Advertisement
E-Paper

ছড়ি এবং ঝামা

নেপালের প্রধান কমিউনিস্ট নেতা কে পি ওলি ২০১৬ সাল থেকেই চিনের সহিত তাঁহার ঘনিষ্ঠতার কথা প্রকাশ্য করিয়া দিয়াছেন।

শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:০৬

প্রধানমন্ত্রী মোদী যখন পাকিস্তানের নামে নানা কথা বলিয়া গুজরাত ভোটে নম্বর তুলিতে ব্যস্ত, অন্য একটি প্রতিবেশী দেশ ভারতের মুখে বড় মাপের ঝামা ঘষিয়া দিল। নেপালে জাতীয় নির্বাচনে কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল-ইউনিফায়েড (মার্ক্সিস্ট লেনিনিস্ট) এবং কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (মাওয়িস্ট)-এর সম্মিলিত জয় লাভে দেখিয়া দিল্লির উচিত এখনই তাহার গত কয়েক বৎসরের লালিত পালিত বিদেশনীতিটির পুনর্বিবেচনা। কেননা তাহা শুধু অসার ছিল না, বিপজ্জনক রকমের ভ্রান্ত ছিল! নেপালের কমিউনিস্ট দলগুলি প্রথমাবধি ভারতবিরোধী হইলেও চিনের সৌজন্যে সম্প্রতি কালে সেই বিরোধিতা আগের অপেক্ষা অনেক বেশি তীক্ষ্ণ হইয়াছে। ভোটের ফলাফলে বুঝিতে অসুবিধা নাই, ইহা কেবল কোনও বিশেষ রাজনৈতিক দলের ভারত-বিদ্বেষের বিষয় নয়, নেপালের সাধারণ মানুষ এই ভারত-বিরোধিতায় বিরাট ভাবে শামিল। তাহারা যদি ব্যালট-বাক্সে তাহাদের ভারত-ঘেঁষা প্রার্থীর প্রতি অপছন্দ না জানাইত, তাহা হইলে সে দেশের বাম দলগুলি এ ভাবে পার্লামেন্টের মোট আসনের তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি থলিতে পুরিতে পারিত না। অর্থাৎ নেপালের জনসাধারণই ভারতকে একটি বার্তা দিতেছে। বার্তাটি আর কিছু নহে— ‘দূর হটো’! অবশ্য তৎসঙ্গে আরও একটি কূটনৈতিক বার্তা এই ঘটনায় নিহিত। ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মলদ্বীপ, মায়ানমারের পর এ বার নেপাল— ভারতের প্রত্যক্ষ প্রতিবেশী দেশ হইয়াও সরাসরি চিনের শরণাপন্ন হইবার তালিকায় যু্ক্ত হইল। লক্ষণীয়, হিসাবের মধ্যে পাকিস্তানকে ধরা হয় নাই। চিনের সহিত যে সব রাষ্ট্রের সহিত সংযোগ সোজাসুজি, চিনের উপর যাহাদের নির্ভরতা একেবারে চর্মচক্ষে প্রত্যক্ষযোগ্য, তাহাদের তালিকাটিই না হয় আপাতত বিবেচ্য হউক!

নেপালের প্রধান কমিউনিস্ট নেতা কে পি ওলি ২০১৬ সাল থেকেই চিনের সহিত তাঁহার ঘনিষ্ঠতার কথা প্রকাশ্য করিয়া দিয়াছেন। ২০১৭ সালে তাঁহার নির্বাচনী প্রচারের বিশেষ় জোর থাকিয়াছে চিনা বিনিয়োগ দেশময় ছড়াইয়া দিবার প্রতিশ্রুতিটির উপর। সম্প্রতি, নভেম্বর মাসে, নেপালের কংগ্রেস একটি চিনা জলবিদ্যুৎ প্রজেক্ট-এর প্রস্তাব বাতিল করিয়া দিবার সঙ্গে সঙ্গে ওলি ঘোষণা করেন, তিনি ক্ষমতায় আসিলেই এই প্রজেক্ট আবার চালু হইবে, নেপালি সমাজকে প্রাণের পরশখানি দিতে চিনের যে উন্মুখতা, তাহাকে তিনি কোনওমতে বৃথা যাইতে দিবেন না। গত কয়েক বৎসরে টুকটুক করিয়া নেপালে চিনা বিনিয়োগ এমনিতেই অনেকখানি বাড়িয়াছে। ভারত তাহার পরিসরটি ছাড়িয়া দিলে সেই বিনিয়োগের গতি অবশ্যই দ্রুততর হইবে।

বর্তমান ভারত সরকারের আত্মসমালোচনার অভ্যাসটি খুবই দুর্বল। তবু এই অবকাশে কিসে কিসে ভুল হইল, তাহা কি এক বার দিল্লির পক্ষে ফিরিয়া বিচার করা উচিত নয়? নেপালের বিধ্বংসী ভূমিকম্পের পর পর বিগ ব্রাদারের কর্তব্য যে ঠিক ভাবে পালিত হয় নাই, তাহা কি স্বীকার করা উচিত নয়? কাঠমান্ডুতে সংবিধান রচনার পর্যায়ে মাদেশিদের সঙ্গে সংঘর্ষে যখন কয়েক মাসব্যাপী ভারত-নেপাল সীমান্ত-বরাবর ‘মাদেশি ব্যারিকেড’ ভারত সর্বান্তঃকরণে সমর্থন করিয়াছিল, সহায়তাও করিয়াছিল, তাহা কি সু-কূটনীতি হইয়াছিল? সাধারণ মানুষের সেই সময়ে দুর্গতির সীমা ছিল না, কেননা ভারত রাস্তা বন্ধ করিলে দিনযাপনের সাধারণ উপকরণগুলিও নেপালে মিলিবার রাস্তা নাই। সংবিধান রচনায় ভারতীয় বিদেশমন্ত্রকের অবান্তর অংশগ্রহণের কথাও নিশ্চয় নেপালিরা ভুলেন নাই। কথা কথায় ছড়ি ঘুরাইবার প্রবণতাটি ছাড়িব না, আবার আশা করিব যে ছড়ি-শাসিত মানুষ উল্টাইয়া প্রাণ দিয়া আমাদের ভালবাসিবে, কূটনীতির দুনিয়ায় ইহা সোনার পাথরবাটি নয় কি?

Foreign Policy India Nepal China
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy