Advertisement
E-Paper

জনমুখী বিদেশনীতি

জনতার উপর জোর দিয়া রাজনৈতিক পয়েন্ট তুলিতে চাহেন বিদেশমন্ত্রী। বিজেপি সরকারের ‘আম’-আবেদন বাড়াইতে চাহেন।

শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৮ ০১:১৮
Share
Save

বিদেশনীতি কাহাকে বলে, কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রক তাহা বোধ হয় গুলাইয়া ফেলিয়াছে। নীতি বলিতে তাহারা জনসংযোগ বুঝিতেছে, তাহার বাহিরে (বা ভিতরে) আর কিছু দেখিতেছে না। এত দিন প্রধানমন্ত্রী মোদীর কাজকর্ম দেখিয়া এমন সন্দেহ হইত। এই বার বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের বক্তব্যে সন্দেহটি পাকা হইল। সুষমার টুইটার-কীর্তন ও আমজনতা-ভজনে গোটা দেশ নিশ্চিত যে, কূটনীতি বস্তুটির মধ্যে বিজেপি সরকার কেবল রাজনীতি দেখে। রাজনৈতিক লক্ষ্যাভিমুখ ছাড়া রাষ্ট্রের বিদেশনীতির যে আর কিছু অর্থ কিংবা গুরুত্ব আছে, তাহা জানে না। তাই, কারণে অকারণে টুইটার-বার্তা ছড়াইতে চার বৎসরের ক্রমাগত ব্যস্ততা (এবং তৎসহ অন্যান্য কাজ সম্পাদন ও নীতি প্রণয়নে যথেষ্ট অনীহা) লইয়া প্রশ্ন করিলে বিদেশমন্ত্রী অত্যন্ত বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ হইয়া পড়েন। টুইটার বিপ্লবের গৌরব বুঝাইতে আপ্রাণ প্রবৃত্ত হন। এবং পূর্বসূরি ইউপিএ সরকার যে সেই টুইটার-গৌরব টের পায় নাই, সেই অভিযোগ তুলিয়া নিজ মহিমায় আপ্লুত হইয়া পড়েন। বাস্তবিক, ভারতের প্রতিযোগিতামূলক রাজনৈতিক ভাষ্যে সুষমা স্বরাজের সারল্যসমৃদ্ধ মন্তব্যটি অবিনশ্বর হইয়া থাকিবে: কংগ্রেসের বিদেশনীতিতে টুইটার ছিল না, তাহাদের বিদেশনীতি কেবল সম্ভ্রান্তদের জন্য!— সুষমা বুঝিতেও পারিলেন না যে বিদেশনীতি সম্পর্কে তাঁহার অসীম অজ্ঞতা কত সহজেই একটি বাক্যের মোড়কে নাগরিক-দরবারে পরিবেশিত হইল। কোনও দেশে কোনও কালে বিদেশনীতি নাগরিক সমাজের উদ্দেশে তৈরি হয় না: সম্ভ্রান্ত জনেদের জন্যও নয়, সাধারণ্যের জন্যও নয়। বিদেশনীতির উদ্দেশ্য ও বিধেয়: রাষ্ট্রীয় স্বার্থরক্ষা। বিদেশনীতির কর্তা ও কর্ম: রাষ্ট্র স্বয়ং।

জনতার উপর জোর দিয়া রাজনৈতিক পয়েন্ট তুলিতে চাহেন বিদেশমন্ত্রী। বিজেপি সরকারের ‘আম’-আবেদন বাড়াইতে চাহেন। তাই টুইটারের পাশাপাশি তাঁহার আত্মপ্রচার: যে কোনও ভারতীয় বিদেশ-বিভূমিতে সঙ্কটে পড়িলে তিনি তাঁহাদের উদ্ধারে সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়াছেন। এই আত্ম-নিবেদন প্রশংসার্হ। কিন্তু কোনও রাষ্ট্রের বিদেশমন্ত্রক যদি কেবলই নিজেদের বিপন্ন নাগরিকদের বিপন্মুক্ত করিতে চাহে, তবে তাহার নাম পাল্টাইয়া মানবাধিকার মন্ত্রক করিলেও চলে। মানবাধিকার রক্ষার গুরুত্ব বিরাট। কিন্তু রাষ্ট্রীয় স্বার্থ ও অধিকারের সহিত ইহার প্রায়শই কোনও সম্পর্ক নাই। পাকিস্তানে ভারতীয় নাগরিক ঝামেলায় পড়িলে তাঁহাকে ছাড়াইয়া আনিলে পাকিস্তানের সহিত ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক এক আঙুলও আগায় না। প্রথম কাজটি করিবার সঙ্গে সঙ্গে দ্বিতীয় কাজটিও কি সুষমার মন্ত্রক, তথা মোদীর সরকার, মন দিয়া করিতে পারিত না?

সুষমা স্বরাজের সহিত এক নিঃশ্বাসে নরেন্দ্র মোদীর নামটি না করিলে নয়। কেননা, প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথগ্রহণের পরমুহূর্ত হইতে মোদী যে ভাবে এই দফতরটিকে আত্মসাৎ করিয়াছেন, নিজে ক্রমাগত বৈদেশিক কার্যক্রমের কেন্দ্রে বিরাজ করিয়া মন্ত্রীকে প্রচ্ছন্ন রাখিয়াছেন, তাহাতে চার বৎসরের বিদেশনীতির সর্ববিধ গোলযোগের দায় তাঁহাকে না দিয়া উপায় নাই। সুষমার আমজনতার মতো, তাঁহার প্রধানমন্ত্রীও বিশ্বাস করেন, জনসংযোগই মূল কথা, আলিঙ্গনই সম্পর্কের শেষ কথা! অথচ, আলিঙ্গন যতই দৃঢ় হউক, তাহা যে অন্যান্য সম্পর্ক হইতে কাহাকেও পিছনে টানিয়া রাখিবার শক্তি ধরে না, এই সার সত্য তিনি জানেন না। সেই বিস্মৃতির অবকাশে প্রায় সকল প্রতিবেশীর সহিত গত চার বৎসরে সম্পর্ক জটিল হইয়াছে, বহিঃশক্তিগুলির সহিত দূরত্ব অটুট থাকিয়াছে। ‘আমজনতা’ ব্র্যান্ডের বিদেশনীতি দেশের মধ্যে দলকে ভোটে জিতাইতে পারে। কিন্তু আন্তর্জাতিক মঞ্চে তাহা রাষ্ট্রকে জিতাইতে পারে না।

External Affairs ministry foreign policy misleading Sushma Swaraj

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}