E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: ভুলের দায় কার?

যখন এক জন নাগরিকের এপিক নম্বর অন্য এক জনের সঙ্গে মিলে যায়, তখন কী কী সরকারি পদক্ষেপ করা উচিত বা করা হয়? এই অস্পষ্টতা আরও অনেকের ক্ষেত্রেও ভবিষ্যতে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৫:৪৫

অনেক কষ্ট করে কিছু দিন আগে আমি ভোটার কার্ড পেয়েছিলাম। কিন্তু সম্প্রতি জানতে পেরেছি, সেই ভোটার কার্ডে এক বিশেষ ভুল আছে— আমার এপিক নম্বর আর এক জন মহিলার নম্বর একই। এই তথ্য আমি জানতে পারি সেই আধিকারিকের কাছ থেকে, যিনি আমার আসল ঠিকানার বিএলও নন। বরং, যে ভুল ঠিকানায় আমার ভোটার কার্ডটি গিয়েছিল, তিনি সেই ঠিকানার দায়িত্বে ছিলেন। সেই কারণেই এত কাল ধরে আমার ভোটার কার্ড নিয়ে এত বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছিল। প্রথমে কর্তৃপক্ষ আমাকে চিনতে পারেননি, কারণ ওই ঠিকানায় অন্য এক মহিলার নামেই ভোটার ফর্ম পৌঁছে গিয়েছিল। পরে যাচাই করে বোঝা যায়— এপিক নম্বরটি আমার।

এখন আমাকে ওখানকার দফতরে গিয়ে এসআইআর প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে হবে। কিন্তু এখানেই আমার লড়াই শেষ নয়। এসআইআর প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর আবারও আমাকে ‘শিফটিং ফর্ম’ পূরণ করতে হবে, যার ফলে আমার ভোটকেন্দ্র পরিবর্তিত হবে এবং প্রশাসনের নথিতে আমার বর্তমান ঠিকানাটি সঠিক ভাবে অন্তর্ভুক্ত হবে। শুধুমাত্র কম্পিউটারের একটি ভুলের জন্য আমাকে এতটা ভোগান্তি সহ্য করতে হচ্ছে। বলা বাহুল্য, ওই ভুলের কারণে আজ চার বছর ধরে নিজের ভোটার কার্ড ও ভোটাধিকারের জন্য লড়াই করতে হচ্ছে আমাকে।

তবে আজও আমার কাছে সম্পূর্ণ ভাবে স্পষ্ট নয়, যখন এক জন নাগরিকের এপিক নম্বর অন্য এক জনের সঙ্গে মিলে যায়, তখন কী কী সরকারি পদক্ষেপ করা উচিত বা করা হয়? এই অস্পষ্টতা আরও অনেকের ক্ষেত্রেও ভবিষ্যতে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। তাই আশা করি, প্রশাসন এই ধরনের ভুল নিরসনে আরও পরিষ্কার ও সহজ নির্দেশিকা জারি করবে।

অর্পিতা পাত্র, হাওড়া

অনুদান নয়

সম্প্রতি বারাসতের সরকারি হাসপাতালের মর্গে রোগীর মৃতদেহের চোখ চুরি যাওয়ার ঘটনার পর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মৃতের মাকে সরকারি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এর আগেও দেখা গেছে ধর্ষণ, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু, রাজনৈতিক হত্যা এমনকি বিষ-মদ পান করে মৃত্যুর পরেও শাসক দলের নেতা-নেত্রীরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের সরকারি চাকরি বা অর্থ সাহায্য প্রদানের আশ্বাস দিচ্ছেন। কিন্তু যে কারণে পরিবারগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেই সমস্যা নিরসনে রাজ্য সরকারের কোনও বিশেষ উদ্যোগ চোখে পড়েনি।

সরকারি হাসপাতালের মর্গ থেকে রোগীর চোখ চুরি হলে তার সঠিক তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা করতে হবে। শুধুমাত্র ক্ষতিগ্রস্তের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা বা চাকরির প্রতিশ্রুতি দিলেই আসল অপরাধের বিচার হবে না। বরং, এই ধরনের আর্থিক অনুদান বা চাকরির প্রতিশ্রুতি আসল অপরাধীদের আড়াল করার প্রচেষ্টা বলেই মনে হয়। রাজ্যে সরকারি চাকরি প্রাপ্তির মাপকাঠি এগুলো হতে পারে না।

অভিজিৎ ঘোষ, বনভেড়া, পূর্ব মেদিনীপুর

বেহাল পরিষেবা

সোনারপুর ব্লকের অন্তর্গত লাঙলবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন শ্রীরামপুর হাসপাতাল ১৯৫১ সালে গড়ে ওঠে। প্রায় পাঁচ বিঘা জায়গা, বিদ্যুৎ সংযোগ, সরকারি ভবন, স্টাফ কোয়ার্টার-সহ সব সুবিধা এখানে রয়েছে। সত্তরের দশক পর্যন্ত কয়েকটি ইনডোর বেড-ও এখানে ছিল। প্রসবেরও ব্যবস্থা ছিল। হাসপাতালের নিয়মিত চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্য সহায়ক, কম্পাউন্ডার-সহ হাসপাতালের অন্য আধিকারিকরাও কোয়ার্টারে থাকতেন।

অবশ্য এই সবই এখন ইতিহাস। এখনও এখানে যথেষ্ট রোগী চিকিৎসার প্রয়োজনে আসেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এখন এখানে চিকিৎসক ও নার্সের অভাব প্রকট। ফার্মাসিস্টই তাঁর সীমিত জ্ঞান দিয়ে ডাক্তারি করেন। অর্থাৎ, স্বাস্থ্য পরিষেবা এখানে সম্পূর্ণ রূপে অবহেলিত। গ্রাম পঞ্চায়েত, রোগী কল্যাণ সমিতি, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদ, বিধায়ক, সাংসদ— সকলেই বিষয়টি সম্পর্কে অবগত। কিন্তু, এত অসুবিধা সত্ত্বেও পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হয়নি। নির্বাচন আসে, নির্বাচন যায়। অনেক নতুন প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়, অথচ কাজের কাজ কিছুই হয় না। কলকাতা থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে এই অবস্থা। আমরা কি কেবল ভোটার, না কি নাগরিকও? জনস্বার্থে বিষয়টি প্রশাসনকে বিবেচনা করার জন্য আবেদন করছি।

কমল ভট্টাচার্য, কলকাতা-১৪৫

সংস্কার হোক

আমি হাওড়া জেলার অন্তর্গত জয়নগর গ্রামের একজন বাসিন্দা। আমাদের গ্রামে বহু কাল, প্রায় স্বাধীনতার কয়েক বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘জয়নগর দেশবন্ধু পাঠাগার’। আগে এই পাঠাগারে প্রচুর বই থাকত, পাঠকের সংখ্যাও কম ছিল না। কিন্তু এখন মোবাইল ফোনের আকর্ষণে পাঠকের সংখ্যা দিন দিন কমছে। এ দিকে বইগুলিরও ঠিকমতো যত্ন না হওয়ার ফলে অর্ধেকের বেশি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সঠিক পরিচর্যার অভাবে গ্রন্থাগারটিরও অবস্থা বেহাল। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, দ্রুত গ্রন্থাগারটির সংস্কার করা হোক।

অন্বেষা ধাড়া, হাওড়া

নবান্ন

গ্রামবাংলা নবান্নের আগমনে যেন এক নতুন রঙে সেজে ওঠে। নবধানের সুগন্ধ যখন ঘরে-বাইরে ছড়িয়ে পড়ে, তখনই বোঝা যায় বাংলার কৃষিজীবনের সবচেয়ে প্রাণবন্ত ও আনন্দঘন মুহূর্ত এসে গিয়েছে। ধান কাটার মরসুম শেষ হলে কৃষকের মুখে ফুটে ওঠে তৃপ্তির হাসি। সারা বছরের পরিশ্রমের ফল হাতে পেয়ে তাঁরা উৎফুল্ল হয়ে ওঠেন। নতুন ধানের গন্ধ পুরো গ্রামে ছড়িয়ে থাকে। বাড়ির উঠোনে ধান মাড়াই, গোলাভরা নতুন ফসল, খেজুরপাতা দিয়ে সাজানো ঘর— সব মিলিয়ে উৎসবের আবহ তৈরি হয়। গ্রামের ঘরে ঘরে মেয়েরা নতুন চাল দিয়ে পিঠে, পায়েস, চিঁড়ে, মুড়ি প্রভৃতি তৈরি করেন।

শুধু বাড়িতেই নয়, চার দিকেও উৎসবের ছোঁয়া লাগে। গ্রামের পথে দেখা যায় ধানভর্তি ধামা, হাসিমুখে খেত থেকে ফেরা কৃষকের দল। অনেক জায়গায় ঢাকের তালে ‘ধান কাটার গান’ ধ্বনিত হয়, কোথাও আবার বাউল গানের আসর বসে। নবান্ন তাই শুধু খাদ্যের নয়, বাংলার লোকসংস্কৃতিরও প্রাণ। এই উৎসব সমাজজীবনেও এক গভীর বার্তা দেয়। এই উৎসব ধনী-দরিদ্র সকলকে একত্রিত করে। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব সকলের সঙ্গে নতুন অন্ন ভাগ করে নেওয়ার মধ্য দিয়ে সমাজে সম্প্রীতির বাতাবরণ সৃষ্টি হয়। নতুন ফসলের আনন্দে সবাই সমান ভাবে অংশীদার হয়। এই মিলনমেলাই উৎসবের প্রকৃত সৌন্দর্য।

আজকের আধুনিক শহরেও নবান্নের সুর কম নয়। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ও স্কুল-কলেজে নবান্ন উৎসব পালিত হয়। নবান্নের মেলা বসে অনেক জায়গায়, যেখানে দেখা যায় দেশি খাবার, গ্রামীণ হস্তশিল্প আর নানা রকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এই উদ্‌যাপনের মধ্য দিয়ে নতুন প্রজন্ম বাংলার কৃষির ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত হয়ে ওঠে। এই আনন্দযজ্ঞ বাংলার মাটি, মানুষ ও সংস্কৃতির চিরন্তন ঐশ্বর্যকে আরও উজ্জ্বল করে তোলে।

ইন্দ্রজিৎ পাল, কাটোয়া, পূর্ব বর্ধমান

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Election Commission Voter Card EPIC Number

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy