Advertisement
E-Paper

ফ্যাসিবাদী প্রবণতা রোখার দায়িত্বও নরেন্দ্র মোদীরই

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৯ ০০:৩৯
ধর্মের নামে গণপিটুনির বিরুদ্ধে চিঠি দেওয়ায় ৪৯ বিদ্বজ্জনের বিরুদ্ধে দেশোদ্রোহিতার মামলা দায়ের।

ধর্মের নামে গণপিটুনির বিরুদ্ধে চিঠি দেওয়ায় ৪৯ বিদ্বজ্জনের বিরুদ্ধে দেশোদ্রোহিতার মামলা দায়ের।

নাগরিক বা রাজনৈতিক দলের চেয়ে সরকারের দায়িত্ব অনেক বেশি। তাই প্রতিবাদী নাগরিককে রক্ষা করাও সরকার তথা রাষ্ট্রের কর্তব্য। প্রবল বিজয় নির্ঘোষে শামিল না হয়ে যাঁরা এখনও বাঁচিয়ে রাখছেন বিরোধী কণ্ঠস্বরকে, তাঁদের রক্ষা করা সরকারের কর্তব্য।

রক্ষা করা তো দূরের কথা, দেশে ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতার অভিযোগ তুলে যে বিশিষ্ট নাগরিকরা চিঠি লিখেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে, তাঁদের ‘দেশদ্রোহী’ হিসেবে চিহ্নিত করতে উদগ্রীব হয়ে উঠেছে নাগরিকদের একাংশ। ৪৯ বিদ্বজ্জনের বিরুদ্ধে বিহারের এক আদালতে আবেদন জমা পড়েছে। ওই ৪৯ জনকে ‘দেশদ্রোহী’ আখ্যা দিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিক আদালত— এমনই আবদার নিয়ে আদালতের সামনে হাজির হয়েছেন মামলাকারী।

এ কথা ঠিক যে, রাষ্ট্র এখনও কোনও পদক্ষেপ করেনি ৪৯ বিশিষ্ট নাগরিকের বিরুদ্ধে। এ কথা ঠিক যে, রাষ্ট্র কারওকে ‘দেশদ্রোহী’ তকমা দেয়নি এই পর্বে। কিন্তু মামলা যখন হয়েছে, তখন পদক্ষেপ হতেই বা কতক্ষণ— এই মর্মে প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হচ্ছে সাধারণের মধ্যে।

দেশে অসহিষ্ণুতার পরিবেশ বাড়ছে— এমনটা যদি কোনও নাগরিক বা এক দল নাগরিক মনে করেন, তা হলে ওই নাগরিকরা দেশদ্রোহী হয়ে যান না। নাগরিকের মনে আশঙ্কা বা উদ্বেগ তৈরি হলে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে তা ব্যক্ত করার মধ্যে কোনও দ্রোহ নেই। বরং রয়েছে দেশের প্রতি ভালবাসা এবং দায়িত্ববোধ। সেই ভালবাসা এবং দায়িত্ববোধকে সম্মান করতে পারা জরুরি। সেই ভালবাসা এবং দায়িত্ববোধকে না বুঝে যে সব অগণতান্ত্রিক প্রবণতা হইচই শুরু করে দেয়, সেই সব প্রবণতাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারা জরুরি।

ম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

কোনও নাগরিকের কোনও মতামত শাসক দল বা সরকারের পক্ষে অস্বস্তিকর হলেই সেই নাগরিককে দেশবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করার বিপজ্জনক প্রবণতা আমাদের দেশে সম্প্রতি বাড়ছে। এই প্রবণতাই ফ্যাসিবাদের দিকে নিয়ে যায় দেশকে। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র যাতে ফ্যাসিবাদের দিকে যাত্রা শুরু না করে, তা লক্ষ্য রাখার দায়িত্ব দেশের শাসকেরই। অতএব যে কোনও বিরোধী স্বরকে স্তব্ধ করে দিতে চাওয়ার প্রবণতাকে, যে কোনও অস্বস্তিকর কণ্ঠস্বরকে ‘দেশদ্রোহী’ কণ্ঠস্বর হিসেবে দেগে দিতে চাওয়ার প্রবণতাকে নির্মূল করতেই হবে। নির্মূল করার দায়িত্বটা নরেন্দ্র মোদীকেই নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে অভিযোগ জানিয়েছেন বলে এক দল নাগরিককে যদি ‘দেশদ্রোহী’ হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা শুরু হয়, তা হলে ‘গণতন্ত্র’ নামক শব্দটা নীরবে নিভৃতে কাঁদবে।

আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি লেখা ৪৯ বিশিষ্টজনের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা আদালতে

যে আদালতে মামলা হয়েছে, সেই আদালত এই ৪৯ জন বিশিষ্ট নাগরিককে যে ‘দেশদ্রোহী’ তকমা দেবে না, সে বিষয়ে নিশ্চিত থাকাই যায়। কিন্তু অগণতান্ত্রিক একটা প্রবণতাকে বাড়তে দেওয়াও যে উচিত হবে না, তা-ও মাথায় রাখা দরকার। সে দায়িত্বটা দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বকেই নিতে হবে।

Anjan Bandyopadhyay অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় Newsletter BJP Intelectuals Sedition Law Lynching
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy