Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Farm Bill 2020

সংস্কার সঙ্কট

এই দুর্ভাগ্যজনক দৃষ্টান্তস্থাপনের দায় কিন্তু কেন্দ্রীয় শাসকদের উপরই বর্তায়। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর প্রতি, গণতান্ত্রিক পদ্ধতির প্রতি তাঁহাদের অশ্রদ্ধা প্রকট।

ছবি পিটিআই।

ছবি পিটিআই।

শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২০ ০১:৫৬
Share: Save:

কোনও একটি প্রশ্নে যদি রাজ্যের শাসক ও বিরোধী, উভয় পক্ষই সহমত হয়, ‘রাজ্যবাসীর স্বার্থরক্ষা’য় কোনও অবস্থান গ্রহণ করে— তাহাকে গণতন্ত্রের পক্ষে সুসংবাদ বলাই সঙ্গত। পঞ্জাবে কৃষি আইনকে কেন্দ্র করিয়া তেমন ঘটনাই ঘটিল। বিজেপি ব্যতিরেকে বাকি দলগুলি— ক্ষমতাসীন কংগ্রেস, বিরোধী আম আদমি পার্টি ও শিরোমণি অকালি দল— সহমত হইয়া সদ্য পাশ হওয়া কেন্দ্রীয় কৃষি আইনে সংশোধনী আনিল। প্রসঙ্গত, কৃষি বিষয়ে আইন প্রণয়নের প্রাথমিক অধিকার রাজ্যগুলির। কৃষি আইন লইয়া কেন্দ্রীয় সরকার যে রাজনৈতিক ভাবে বিপাকে পড়িয়াছে, তাহার মধ্যেও এই অধিকার-ভেদাভেদের প্রশ্নটি জড়িত। পঞ্জাবে ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র সিংহ যে ভঙ্গিতে কৃষকদের ক্ষোভকে নিজের রাজনৈতিক পুঁজিতে পরিণত করিয়াছেন, তাহাও রাজ্য রাজনীতির কৌশল হিসাবে উল্লেখযোগ্য। বাস্তবিক, পঞ্জাবে কৃষক-লবি কতখানি পরাক্রান্ত, তাহার রাজনৈতিক প্রতাপ কত প্রবল, বুঝিতে অসুবিধা হয় না। এই কারণেই রাজ্যে আইন পাশ করা সম্ভব হয়। এই কারণেই গোটা দেশের মধ্যে কৃষি সংস্কারকে কেন্দ্র করিয়া এমন বিক্ষোভ সংগঠিত হয় পঞ্জাবেই।

তবে রাজনীতি এক জিনিস, দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো আর এক। কেন্দ্রের তৈরি করা আইন যদি রাজ্যগুলি মানিতে অস্বীকার করে, তবে তাহা দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পক্ষে সুসংবাদ কি না— ভাবিবার বিষয়। পঞ্জাবের দৃষ্টান্ত স্মরণ করাইয়া দিল, এই বিল দুইটির মাধ্যমে কৃষি আইনে যে সংস্কারের চেষ্টা হইয়াছে, তাহা অতি জরুরি, অতি প্রয়োজনীয়। বহু কৃষকের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করিয়া মুষ্টিমেয় সম্পন্ন কৃষকের স্বার্থরক্ষার যে ধারাটি ভারতীয় কৃষি ব্যবস্থায় ছিল, এই সংস্কার তাহাকে ভাঙিবে বলিয়া আশা করা অসঙ্গত নহে। বস্তুত, পঞ্জাবের সম্পন্ন কৃষকদের এই বিপুল ক্ষোভ সেই সত্যটিকে স্পষ্ট করিয়া দেয়। আইনের অক্ষরে যাহা বলা হইয়াছে, প্রকৃতই যদি সেই নীতির বাস্তবায়ন হয়, যদি কালান্তক লালফিতা বা পদ্ধতিগত দুর্নীতির ফাঁসে এই সংস্কার পথভ্রষ্ট না হয়, তবে গোটা দেশের কৃষকই তাহাতে লাভবান হইবেন। কিন্তু, এই প্রয়োজনীয় সংস্কারটিও যদি রাজ্যগুলির প্রয়োজন না বুঝিয়া বাধ্যত মানিতে বলা করা হয়, যদি বিরোধ দলগুলির সহিত আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যে উপনীত হইবার চেষ্টাটুকুও না করা হয়, তবে প্রত্যাঘাত স্বাভাবিক। পঞ্জাবে তাহাই ঘটিয়াছে। অন্যত্রও ঘটিবার সম্ভাবনা আছে। প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর নিকট এমন একটি দাবি পেশ করিয়াছে।

এই দুর্ভাগ্যজনক দৃষ্টান্তস্থাপনের দায় কিন্তু কেন্দ্রীয় শাসকদের উপরই বর্তায়। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর প্রতি, গণতান্ত্রিক পদ্ধতির প্রতি তাঁহাদের অশ্রদ্ধা প্রকট। শিক্ষানীতি বা জিএসটি-র ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রেও যেমন, কৃষি সংস্কারের ক্ষেত্রেও তাঁহারা গোটা দেশের উপর নিজেদের মর্জি চাপাইয়া দিতে চাহিয়াছেন। কৃষির ন্যায় একটি অতি-সংবেদনশীল ক্ষেত্রের উপর সংস্কারের মুগুর চালাইয়া দিলে যে প্রতিরোধ হইবেই: তাহা বুঝিতে ব্যর্থ হইয়াছেন। ঘটনা হইল, দেশব্যাপী সকল কৃষকের স্বার্থ এক নহে। পশ্চিমবঙ্গের কৃষকের সহিত পঞ্জাবের কৃষকের পার্থক্য শুধু ভৌগোলিক নহে। বৃহৎ কৃষকের সহিত ক্ষুদ্র বা প্রান্তিক কৃষকের স্বার্থেও মিল নাই। ফলে, কৃষি আইন সংস্কারের ক্ষেত্রে রাজ্যওয়াড়ি তো বটেই, কৃষকের চরিত্রকেন্দ্রিক আলোচনারও প্রয়োজন ছিল। সংস্কারের সিদ্ধান্তটি আলোচনার টেবিলে পেশ করিয়া রাজনৈতিক দলগুলিকে বোঝানো প্রয়োজন ছিল যে কেন এই সংস্কার তাহাদের সমর্থক-জনগোষ্ঠীর পক্ষে ইতিবাচক। কিন্তু, এই পথে হাঁটিতে হইলে গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া প্রয়োজন। কেন্দ্রীয় শাসকদের সেই গুণের পরিচয় এখনও মিলে নাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Farm Bill 2020 Punjab Central Government Farmer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE