Advertisement
E-Paper

বঙ্গজীবনের অঙ্গ

স রকারি দফতরে গ্রুপ ডি-র চাকুরি আর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা— পশ্চিমবঙ্গে এই দুই চাকুরিতে মিল অমোঘ। দুইটিই সরকারি চাকুরি, এবং মোটের উপর এইগুলিই একমাত্র চাকুরি, যাহা পশ্চিমবঙ্গের গড়পড়তা ছেলেমেয়েদের নাগালের মধ্যে আছে।

শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৭ ০০:০০

স রকারি দফতরে গ্রুপ ডি-র চাকুরি আর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা— পশ্চিমবঙ্গে এই দুই চাকুরিতে মিল অমোঘ। দুইটিই সরকারি চাকুরি, এবং মোটের উপর এইগুলিই একমাত্র চাকুরি, যাহা পশ্চিমবঙ্গের গড়পড়তা ছেলেমেয়েদের নাগালের মধ্যে আছে। ফলে, ৬,০০০ গ্রুপ ডি চাকুরির জন্য ২৫ লক্ষ আবেদনপত্র জমা পড়ে। প্রাথমিক শিক্ষকের পরীক্ষাতেও যেমন একটি চাকুরি পিছু দেড় শতেরও অধিক ছেলেমেয়ে আবেদন করিয়াছিলেন। চাকুরি হিসাবে কোনওটিই আহামরি নহে। কিন্তু, তাহার জন্যই এই ব্যাকুলতা বলিতেছে, অন্য বিকল্প নাই। অভাবটি বহুমুখী। গোড়ায় বামফ্রন্ট এবং তাহার পর তৃণমূল কংগ্রেসের নীতিমাহাত্ম্যে পশ্চিমবঙ্গে বড় বিনিয়োগ নাই। নূতন বড় শিল্প নাই। অতএব, অনুসারী শিল্পের বাজারও অতি সীমিত। ফলে বেসরকারি চাকুরির সম্ভাবনাও ক্ষীণ। যে বিপুল সংখ্যক তরুণতরুণী চাকুরির খোঁজে হন্যে হইতেছেন, তাঁহাদের প্রত্যেককে ঠাঁই করিয়া দেওয়ার মতো পরিসর বেসরকারি ক্ষেত্রে নাই। এই অভাবের জন্য রাজনীতিকে দায়ী করিবার কারণ আছে— কিন্তু, ভারতেই এমন রাজ্য আছে, যেখানে দুই যুযুধান রাজনৈতিক পক্ষও শিল্পের প্রশ্নে একমত হইয়া রাজ্যের স্বার্থে লড়িয়া যায়। পশ্চিমবঙ্গের মূল সমস্যা গভীরতর। শিল্পের প্রকৃত গুরুত্ব পশ্চিমবঙ্গ কখনও উপলব্ধিই করে নাই। নেতারা জানেন, শিল্পের গায়ে হাত দিলে জনগণ রাগিবে না। আজ যাঁহারা গ্রুপ ডি-র চাকুরির জন্য উতলা হইতেছেন, পরিস্থিতিটি এক অর্থে তাঁহাদেরই তৈরি করিয়া দেওয়া।

সরকারি চাকুরির প্রতি বাঙালির মোহ ঠিক কোন স্তরের, পাত্রপাত্রীর বিজ্ঞাপন দেখিলে তাহা আঁচ করা যায়। সরকারি চাকুরি পাত্রের মহিমা বাড়াইয়া তোলে বহু গুণ। কারণ, সেই চাকুরি স্থায়ী— তাহার সহিত উৎপাদনশীলতার কোনও যোগ নাই। কাজ না করিলেও চাকুরি যায় না। অলস বাঙালির নিকট এমন চাকুরি আকর্ষক হইবে তো বটেই। যে বিকল্পের কোনও পরিশ্রম নাই, বাঙালি হামেহাল তাহার দিকে। গ্রুপ ডি-র চাকুরিই হউক বা প্রাথমিক শিক্ষকের, মাসপয়লা বাঁধা বেতনের নিশ্চয়তার নিম্ন স্তরের সাম্যাবস্থা বাঙালির জীবনে সাফল্যের তুঙ্গ হিসাবেই বিবেচিত। শিল্প নাই বলিয়াই বাঙালি ক্রমে সরকারি চাকুরির নিশ্চয়তার মায়াডোরে বাঁধা পড়িল, না কি এই নিশ্চয়তার অমোঘ হাতছানিই বাঙালিকে বেসরকারি চাকুরির অধিক বেতন কিন্তু অধিকতর অনিশ্চয়তা হইতে দূরে সরাইয়া রাখিয়াছে বলিয়া বাঙালি শিল্পের দাবিই করিল না?

বেসরকারি চাকুরি যদিও বা চলে, ব্যবসার নাম শুনিলেই বাঙালি জিভ কাটিয়া সরিয়া দাঁড়ায়। অজুহাত দেয়, রক্তে ব্যবসার অভ্যাস নাই, এক প্রজন্মে কি আর হয়! দোষ রক্তের নহে, মজ্জার। যে মজ্জায় অলসতার বাস। ব্যবসা করিতে গেলে খাটিতে হয়, দৌড়াইতে হয়। নিজের ভবিষ্যৎ গড়িয়া তুলিবার ঝুঁকি লইতে হয়। সেই সাহস বাঙালির নাই। যে ব্যবসায় শিক্ষার, মেধার গুরুত্ব প্রশ্নাতীত, ‘বৌদ্ধিক বাঙালি’ সেই ব্যবসাতেও নাই। গ্রুপ ডি-র চাকুরির নিস্তরঙ্গ জীবনই তাহার মোক্ষ। পশ্চিমবঙ্গ যেমন এই বাঙালির চারণভূমি, তেমনই এক অর্থে রাজ্যটি এই বাঙালির নির্মাণও বটে। নিজেরা যেমন, বাঙালি রাজ্যটিকেও তেমন ভাবেই গড়িয়া লইয়াছে। এখন আপশোস করিলে চলিবে?

Bengalese Future
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy