Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বিলম্বিত লয়

অতিনিয়ন্ত্রণ ও কেন্দ্রীকরণের পরিবর্তে যে কাজগুলি সরকারের করিবার কথা, সেগুলিতে মন দিলে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্কট কমিত। উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের দুর্নামও কমিত।

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।—ফাইল চিত্র।

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।—ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

কোনও কাজ বিলম্বে করা হইলেও তাহার প্রশংসা প্রাপ্য। সেই যুক্তিতে পশ্চিমবঙ্গের কলেজগুলিতে ফাঁকা-পড়িয়া থাকা শিক্ষক-আসনগুলিতে রাজ্য কলেজ সার্ভিস কমিশনের তরফে শিক্ষকনিয়োগের সাম্প্রতিক ব্যস্ততার প্রশংসা করাই উচিত। রাজ্য সরকার যে অবশেষে এত জরুরি একটি কাজে নামিবার সময় পাইল, তাহা আনন্দদায়ক। প্রায় ২০০০ শিক্ষকের আসন এত দিন খালি পড়িয়া থাকিল কী ভাবে, আনন্দের মাঝে সেই প্রশ্ন তোলাই উচিত নহে। কোনও কার্যে বিলম্বের পিছনে সর্বদাই ‘যুক্তি’ থাকে। এই ক্ষেত্রেও বিলক্ষণ ছিল। প্রথম যুক্তি, কলেজগুলি তাহাদের প্রয়োজনীয় শিক্ষক-সংখ্যা পাঠাইতে দেরি করিয়াছে, এবং দ্বিতীয় যুক্তি, তাহার পর লোকসভা নির্বাচন আসিয়া পড়িয়াছে। কমিশনের চেয়ারম্যান ইহাও স্পষ্ট করিয়া বলিতে পারেন নাই, বিলম্বিত কাজটি শুরু করিবার পর কবে তাহা সম্পূর্ণ হইবার আশা দেখিতেছেন তাঁহারা। কিন্তু এহ বাহ্য। পশ্চিমবঙ্গের মতো অভাগা রাজ্যে যেখানে গুরুতর কাজগুলি সর্বদাই পড়িয়া থাকে, সেখানে কী হয় নাই তাহার হিসাব মিলাইতে বসিলে কোনও কালে শান্তি মিলিবে না। প্রসঙ্গত, রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপরিচালনার প্রতিষ্ঠানগুলিতেও নিয়োগের ব্যবস্থা ঢিলাঢালা। এই যেমন, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের ভাইস-চেয়ারপার্সন পদটি তৈরি হইবার পর চার বৎসর ধরিয়া ফাঁকা পড়িয়া আছে, এবং এই সবে তাহা পূর্ণ করিবার লক্ষ্যে নড়াচড়া পড়িয়াছে। নিকট অতীতে শিক্ষামন্ত্রী অনেক সময়ই মনে করাইয়া দিয়াছেন, শিক্ষকদের সঙ্গে সরকারের দাতা-গ্রহীতার সম্পর্ক। কিন্তু দানের কাজটি যে ভাবে চলে, তাহাতে গ্রহীতা সমাজ বিষয়ে উদ্বেগ না করিয়া উপায় নাই।

আরও একটি প্রশ্ন শিক্ষামন্ত্রীর নিকট থাকিয়া যায়। সম্প্রতি প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, অতঃপর রাজ্যের কলেজগুলিতে অতিথি শিক্ষক নিয়োগ করিতে গেলে সরাসরি সরকারি সম্মতি লাগিবে। ইহা একটি নূতন কথা। আগে অতিথি শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে কলেজই সিদ্ধান্ত লইতে পারিত। অর্থাৎ এই নূতন নিয়মের মাধ্যমে কলেজগুলিকে আরও বেশি পরিমাণ সরকারি কর্তৃত্বের দিকে ঠেলিয়া দেওয়া হইল। যে কোনও পথেই হউক, কলেজের উপর বর্ধিত সরকারি কর্তৃত্ব অতীব আপত্তিকর। সরকার একটি নিয়মাবলি বাঁধিয়া দিতে পারে, আর্থিক হিসাবের রূপরেখা তৈরি করিয়া দিতে পারে, কিন্তু কলেজ কী ভাবে নিজের সমস্যা মিটাইতেছে, তাহার প্রতিটি পদক্ষেপে সরকারি ছড়ি ঘুরাইবার জায়গা থাকা উচিত নহে। ইহাতে শিক্ষার স্বায়ত্তশাসন থাকে না, এবং প্রতিষ্ঠানের নিজের সমস্যা সমাধানের পথ নিজের আয়ত্তে না থাকিলে তাহা কখনও স্বাস্থ্যকর প্রতিষ্ঠান হইতে পারে না। শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারি ভূমিকা বিষয়ে বারংবার রাজ্য প্রশাসনকে সতর্ক করা হইয়াছে। কিন্তু অতিনিয়ন্ত্রণের প্রবণতাটি এখনও এক রূপ। বামফ্রন্ট আমলে ইহাই ছিল পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাক্ষেত্রের সর্বপ্রধান সমস্যা। আবার তৃণমূল কংগ্রেসও গত আট বৎসর যাবৎ একই ভাবে সমস্যাটি জিয়াইয়া রাখিয়াছে। এই অতিনিয়ন্ত্রণ ও কেন্দ্রীকরণের পরিবর্তে যে কাজগুলি সরকারের করিবার কথা, সেগুলিতে মন দিলে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্কট কমিত। উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের দুর্নামও কমিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Education West Bengal Partha Chatterjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE