দুর্নীতিও কমিল না, ডলারের দামও চল্লিশ টাকায় নামিল না। অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা ঢুকিল না, পেট্রলের দাম আকাশ ছুঁইল, বৎসরে এক কোটি নূতন কর্মসংস্থান দূরে থাকুক, যে চাকুরি ছিল, তাহাকে বাঁচাইয়া রাখাই দায় হইল। একবিংশ শতকের চণ্ডীমণ্ডপ, অর্থাৎ গণমাধ্যমের বৈদ্যুতিন পরিসরে নরেন্দ্র মোদীর উদ্দেশে নাগরিকরা একটিই প্রশ্ন করিতেছেন: তবে কি শুধু প্যান নম্বরের সহিত আধার নম্বর জুড়িবার জন্যই ২০১৪ সালে আপনাকে ক্ষমতায় বসাইয়াছিলাম? প্রসঙ্গটি অবশ্য রসিকতার নহে। সব ব্যর্থতাও সমান মাপের নহে। ডলারের দাম যে চল্লিশ টাকায় নামাইয়া আনা যাইবে না, এই কথাটি নেহাত অন্ধ ভক্ত ভিন্ন সকলেই জানিতেন। বিদেশি ব্যাঙ্ক হইতে কালো টাকা ফিরাইয়া সব দেশবাসীর অ্যাকাউন্টে সেই টাকা ভাগ করিয়া দেওয়ার অসম্ভাব্যতাও স্পষ্ট ছিল। কিন্তু, কর্মসংস্থানে ব্যর্থতা অনিবার্য ছিল না। তাহা বর্তমান সরকারের নিজস্ব অর্জন। এতখানিই যে, এই জানুয়ারিতে ভারতে কর্মসংস্থানহীনতার পরিমাণ গত পনেরো মাসে সর্বোচ্চ হইয়াছে। একটি সমীক্ষায় প্রকাশ, দেশের ২৭টি ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান সটান হ্রাস পাইয়াছে। তিন কোটিরও অধিক কর্মসংস্থানহীন ভারতীয় কাজ খুঁজিতেছেন। ঘটনাগুলি যখন ঘটিতেছে, ভারতীয় অর্থনীতি কিন্তু তখন আর্থিক মহামন্দার প্রভাব পার হইয়া আসিয়াছে। জিডিপি-র বৃদ্ধির হার, অন্তত সরকারি হিসাবে, বিশ্বে অন্যতম সেরা। অর্থাৎ, দেশ যদিও বা খানিক আর্থিক সমৃদ্ধির মুখ দেখিয়া থাকে, তাহা মানুষের নিকট পৌঁছাইতেছে না। প্রধানমন্ত্রী প্রভিডেন্ট ফান্ড অ্যাকাউন্টের সংখ্যাবৃদ্ধির গল্প শুনাইয়াছেন। তাহাতেই কি বোঝা যায় না যে কর্মসংস্থান বিষয়ে অন্য কিছু বলিবার মুখ সরকারের আর নাই?
নরেন্দ্র মোদী যখন সদ্য ক্ষমতায় আসিয়াছেন, এক সম্মেলনে অমর্ত্য সেন বলিয়াছিলেন, গোটা দুনিয়ায় ভারতই একমাত্র দেশ, যাহা অদক্ষ শ্রমশক্তির ভরসায় আর্থিক মহাশক্তি হইবার খোয়াব দেখিতেছে। তাহার পর যমুনায় ঢের কালো জল বহিয়া গিয়াছে, ‘স্কিল ইন্ডিয়া’ নামক গালভরা প্রকল্পটি আসিয়াছে এবং সম্পূর্ণ ব্যর্থ হইয়াছে। সরকারি হিসাবই বলিতেছে, যাঁহারা প্রশিক্ষণ লইয়াছেন, তাঁহাদেরও একটি ক্ষুদ্র অংশের চাকুরি জুটিয়াছে। কেন ভারত কর্মসংস্থানমুখী বৃদ্ধির পথে হাঁটিতে ব্যর্থ হইল, তাহার উত্তর বহুবিধ। প্রথমত, বিশ্বায়নোত্তর ভারতে আর্থিক বৃদ্ধির মডেলটি কখনও পণ্য উৎপাদন-নির্ভর ছিল না, জোর ছিল পরিষেবায়। ফলে, উৎপাদন ক্ষেত্রকে কেন্দ্র করিয়া বিপুল কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা ভারতে তৈরিই হয় নাই। সেই দোষ সর্বাংশে নরেন্দ্র মোদীর ঘাড়ে চাপাইলে অন্যায় হইবে। তাঁহার ভুলের তালিকাও অবশ্য দীর্ঘ। নোটবাতিলের ন্যায় অবান্তর একটি প্রকল্প এবং অপরিকল্পিত জিএসটি প্রবর্তন অর্থনীতির কোমর ভাঙিয়া দিয়াছে। দুর্জনে বলিয়া থাকে, নরেন্দ্র মোদীর জমানায় কতিপয় শিল্পপতি বিলক্ষণ লাভবান হইয়াছেন, কিন্তু শিল্পের বিশেষ লাভ হয় নাই। ফলে, কর্মসংস্থানও গতিহীন। ভবিষ্যতে গতিবৃদ্ধির সম্ভাবনাও ক্ষীণ। একটি উদাহরণই যথেষ্ট। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা লইয়া ঢের কথা বলিবার পর এই বাজেটে সেই খাতে যাহা বরাদ্দ হইয়াছে, তাহা চিনের আট ভাগের এক ভাগ। এই বিনিয়োগে যাহা হইবার, ভারত কি তাহার অধিক প্রত্যাশা করিতে পারে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy