাইবে না। তাহার একটি মোক্ষম উদাহরণ ব্যাঙ্ক নহে, এমন আর্থিক সংস্থাগুলির (নন-ব্যাঙ্কিং ফাইনান্সিয়াল কর্পোরেশন বা এনবিএফসি) স্বাস্থ্যভঙ্গের সহিত গাড়ির বাজারের মন্দা অঙ্গাঙ্গি। ভারতে গ্রামীণ বাজারে গাড়ির বিক্রি দ্রুততর হারে বাড়িতেছিল। এই বাজারের সিংহভাগ এনবিএফসি-র উপর নির্ভরশীল।

গত বৎসর হইতে এই ক্ষেত্রটিতে টাকার জোগান শুকাইয়া যাওয়ার ফলে গ্রামীণ চাহিদাও মরিয়াছে। অন্য দিকে, ভারত স্টেজ ছয় চালু করিবার বাধ্যবাধকতায়, বিমার নিয়ম বদলে এবং গাড়ির সুরক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তনের ফলে আগামী বৎসর গাড়ির দাম তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বাড়িবে বলিয়াই আশঙ্কা। যে বাজার এমনিতেই মরিয়া আছে, এই বোঝা চাপিলে তাহার পরিণতি কী হইবে, তাহা

আঁচ করা চলে। সত্যই হয়তো অনেকের বিস্কুট কিনিবার সামর্থ্যটুকুও থাকিবে না।

Parle G Car Industry Demonitisation GST
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy